অসহায় নারীদের ভিজিডির চাল আত্মসাতের মামলায় নড়াইলের কালিয়া উপজেলার পেড়লী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জারজিদ মোল্যা (৫২) এবং করোনাভাইরাস উপলক্ষে সরকারি ত্রাণ সহায়তার (জিআর) চাল আত্মসাতের অপর এক মামলায় একই উপজেলার নড়াগাতী থানাধীন জয়নগর ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন চৌধুরীকে (৬০) সাময়িক বরখাস্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ওই দুই চেয়ারম্যানকে বরখাস্তের পৃথক পৃথক আদেশ জারি করা হয়েছে।
এর পূর্বে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত কার্যালয় যশোরের সহকারী পরিচালক মোঃ মাহফুজ ইকবাল মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জারজিদ মোল্যা এবং বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সরকারি চাল আত্মসাতের ঘটনায় পৃথক দু’টি দুর্নীতির মামলা দায়ের করেন।
উল্লেখ্য, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় তৃণমূল পর্যায়ের অসহায় পরিবারের নারীদের দুই বছরব্যাপী বিনামূল্যে প্রতিমাসে ৩০কেজি করে ভিজিডি চাল প্রদান করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে উপজেলার ১১নং পেড়লী ইউনিয়নে ১৯০ জন মহিলাকে ভিজিডি সুবিধার আওতায় কার্ড প্রদান করা হয়। ৬ এপ্রিল পেড়লী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ জারজিদ মোল্যার অনুকূলে ১৯০টি কার্ডের বিপরীতে ৫ হাজার ৭শ’কেজি চালের ডিও প্রদান করা হয়। ১৬ এপ্রিল ১৯০টি কার্ডের মধ্যে ১০৫টি কার্ডের চাল বিতরণ করা হলেও অবিতরণকৃত ৮৫টি কার্ডের ২ হাজার ৫ শত পঞ্চাশ কেজি ভিজিডির চাল আত্মসাত করেন চেয়ারম্যান জারজিদ মোল্যা। এরপর ১৮ এপ্রিল প্রাথমিক তদন্তে চাল চুরির ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ের সুপারভাইজার মোঃ মতিয়ার রহমানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে কালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডাইরিভুক্ত (নং-৫৪৭) করে যশোর সমন্বিত দুদক কার্যালয় পাঠিয়ে দেয়।
অপরদিকে, করোনা ভাইরাসের কারণে হতদারিদ্র্য পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য জয়নগর ইউনিয়নের নামে ত্রাণের (জিআর) ৩ মে. টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু ৯ এপ্রিল বরাদ্দকৃত চাল চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন চৌধুরী ও সচিব মহিদুল ইসলাম যোগসাজশে ওই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ২৮টি নামের অনুকূলে চাল বিতরণ না করে ৫০টি নামের ভুয়া মাস্টার রোল দাখিল করেন। এতে জনপ্রতি ১০কেজি হারে ২৮টি নামের বিপরীতে ২৮০কেজি চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সৈয়দ মোঃ আজিম উদ্দিন বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে নড়াগাতি থানায় এজাহার দাখিল করেন। এ বিষয়ে নড়াগাতি থানার ওসি একটি জিডি করে অভিযোগটি দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, যশোরে প্রেরণ করেন।
এরপর ওই দু’টি ঘটনায় দুদকের সহকারী পরিচালক মোঃ মাহফুজ ইকবাল বাদী হয়ে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। ফলে, ওই চেয়ারম্যানদ্বয় দ্বারা সংঘটিত অপরাধমূলক কাজ জনস্বার্থের পরিপন্থী বিবেচনায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী পৃথক দুু’টি আদেশে তাদের স্ব-পদ হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
একই সঙ্গে উভয়কে কারণ দর্শানো নোটিশে তাদের পদ থেকে কেন চূড়ান্তভাবে অপসারণ করা হবে না, তার জবাব চিঠি পাওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নড়াইলের জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা বলেছেন, ‘মন্ত্রনালয়ের চিঠি এখনও হস্তগত হয়নি। তবে জেনেছি স্থানীয় সরকার বিভাগ (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪(১) ধারা অনুযায়ী তাদের স্ব-পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে’।