করোনা তা-বে এমনিতেই ঘরবন্দি রাজধানীবাসী। থমকে আছে মহানগরী। কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানি সঙ্কটে ঘরবন্দি বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। চলতি মার্চ মাসের শুরু থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ওয়াসার পানির তীব্র সঙ্কট চলছে। আর ওই সঙ্কট নিরসনে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ উদাসীন ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে করোনার মধ্যে পানি সরবরাহ ঠিক রাখা হবে বলে জানানো হয়েছিল। কিন্তু ওই বক্তব্যের সাথে বাস্তবতার অনেক পাথর্ক্য রয়েছে। ভুক্তভোগীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা মহানগরীর মিরপুর, ইব্রাহিমপুর, কাফরুল, পূর্ব শেওড়াপাড়া, শেওড়াপাড়া, মগবাজার, পেয়ারাবাগ, নয়াটোলা, মধুবাগসহ নগরীর শতাধিক স্থানে গত এক সপ্তাহ ধরে পানি মিলছে না। রাতের বেলায় অল্প কিছু পানি ছাড়া হলেও দিনের বেলায় কোন বাড়িতে পানি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে না। পানির অভাবে ওসব এলাকার বাসিন্দাদের দৈনন্দিন কাজ প্রায় বন্ধ। আর ওয়াসার পানি কিনতে গেলে গ্রাহকদের প্রতি গাড়িতে ৫শ’ টাকার বেশি বাড়তি দিতে হচ্ছে।
সূত্র জানায়, গ্রীষ্মের তীব্র গরমের মধ্যেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানিতে ময়লা ও দুর্গন্ধজনিত সঙ্কট চলছে। ফলে ওসব এলাকার গ্রাহকরা বাড়ির পানির বিল পরিশোধ করার পরও ওয়াসার পাম্পস্টেশন থেকে পানি কিনতে বাধ্য হচ্ছে। ওয়াসার বিভিন্ন অফিসে গ্রাহকরা অভিযোগ করেও কোন ফল পাচ্ছে না। উল্টো যারা অভিযোগ করছে তাদের কাছ থেকে পানির দাম বেশি নেয়া হচ্ছে। মিরপুরের ১১ নম্বর সেকশন, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, ঢাকার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকার বাসাবো, মুগদা, মান্ডা, দোলাইপাড়, দনিয়া, গোপীবাগ, মগবাজার এলাকায় পানির সঙ্কট চলছে। একই সঙ্গে রয়েছে দুর্গন্ধের সমস্যা। তাছাড়া রাজধানীর মিরপুরের ১১ নম্বর সেকশনের বি-ব্লক এবং ১২ নম্বর সড়কে পানির তীব্র সঙ্কট রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা পানি সঙ্কট নিয়ে মিছিলও করেছে। এলাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে কোন পানি সরবরাহ নেই। মিরপুরের কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া ও আশপাশের এলাকায়ও পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। সেনপাড়া-পর্বতা এলাকার ওয়াসার পাম্পস্টেশন কয়েকদিন ধরে নষ্ট হয়ে আছে। এ কারণে পানির সমস্যা আরো তীব্র হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, ঢাকা ওয়াসার সায়েদাবাদ, চাঁদনী চক, নারায়ণগঞ্জ পানি শোধনাগার এবং ৮২৩টি গভীর নলকূপের সাহায্যে প্রতিদিন পানির উৎপাদন ২৪৫ কোটি লিটার। আর পানির চাহিদা ২৩৫ কোটি লিটার। ওয়াসার এই তথ্য বাস্তবের সঙ্গে কোন মিল নেই। কারণ ২৪৫ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হলেও সিস্টেম লসের পরেও নগরবাসীর পানির কোনো সঙ্কট থাকার কথা নয়। কিন্তু তারপরও মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় তীব্র পানির সঙ্কট বিরাজ করছে।
এদিকে ওয়াসা সংশ্লিষ্টরা বলছে, পুরাতন সরবরাহ পাইপ থেকে নতুন পাইপে পানি সরবরাহ দেয়ার কাজ চলছে বলে বিভিন্ন এলাকায় পানি সঙ্কট তৈরি হয়েছে। আগামী ২৫ দিন থেকে শুরু করে এক মাসে এই সমস্যা হবে। নতুন পাইপের সংযোগ দিতে কারিগরি সমস্যা হচ্ছে। এ কারণেই সময় বেশি লাগছে। মূলত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতিতে সংযোগ দেয়ার কাজ ধীরগতিতে চলছে। তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বাসা বাড়িতে সংযোগ দেয়ার কাজ ধীরে ধীরে করছে। সময় বেশি লাগাতে পারলে টাকার অঙ্ক বাড়াতে পারবে। সেজন্যই বাসাবাড়িতে নতুন পাইপের সংযোগ কাজ ধীরগতিতে চলছে।
অন্যদিকে ঢাকা মহানগরীতে পানি সঙ্কট নিয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানান, অন্যান্য জরুরি সেবার মতো পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও জরুরি সেবা হিসেবে কাজ করবে। ওয়াসার সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জরুরি সেবার জন্য কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এখানে কোন প্রকার গাফিলতি চলবে না। নগরীর বেশ কিছু এলাকায় পানির সমস্যার কথা ওয়াসার এমডি আমাকে জানিয়েছেন। এমডি বলেছেন, অনেক এলাকায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। ওসব এলাকায় পানি সরবরাহ তৈরি করতে কাজ করা হচ্ছে। তবে ঠিক কবে নাগাদ পানি সমস্যা দূর হবে তা বলা মুশকিল বলে তিনি জানিয়েছেন। পানি সঙ্কট দূর করার জন্য এমডিকে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ হলেও পানি সরবরাহ ঠিক রাখা হবে। দেশের সবকিছু বন্ধ হলেও পানি সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য ওয়াসাকে আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছে। পানি সেবা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক করা হয়েছে। আশা করি করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হলেও নগরবাসী পানি সঙ্কটে পড়বে না। পানি সরবরাহ নিশ্চিত থাকবে। পানি নিয়ে কোন প্যানিক হবে না। পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।