নীলফামারীর ডিমলায় করোনা ভাইরাসের কারণে অফিস আদালত দোকান পাট, মিনি ফ্যাক্টরি, রিক্রা, ভ্যান বন্ধ থাকায় এবং সরকারের ঘোষনা অনুযায়ী লোক সমাগম নিষেধ থাকার কারণে উপজেলার প্রায় ৩১ হাজার শ্রমিক শ্রেনীর মানুষ ছাড়াও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের কয়েক হাজার মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে অঘোষিত লকডাউন হওয়ায় উপজেলার কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ন মধ্যবিত্ত ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ভালনেই। উপজেলায় ইতোমধ্যে কর্মহীন অসহায়দের মাঝে সরকারীভাবে যে ত্রান সামগ্রী বিতরন করা হয়েছে তা প্রয়োজনের ত’লনায় অপ্রতুল।
উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের তথ্য অনুযায়ী এ উপজেলায় মোট জণসংখ্যা ৩লাখ ১৫হাজার ৮৫৭ জন। যারমধ্যে মোট শ্রমিক পরিবারের সংখ্যা প্রায় ৩১ হাজার। এসব শ্রমিক পরিবারের মানুষজন গত ১মাস যাবত করোনা ভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসের তথ্য অনুযায়ী সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয় কতৃক বৃহঃবার পয্যন্ত এ উপজেলায় মোট ৯২ মেট্রিকটন চাল, অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর জন্য ৪লাখ ৯৯ হাজার টাকা ও শিশু খাদ্যের জন্য ১লাখ ৭ হাজার ৬শ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যারমধ্যে বরাদ্দকৃত ত্রানের ৮০ মেট্রিকটন চাল ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী উপজেলার ১০ ইউনিয়নের ৮ হাজার পরিবারের মাঝে বিতরন করা হয়েছে। শিশুদের জন্য বিতরন করা হয়েছে শিশুখাদ্য। অবশিষ্ট ১২ মেট্রিকটন চাল ও খাদ্য সামগ্রী ২/১ দিনের মধ্যে ১২শ পরিবারের মাঝে বিতরন করা হবে। উপজেলা প্রশাসনের ত্রান তহবিলে জমাকৃত অনুদানের টাকায় উপজেলা প্রায় ১হাজার ৫শ পরিবারের মাঝে ৫কেজি চাল, ২কেজি আলু ও কেজি করে ডাল বিতরন করেছেন ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায়। এ ছাড়া ব্যক্তিগত উদ্দোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠন অসহায় মানুষদের মাঝে নগদ অর্থ ও ত্রান বিতরন করেছে। তবে উপজেলায় খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা অনুযায়ী সরকার কতৃক যে পরিমান ত্রান বিতরন করা হয়েছে তা প্রয়োজনের ত’লনায় অপ্রতুল। উপজেলার হোটেল রেস্তরা শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, দোকান শ্রমিক, রিক্রাা ভ্যান শ্রমিক, অটো শ্রমিক, ছ’মিল শ্রমিক, কুলিমজদুর, নির্মান শ্রমিক, সেলুন ব্যবসায়ী ও ছোট ছোট দোকান মালিকগণ বলেন, গত প্রায় ১মাস যাবত আমরা কর্মহীন হয়ে পড়েছি। সরকারীভাবে যারা যারা ১০/৫ কেজি করে চাল ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী পেয়েছি তা দিয়ে কয়েকদিন পরিবার পরিজন নিয়ে কোন রকম দিনাতিপাত করলেও। বর্তমানে আমরা খেয়ে না খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। আর মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি বলছে, করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের ছোট খাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আয় রোজগার একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমরা অতিকষ্টে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। লোকলজ্জার ভয়ে না পারছি ত্রান চাইতে, না পারছি পরিবার পরিজন নিয়ে দুবেলা দুমুঠো ভাত খেয়ে দিন কাটাতে। আমরা খেয়ে না খেয়ে কোনরকম দিনাতিপাত করছি। ডিমলা উপজেলা হোটেল রেস্তরা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা পরান চন্দ্র রায় বলেন, আমরা হোটেল রেস্তরার কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। বর্তমানে হোটেল রেস্তরা বন্ধ থাকার কারণে আমরা পুরোপুরি কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় বলেন, দেশের চলমান পরিস্থিতির কথাভেবে সরকার খাদ্য সামগ্রী সকলের মাঝে পর্যায়ক্রমে বিতরন করছে। ইতোমধ্যে উপজেলায় সরকারীভাবে ৯২ মেট্রিকটন চাল ও প্রায় ৫লাখ টাকা ও শিশু খাদ্যের জন্য ১লাখ ৭হাজার ৬শ টাকা বরাদ্দ এসেছে। যার ৮০ মেট্রিকটন চাল ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী অসহায় ৮হাজার পরিবারের মাঝে বিতরন করা হয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যে আবারো ১২শ পরিবারের মাঝে বিতরন করা হবে। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের ত্রান তহবিল থেকে ১৫শ পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরন করা হয়েছে। সরকারীভাবে আরো বরাদ্দের জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয় বরাবর চাহিদাপত্র প্রেরন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকলেই সরকারী বরাদ্দের খাদ্য সামগ্রী পাবে।