আশির দশকে সৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের সময় দিনাজপুরের বিভিন্ন পথসভায় অনেকে যার জ্বালাময়ী বক্তব্য শুনেছেন কিন্তু তার আত্বীয়স্বজন-পরিজন সম্পর্কে কেউ জানেন না। অথচ এ শহরে দীর্ঘ ৪০বছর যাবত অনেকে দেখে আসছেন এমনই এক ব্যক্তি ইয়াসীন আলী। গত ১৬ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে শহরের বাসুনিয়াপট্রি থেকে চকবাজারে যাবার রাস্তায় অসহায় অবস্থায় পথে পড়ে থাকতে দেখে ‘দিনাজপুর সোসাইটি ফর প্রিভেনশন অব ক্রুয়েলটি টু এনিমেল’এর সদস্য মুকিদ হায়দার শিপন এবং তার বন্ধুরা তাকে নিয়ে যায় সদর হাসপাতালে।
মুকিদ হায়দার শিপন জানান, তার ব্যাপারে কেউ কোনদিন জানতে চাইনি বা সেও বলেনি। কিন্তু আজ বয়সের ভারে ন্যুয্য। তাকে পরিবারের ব্যাপারে জিঙ্গাসা করা হলে, সে ভাঙ্গা গলায় বলে নাই। সে বিছানাতেই মলত্যাগ করে এবং চলতে পারেন না। আলট্রাসাউন্ড করে দেখা যায় তার প্রস্টেট অনেক বড় এবং কিডনীতে সমস্যা। বর্তমানে দিনাজপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আমরা কয়েক বন্ধু তার দেখাশোনা এবং খোঁজখবর রাখছি। তার অসুস্থ্য মূহুর্তে তার ব্যাপারে কেউ কিছু বলতেও পারছেন না।
জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি প্রবীন রাজনীতিবিদ আবুল কালাম আজাদ জানান, একসময়ে এই ইয়াসীন আলীকে দেখেছি মিছিলে, আমাদের সাথে শ্লোগানে গলা মিলাতে, দেখেছি পথসভায় বক্তৃতা দিতে। আশির দশকে শহরের চৌরঙ্গীর মোড়ে আমাদের পথসভায় বক্তৃতা দিতে দাঁড়াল, জ্বালাময়ী ভাষনে সবাইকে তাক লাগাল, শেষে বলল ‘জিনিষপত্রের দাম বানের পানির মত বাড়েছে--। বক্তব্যে উদাহরণ শুনে সকলে জোড়ে করতালি দিয়েছিল। পথেই জীবিকা পথেই ঘর ইয়াসীনের। ফুটপাথের চায়ের দোকানে বালতি ভরে পানি সরবরাহ, ধুলা ঢাকতে পানি ছিটানো কিংবা নোংড়া পানি ফেলার কাজ করেই জীবন চলতো তার। বয়সের ভারে আজ নূয্য তবু শরীরটাকে জোর করে টেনে চলতো। এর ওর বারান্দা ছিল তার শয্যা। শহরের চকবাজার, বাসুনিয়াপট্রি মালদাহপট্রি এলাকাই ছিল তার বিচরন ক্ষেত্র। জেলা আওয়ামীলীগের অফিসের বারান্দায় তাকে বেশি দেখা যেত। ইয়াসীনের আত্মীয় স্বজন কেউ আছে কিনা আমাদের জানা নেই। কম করে ৪০ বছর যাবত তাকে এই এলাকাতেই কাজ কওে, খেতে দেখেছি। কখনো কারো কাছে হাত পাততে দেখিনি। এখন তার দেখভালের জন্য আত্বীয়-পরিজন হলে ভাল হতো। কেউ জানলে খবর দেন।