লাভের আশায় অধিক খরচ আর হারভাঙা পরিশ্রম করে সবজির আবাদ করেছিলো কৃষক। বিক্রি ও লাভবান হওয়ার সময়টাও এসেছিলো। কে জানে মহামারি করোনা তাদের সেই স্বপ্ন লন্ডভন্ড করে দেবে? এখন জমি থেকে সবজি তুলে হাটে নিয়ে যাওয়ার খরচও উঠছেনা তাদের। এতে করে গাইবান্ধার সাঘাটা উজেলার চর সহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের জমিতেই পচেঁ যাচ্ছে সবজি। অধিক উৎপাদন খরচ করে এখন এ পরিস্থিতিতে ব্যাপক লোকসানের শিকার কৃষকরা সামনের দিনে কি খেয়ে বাঁচবে এ নিয়েই মাথায় আকাশ ভেঙে পরার উপক্রম।
উপজেলার চর এলাকা হলদিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক আসাদুজ্জামান ৪ বিঘা জমিতে করলা চাষ করেছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পরিশ্রম করেন করলার আবাদে। অবাদও বেশ ভালো হয়েছে। বীজ বপন থেকে শুরু করে এ আবাদে উৎপাদন খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। করলা তুলে ভালো দামেই প্রথমে বিক্রিটা শুরু করেছিলেন। হঠাৎ করেই করোনা ভাইরাসের কারনে বাজারে আর পাইকারী ক্রেতা নেই। প্রতিমন করলা এক থেকে দেড়’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও আড়াই বিঘা জমিতে মরিচের চাষ করেও বিপাকে পড়েছেন ওই কৃষক। প্রতিমন মরিচ ২০০ টাকা দরেও বিক্রি করতে পারছেন না। কৃষক আসাদুজ্জামান জানান, করোনার এই সময়ে গাড়ি না চলায় হাটে পাইকারী ক্রেতা না থাকায় মরিচ বিক্রি হচ্ছেনা। একই কথা জানালেন, চরের গাড়ামারা গ্রামের কৃষকরা। ওই গ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন ২ বিঘা জমিতে করলার আবাদ করেছেন। এতে উৎপাদন খরচ হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। ওই কৃষক জানান, ৩ মন করলা হাটে নিয়ে গিয়ে কোন ক্রেতা পাইনি। প্রতিমন এক থেকে দেড়’শ টাকা দামও করেনা। গাড়ি ভাড়ার টাকাও না ওঠায় আর জমি থেকে করলা তুলবেন না বলেও জানালেন কৃষক জালাল। একই ভাবে শশার আবাদ করে লোকসানের কথা জানালেন, চরের কৃষক আমিরুল ইসলাম। জমি ভেঙে এখন অন্য আবাদ করবেন বলে জানালেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চরের অধিকাংশ কৃষকই করলা, মরিচ, লাউ, টমেটো, শশা সহ বিভিন্ন শাক সবজির চাষ করেন। পরিবারের সবাই মিলে অধিক পরিশ্রম আর জমানো অর্থ চাষাবাদের প্রতিই খরচ করেন। প্রতিবছর এসব আবাদ করে লাভের মুখও দেখেন তারা। এবারও এসব আবাদ করেন। করোনার এমন সময়ে সবজি বিক্রি করতে না পারায় থমকে গেছে সবকিছু। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সুত্রে জানা যায়, এবার এ এলাকায় ৪ শ’ ৫৫ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রকার সবজি ও ১শ’ ৯০ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার সাদেকুজ্জামান জানান, উৎপাদিত সবজি বিক্রি করতে না পেরে যেসব কৃষক কষ্টে আছেন, তাদের সবজি ক্রয় করে ত্রাণ কাজে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর কোন সমস্যা হবে না আশা করা যায়। এদিকে এরই মধ্যে উপজেলার আদর্শ কৃষক আমির ক্ষেতে টমেটো পঁচে যাচ্ছে বিক্রি করতে না পেরে-এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন উপজেলার পুটিমারী গ্র্রামের আদর্শ কৃষক আমির আলীর বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তার ফলমূল ও সবজি বাগান পরিদর্শন করেন। কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে এবার ত্রাণের সঙ্গে সবজি বিতরণ করা হবে বলেও জানান তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. মাসুদুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাদেকুজ্জামান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মিঠুন কুন্ড, মুক্তি নগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আরশাদ আজিজ রোকন।