দেশের ব্যাংকিং খাতে বৈদেশিক মুদ্রা ডলার সরবরাহে টান ধরেছে। পাশাপাশি বেড়েছে ডলারের দামও। বিশ্বব্যাপী করোনার প্রভাবে রেমিটেন্স আসা প্রায় বন্ধ। একই সাথে দেশে আসছে না রফতানি বিল। ফলে ব্যবসায়ীরা আমদানি বিল পরিশোধ করতে পারছে না। তাছাড়া রফতানির বিপরীতে যে ব্যাক টু ব্যাক এলসি করা হয়, রফতানি আদেশ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায়ও অনেকে পরিশোধ করতে পারছেন না। এমনি পরিস্থিতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রানীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। রফতানির বিপরীতে আমদানির দায় পরিশোধের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের রফতানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। একই সাথে বড় অংকের আমদানি দায়ও ৩ মাস অন্তে পরিশোধের নির্দেশনা শিথিল করে এককালীন পরিশোধের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও অনেক উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় দেড় থেকে ২ টাকা। মূলত করোনার কারণেই বাজারে ডলারের সরবরাহ কমে গেছে। কিন্তু চাহিদা অনেক বেশি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দাম বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্টরা পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাজারে ডলার সরবরাহ বাড়ানোর ছাড়া বিকল্প দেখছেন না। ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাধারণত রফতানির বিপরীতে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হয় তার দায় ৩ মাসের মধ্যে পরিশোধ করা হয়। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার আন্তঃপ্রবাহ প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ডলারের সঙ্কটে ব্যবসায়ীরা আমদানির বিল পরিশোধ করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি এক করা সার্কুলারে বলা হয়েছে, যারা ব্যাক টু ব্যাক এলসির দায় পরিশোধ করতে পারছে না তাদেরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ইডিএফ থেকে ৬ মাসের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করা হবে। ওই অর্থ দিয়ে তারা আমদানি দায় পরিশোধ করতে পারবে। মূলত ৫ লাখ ডলারের ওপরে কোনো পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলা হলে তাকে বড় অংকের আমদানি বলা হয়। সাধারণত বড় অংকের এলসি এককালীন পরিশোধ করা হলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার অস্থিতিশীল হওয়ার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপরও চাপ বেড়ে যায়। এ চাপ কমানোর জন্য বড় অংকের এলসির দায় পণ্য দেশের আসার পর থেকে প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর পরিশোধ করার নির্দেশনা দেয়া রয়েছে।
সূত্র জানায়, দেশের ব্যাংকগুলো এতোদিন নিজেদের মজুদ থেকে ব্যবসায়ীদের বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের চাহিদা মিটিয়ে এসেছে। কিন্তু এখন আর পারা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে অনেক ব্যাংকেরই মজুদ শেষ হয়ে গেছে। কারণ কোনো রফতানি বিল দেশে প্রত্যাবাশিত হাচ্ছে না। আসছে না রেমিট্যান্স প্রবাহ। সবমিলে বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ফলে বেড়ে চলেছে ডলারের দাম। ইতিমধ্যে যেসব পণ্য আনার জন্য আগে ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছিল সেসব পণ্য দেশে এসেছে। ব্যাংকে পণ্যের মূল্য পরিশোধের জন্য বিল আসছে। ডলারে এই এলসির বিল দিতে হয়। নির্ধারিত বিনিময় মূল্য অনুসারে আমদানিকারকরা টাকা পরিশোধ করেন, আর ব্যাংকগুলো ডলারে এলসি মূল্য বিদেশি বিক্রেতাকে পরিশোধ করেন। আগে ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা থেকে ৮৫ টাকা। কিন্তু সপ্তাহ দুয়েক ধরে ব্যাংকগুলো ডলারের মূল্য ধরছে ৮৬ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৮৭ টাকা পর্যন্ত। অর্থাৎ মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ডলারের দাম বেড়েছে দেড় থেকে ২ টাকা পর্যন্ত। যেসব বড় প্রতিষ্ঠান ৫০ লাখ ডলারের এলসি খুলেছিল তাদের ব্যয় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা বেড়ে গেছে।
সূত্র আরো জানায়, করোনার প্রভাব এদেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও পড়েছে। বেশির ভাগ শিল্পকারখানা বন্ধ রয়েছে। করোনার প্রভাবে আয় বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড় অংকের এলসির দায় নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করা যাচ্ছে না। অর্থাৎ তিন মাস অন্তে পরিশোধ করতে পারছে না। এমনি পরিস্থিতিতে করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সহায়তার জন্য বৈদেশিক মুদ্রার নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে।