ছোট বেলা থেকে প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ থেকে বিভিন্ন কিছু তৈরী করতেন মোঃ সবুজ আলী। পড়াশুনা করছেন আইডিয়াল কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা নিয়ে দ্বাদশ শ্রেণিতে। তিনি বিভিন্ন প্রযুক্তি মেলায় অংশগ্রহন করেছেন এবং অর্জন করেছেন অনেক পুরুস্কার। তবে এবার তার চিন্তা ছিল অন্যরকম। দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কথা মাথায় রেখে তিনি কলেজের হাত খরচের টাকা জমিয়ে তৈরী করেছেন ভেন্টিলেটরসহ বেশ কিছু চিকিৎসা সরঞ্জাম। করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর যে যন্ত্রটির কথা সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে তা হলো ভেন্টিলেটর। করোনা ভাইরাসের চিকিৎসায় বিশ্বব্যপী ভেন্টিলেটরের চাহিদা বেড়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় এই যন্ত্রটি খুবই জরুরি। আক্রান্ত হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে রোগীর অবস্থা এমন এক ধাপে চলে যেতে পারে যে জীবন বাঁচানো কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে এই যন্ত্রটি ছাড়া। অনেক দেশে সেটা না থাকায় রুগীদের চিকিৎসা ব্যহত হয়েছে। আমাদের দেশেও করোনা মোকাবেলায় হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত সংখ্যক ভেন্টিলেটর নেই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে ১ হাজার ২৫০টি (সরকারি হাসপাতালে ৫০০টি এবং বেসরকারি হাসপাতালে ৭৫০টি) ভেন্টিলেটর রয়েছে। আর এসব ভেন্টিলেটরের বাজার মূল্যও বেশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৭ কোটি মানুষের দেশে অন্তত পঁচিশ হাজার ভেন্টিলেটর থাকা দরকার। প্রয়োজনের তুলনায় ভেন্টিলেটর সংকটে রয়েছে দেশের হাসপাতালগুলো। আর তাই মোঃ সবুজ আলী সবকিছু চিন্তা করেই কম খরচের মধ্যে তৈরী করতে পেরেছেন ভেন্টিলেটর এবং থার্মাল স্কানার। তিনি বলেন বর্তমানে করোনা চিকিৎসার জন্য যেটা প্রয়োজন তা হলো ভেন্টিলেটরের সাহায্যে ফুসফুসে অক্সিজেন সাপ্লাই দেয়া এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বের করা। আর এই কাজটা করা হয় মেকানিক্যালভাবে। আমার তৈরি ভেন্টিলেটর এই কাজটা পুরোপুরি করতে পারে। প্রতি মিনিটে ফুসফুস ২৪ বার খুলবে ও বন্ধ হয়ে অক্সিজেন সাপ্লাই করবে ও কার্বন ডাই অক্সাইড বের করবে। আমি আমার সিস্টেমটাকে এমনভাবে তৈরি করেছি যেটা নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন সাপ্লাই দিতে পারে। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে আরও ডেভেলপ করা যাবে। ইনফ্রারেড থার্মোমিটার ২০০০ টাকার মধ্যে তৈরি করা সম্ভব। ইমারজেন্সি ভেন্টিলেটরে রয়েছে আরডুইনো নামক একটি কন্ট্রোলার বোর্ড এটাকে সম্পূর্ণভাবে কম্পিউটারে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বিদ্যুৎ চলে গেলে ও ব্যাটারির মাধ্যমে তিন ঘন্টা ব্যবহার করা যাবে। এবং ইনফ্রারেড থার্মোমিটারের মাধ্যমে রোগীর দেহের তাপমাত্রা মাপা যায়। এ ব্যাপারে ডা: নয়ন কুমার চাকীর (এম.বি.বি.এস ) সাথে কথা বলা হলে তিনি জানায় করোনা চিকিৎসার জন্য একটা গুরত্বপূর্ণ সরঞ্জাম হলো ভেন্টিলেটর। এ ছাড়া মেডিকেল, সার্জিক্যাল, গাইনি যে কোনও রোগের জটিলতা ডেডলাইনে পৌঁছে গেলেই ভেন্টিলেশনের কথা ভাবা হয়। চোট, আঘাত, পথ দুর্ঘটনা থেকে ব্রেন স্ট্রোক, ট্রমার মতো জটিল উপসর্গ, হার্ট অ্যাটাক, মেজর সার্জারি, ক্যানসার থেকেও জটিলতা বেড়ে যায়। ক্রনিক নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, মেজর চেস্ট ইনফেকশন হলেও নানান সমস্যা হতে পারে। একনাগাড়ে অতিরিক্ত শ্বাসকষ্ট অথবা রেসপিরেটরি ফেলিওর হলে চিকিৎসক ভেন্টিলেশনের কথা ভাবেন। তার এ যন্ত্রটি যদি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর পরীক্ষা করে দেখে এবং সরকারী পৃষ্টপোষকতা পাওয়া যায় তাহলে এ মহামারীতে অনেক কাজে আসবে এই তরুন বিজ্ঞানীর তৈরী ভেন্টিলেটর।