ভৌগলিক অবস্থানের কারণে নওগাঁ জেলাটি কৃষি নির্ভর। জেলার উপর দিয়ে আত্রাই, পূর্ণভবা, ছোট যমুনা, তুলসী গঙ্গা, নাগরসহ বয়ে গেছে কয়েকটি ছোট বড় নদণ্ডনদী। এ কারণে নওগাঁয় ১১টি উপজেলায় ধানসহ প্রচুর রবিশস্য উৎপাদিত হয়ে থাকে। জেলায় উল্লেখযোগ্য শিল্প কারখানা না থাকায় কৃষিই হলো মানুষের জীবিকা নির্বাহের অন্যতম উৎস্য। জেলায় বসবাসরত প্রায় সাড়ে ৬লাখ পরিবারের মধ্যে ৫০ হাজার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবার। এ সকল ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবার প্রায় শতভাগ কৃষি মজুর। সরকারি হিসাবে দেশের ২১ভাগ মানুষ দারিদ্র সীমায় বসবাস করলেও নওগাঁ জেলায় প্রায় অর্ধেক মানুষই দরিদ্র ও প্রান্তিক। এরা কৃষি মজুরের পাশাপাশি রিক্সা ভ্যান চালানো, ইট ভাঁটা শ্রমিক, চাতাল কলের শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসা ইত্যাদি ভাবে জীবণযাপন করে থাকে।
জেলায় কৃষকরা আমন ও বোরো ধান উৎপাদন করে থাকে। বছরে ২বার ধান লাগানো ও কাঁটার সময় কৃষক ও মজুরা চরম ব্যস্ত সময় পার করে থাকে। এ সময় কৃষকরা নতুন ধান ঘরে তোলার আনন্দে যেমন মশগুল থাকে তেমনি শ্রমিকরা চুক্তিতে ধান কেটে বেশী আয় করতে পারে বলে তাঁরা উৎফুল্ল থাকে। কৃষক ও মজুরদের পরিবারে নতুন জামা-কাপড় ক্রয় ও ভালো খাবারের ধুম পড়ে যায়। ঘরে ঘরে বয়ে যায় আনন্দের বন্যা।
বর্তমানে নওগাঁর মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে কোথাও কাঁচা আবার কোথাও আধা পাকা ধান। আর ১০/১২ দিনের মধ্যেই শুরু হবে বোরো ধান কাঁটার কাজ। বোরো ধান কাঁটার জন্য কৃষক ও মজুররা মানসিক ভাবে প্রস্তুত হলেও চলমান প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক তাদের গভীর সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে কিভাবে ধান কাটা ও মাড়াই এর কাজ তাঁরা সম্পন্ন করবেন বা আদৌ ধান কাটা ও মাড়াইয়ের সময় সামাজিক দুরত্ব কতটুকু বজায় রাখা যাবে সেটি তাদের দুঃশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এ ছাড়া বোরো ধান কাঁটার মৌসুমে পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কৃষি মজুরা নওগাঁয় আসে ধান কাঁটার জন্য। এ সময় বিভিন্ন এলাকার শ্রমিকের সাথে কাজ করতে হয়। এটিও কৃষি মজুরদের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। চলমান করোনা সংকটে কিভাবে তাঁরা ধান কাটবেন এটাই এখন কৃষি মজুরদের আলোচনার কেন্দ্র বিন্দু।
এ বিষয়ে রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষি মজুর সিরাজুলের সাথে কথা বললে তিনি জানান, বছরের এই সময়টার জন্য আমরা মজুরা অধীর আগ্রহে থাকি। সারাদিন চুক্তিতে কাজ করে আমরা এ সময় প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা আয় করি। এ সময়ের আয় দিয়ে আমরা বছরের ধান-দেনা মেকাপ করি। তাই করোনার যত ঝুঁকিই থাক না কেন। কাজ আমাদের করতেই হবে। বরহট্রি গ্রামের কৃষি মজুর রফিকুল জানান, কাজ না করলে বউ সন্তান নিয়ে খাবো কি? জীবণ থাক আর যাক। কাজ করাই লাগবে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগ কি ভাবছে সে বিষয়ে মতামত গ্রহণের জন্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রকাশ চন্দ্র সরকারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমে বোরোর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে বোরো ধান কাঁটার জন্য ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসন থেকে কিছু নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো এক উপজেলা বা জেলা থেকে অন্য উপজেলা বা জেলায় শ্রমিক গমনের বিষয়ে কৃষি বিভাগের পরামর্শ গ্রহণ, কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষকে ধানকাটার কাজে লাগানোর বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ, শ্রমিকের সামাজিক দুরত্বের বিষয়টি জমির মালিক কর্ত্তৃক নিশ্চিতকরণ ইত্যাদি। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২০হাজার ৮০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান উৎপন্ন হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।