করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিবেশী দেশের সাথে আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। তবে মহামারী এ ভাইরাসের মধ্যেও বাংলাদেশ সরকার সীমিত আকারে স্থলবন্দর চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও প্রতিবেশী দেশ ভারত সরকার লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোয় তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না। ফলে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরাই স্থলবন্দর দিয়ে সহসাই আমদানি-রফতানি বাণিজ্য চালু হওয়ার তেমন সম্ভাবনা দেখছে না। আর এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা যেমন চরম ক্ষতির মধ্যে পড়বে। পাশাপাশি বন্দরগুলো থেকে সরকারেরও কয়েক হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হাতছাড়া হবে। ব্যবসায়ী এবং স্থলবন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের মানুষই এখন ঘরবন্দি। বর্তমানে উভয় দেশের মানুষের দৈনন্দিন কাজসহ বন্ধ হয়ে পড়েছে সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্যও। তার মধ্যে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যও রয়েছে। গত প্রায় এক মাস ধরে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশের কোনো বন্দর দিয়ে এক ট্রাক পণ্যও প্রবেশ করেনি। ফলে দেশের সকল স্থলবন্দর অচল হয়ে রয়েছে। তাতে উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা চরম বিপাকে রয়েছে। তারা ধারণা করেছিল করোনাভাইরাসেরর মধ্যে উভয় দেশের সরকার অন্তত বন্দরগুলো চালু রাখবে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় ভারত সরকার দ্বিতীয় দফায় লকডাউনের মেয়াদ আরো বাড়িয়েছে। যার ফলে স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি ও রফতানির বিষয়টি অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কবে নাগাদ এই পরিস্থিতি ভালো হবে তাও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীরা ধরে নিয়েছেন খুব তাড়াতাড়ি আর বন্দর চালু হচ্ছে না।
সূত্র জানায়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে পণ্য আমদানি ও রফতানির জন্য বাংলাদেশে মোট ২৩টি স্থলবন্দর রয়েছে। এসব বন্দরের মধ্যে বেনাপোল, হিলি, সোনামসজিদ, চ্যাংড়াবান্ধা, ভোমরা, তামাবিল, টেকনাফ, দর্শনা, বিবির বাজার, আখাউড়াসহ আরো কয়েকটি বন্দরের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক কার্যক্রম সব সময় চলমান থাকে। বিশ্বব্যাপী মরণব্যাধি করোনা পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে ওসব বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধ রয়েছে। তবে ভারতের লকডাউন উঠে গেলে ওসব বন্দর আবারো চালু হবে।
সূত্র আরো জানায়, করোনা মহামারী মধ্যেও বাংলাদেশ সরকার স্থলবন্দর দিয়ে বাণিজ্য সচল রাখার বিষয়ে আগ্রহী ছিল। সে জাতীয় রাজস্ব বোড (এনবিআর) বেনাপোলসহ দেশের সকল স্থলবন্দর দিয়ে সীমিত আকারের পণ্য আমদানি-রফতানি ও খালাসের জন্য এক অফিস আদেশ জারি করে। কিন্তু তারপরও স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানি চালু রাখা সম্ভব হয়নি। মূলত ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে না আসায় দেশের স্থলবন্দরগুলো অচল হয়ে পড়েছে। মূলত লকডাউনের কারণেই ভারত থেকে পণ্যবাহী ট্রাক আসতে পারছে না। উভয় দেশের স্থলবন্দর ব্যবসায়ীরা ধারণা করেছিল, ভারতের মোদি সরকার তাদের দেশের লকডাউনের মেয়াদ হয়তো আর বৃদ্ধি করবে না। কিন্তু ওই দেশের সরকার লকডাউনের মেয়াদ আরো বাড়িয়েছে। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পণ্য আমদানি-রফতানি বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে। কবে নাগাদ এই লকডাউন উঠবে তাও কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না। এখন সবাই পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। অবস্থা ভালো হলে সরকার চাইলেই স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানি চালু হতে পারে। কিন্তু ভারত সরকার দ্বিতীয় দফার লকডাউনের মেয়াদ শেষ হলে তৃতীয় দফায় ওই মেয়াদ আবারো বৃদ্ধি করার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে দেশের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে শিগগিরই পণ্য আমদানি-রফতানি চালুর সম্ভাবনা দেখছে না ব্যবসায়ীরা। যদিও ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার আগেই বেনাপোল স্থলবন্দরে চলতি ২০২০-২০২১ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি আর শুল্ক ফাঁকির কারণে প্রায় ১৫শ’ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। তারপর করোনা পরিস্থিতিতে বন্দর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজস্ব ঘাটতি আরো বাড়বে।
এদিকে স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের বিদ্যমান অবস্থা প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, গোটা বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতি যেভাবে ছড়িয়ে পড়েছে তাতে করে ভারতের সঙ্গে খুব সহজেই আর পণ্য আমদানি-রফতানি চালু হচ্ছে না বলে মনে হচ্ছে। এই অবস্থায় স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির মধ্যে পড়ে গেছে। পহেলা বৈশাখ ও ঈদের সময় ব্যবসায়ীরা ভাল ব্যবসা করে থাকে। কিন্তু করোনার থাবায় এবার তা হলো না। সামনে ঈদ আসছে। এরই মধ্যে দেশের পরিস্থিতি যদি ভালোর দিকেও যায় তাহলেও এই মুহূর্তে পণ্য আমদানি করে মার্কেট পাওয়া যাবে না। কারণ ব্যবসায়ীদের হাতে সময় থাকবে না। যে কারণে ব্যবসায়ীরা অন্যান্যবারের মতো ভালো ব্যবসা করতে পারব না। ফলে স্থলবন্দর চালু নিয়ে ব্যবসায়ীদের এখন আর তেমন কোন মাথাব্যথা নেই।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বেনাপোল কাস্টম হাউসের একজন উর্ধতন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বেনাপোল স্থলবন্দর থেকে বছরে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়। ওই হিসাবে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানি চালু থাকলে একদিনে সরকারি কোষাগারে রাজস্ব জমা পড়ে প্রায় ৮ কোটি টাকা। বন্দর বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ওই টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।