বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জেলেদের ভিজিএফ চাল আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। জাটকা ইলিশ ধরা বন্ধের সময় জেলেদের জন্য দেয়া সরকারি ভিজিএফ চাল চেয়ারম্যান আত্মসাত করেছেন বলে বরগুনা জেলা প্রশাসকের নিকট লিখিত অভিযোগ করেছে। জেলা প্রশাসক অভিযোগ তদন্ত করার জন্য এক নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্য তদন্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে জানা যায়, ২৯ মার্চ বরগুনা সদর উপজেলা এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের জেলেদের মাঝে ওই চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ সেলিম ভিজিএফ এর চাল বিতরণ করেন। প্রত্যেক জেলেকে প্রতি মাসে ৪০ কেজি করে দুই মাসে ৮০ কেজি চাল দেয়া কথা থাকলেও প্রত্যেক জেলেকে ৬০ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলের দুই মাসের ২০ কেজি করে চাল কম দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা রয়েছে। জেলে তালিকায় যে সকল জেলেদের নাম রয়েছে তারা সবাই আবার চাল পায়নি। এছাড়া প্রকৃত জেলেদের নাম বাদ দিয়ে যারা মাছ শিকারের সঙ্গে যুক্ত নয় এমন ব্যক্তিদের নামও জেলে তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করার অভিযোগ রয়েছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে ওই ইউনিয়নে ১ হাজার ১০৭ জন জেলের জন্য দুই মাসে ৮৮ মেট্রিকটন চাল বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক জেলেকে ২০ কেজি করে চাল কম দিলে ২২ মেট্রিকটন চাল আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। যার সরকারী ক্রয় মূল্য ৯ লাখ ২৪ হাজার টাকা।
বরগুনাসহ দেশের সকল উপকূলীয় এলাকার নদ- নদীতে ছোট ফাঁসের জাল দিয়ে মাছ ধরার ওপর ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত টানা আট মাস জাটকা শিকার ,পরিবহন, বিক্রি ওপর সরকার নিষেধাজ্ঞা চলে। জাটকা শিকার বন্ধকালীন সময় সরকারি খাদ্য সহায়তা হিসেবে ভিজিএফের এই
চাল বিতরণ করা হয়। নিষেধাজ্ঞা কালীন সময় নদ-নদীতে কারেন্ট জাল, বেহুন্দি জাল, খুটা জাল
ও মশারি দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। ফলে নিষেধাজ্ঞা কালীন সময় জেলেরা অন্য কোনো মাছ ও ধরতে না পারায় জেলেদের মাঝে এই সহায়তার চাল বিতরণ করা হয়।
উরবুনিয়া এলাকার জেলে আবদুর রহমান বলেন দুই মাসে আমাদের সরকার ৮০ কেজি করে চাল দেয়া কথা বলছে , সেখানে ৬০ কেজি চাল পাইছি। ৮০ কেজি জায়গায় ৬০ কেজি চাল দেওয়া হয় । চাল কম দেয়ার জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ লিখিত করেছি। অভিযোগ দেওয়ার পর চেয়ারম্যানের লোকজন আমাকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে এখন । এছাড়া যারা জেলে না তাদেরকেও এই জেলে সহায়তার চাল দেয়া হয়েছে।
একই এলাকার আর এক জেলে আল আমিন হোসেন বলেন এক ইউপি সদস্যের আমার কাছ থেকে চাল দেয়ার কথা বলে দুই হাজার টাকা নিয়েছেন ।
মৎস্য শিকারের সাথে সম্পৃক্ত নয় আলমগীর হোসেন । তার পরও তার নাম জেলে তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । আলমগীর বলেন আমি মাছ ধরার সাথে সম্পৃক্ত না আমার নাম সহায়তার তালিকায় আছে। কিন্তু আমি বা আমার পরিবার কোনো লোক চাল আনেনি।
মৎস্য শিকারের সাথে সম্পৃক্ত নয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি রুবেল তার নামও এসেছে জেলে তালিকায়। তিনি বলেন,এ বিষয়ে আমি কোন কিছু জানিনা। আর কোন চাল আনিনি এবং কোন টিপ স্বাক্ষরও দেয়নি।
চাল বিতরনে অনিয়মের অভিযোগের বিষয় চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ সেলিম বলেন আমার এখানো কোনো অনিয়ম হয়নি।আমার প্রতিপক্ষ মিথ্যা অভিযোগ করছে। অভিযোগের তদন্ত চলছে। যদি অনিয়ম হয়ে থাকে সেটা আমার অগোচরে হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন জেলেদের চাল বিতরনে অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি।অভিযোগ তদন্তের জন্য দুই জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা তদন্তে সত্যতা পেলে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে ।