বরগুনায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মাইনুর রহমান নিশাত (২৭) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে সোমবার ভোররাতে নিজ বাড়িতেই তার মৃত্যু হয়। নিশাত শহরের কেজি স্কুল সড়কের গোলাম সরোয়ার নান্টুর ছেলে। এছাড়া, করোনা উপসর্গ নিয়ে শহরের সড়কের ডাক্তার বাড়ি এলাকায় মারা গেছেন এক বৃদ্ধ। সোমবার ভোররাতে মেয়ের বাড়িতে তার মৃত্যু হলে রাতেই তাকে গ্রামের বাড়ি ঢলুয়ায় দাফন করা হয়েছে।
নিশাতের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুই ভাই বোনের মধ্যে নিশাত ছিলেন ছোট। জন্ম থেকেই তিনি কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধী ছিলেন। বেশ কয়েকদিন ধরে তিনি জ্বরে ভুগছিলেন। রোববার সন্ধ্যা থেকে জ্বরের সাথে তার কাশি শুরু হয়। রাত ৮টার দিকে সামান্য শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। তখন তার বাবা কাশির ওষুধ খাওয়ালে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। রাত ৩টার দিকে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। এ সময় তার বাবা বরগুনা জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে ব্যর্থ হন। ফলে তাকে হাসপাতালে নেয়া সম্ভব হয়নি। প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভোররাত পৌনে ৪টার দিকে মারা যান নিশাত। নিশাতের মৃত্যুর পরপরই তার স্ত্রী এলিনা (২৫) বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছেন। তিনি বর্তমানে তার বাবার বড়ি পাথরঘাটা উপজেলার নাচনাপাড়া ইউনিয়নের কাজিরহাট গ্রামে রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
নিশাতের মামা শরীফ খায়রুল আহসান আজাদ জানান, খবর পেয়ে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বরগুনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যকর্মীরা নিশাতের বাসায় আসেন এবং সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেন। পরে তারা উপজেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে নিশাতেন জানাজা ও দাফনের ব্যবস্থা করেন।
অপরদিকে, করোনা উপসর্গ নিয়ে শহরের ডিকেপি সড়কের ডাক্তার বাড়ি এলাকায় মারা গেছেন এক বৃদ্ধ। কয়েকদিন ধরে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সোমবার ভোররাতে তার মৃত্যু হয়। তার স্বজনরা বিষয়টি গোপন রেখে রাতেই তার দাফন সম্পন্ন করেছেন।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, ওই বৃদ্ধ শহরের ডিকেপি সড়কের ডাক্তার বাড়ি এলাকায় তার মেয়ের বাড়িতে থাকতেন। তিনি জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঘোড়াঘুড়ি করতেন। বরিবার তার অবস্থার কিছুটা অবনতি হলে সোমবার ভোররাতে তিনি মারা যান। কিন্তু তার পরিবার বিষয়টি গোপন রেখে রাতেই তাকে গ্রামের বাড়ি ঢলুয়ায় দাফন করেন।
ওই বৃদ্ধের মেয়ের জামাই রিয়াজ খান জানান, তার শ্বশুড় আগে থেকেই নানা রোগে ভুগছিলেন। তার করোনা উপসর্গ ছিলনা। পরিস্থিতি বিবেচনায় রাতেই তাকে দাপন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বরগুনার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ হুমায়ুন শাহিন খান বলেন, করোনা উপসর্গ দেখা দেয়ার পরই নিশাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত ছিল। মৃত নিশাতসহ তার পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিশাতের স্ত্রী এলিনা বর্তমানে তার বাবার বাড়িতে বয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পাথরঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তার নমুনা সংগ্রহ করা হবে। তিনি আরও বলেন, ডিকেপি সড়কের ডাক্তার বাড়ি একালার মৃত্যুর ঘটনাটি স্বাস্থ্য বিভাগের জানা নেই। তবে খোঁজখবর নিয়ে পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বরগুনার জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, নিহত নিশাতের বাড়িসহ আশপাশের কয়েটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। নিশাতের স্ত্রী এলিনার বাবার বাড়িও লকডাউন করা হয়েছে। তিনি জানান, যথাযথ ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করেই নিশাতের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।
এদিকে, বরগুনায় করোনামুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন আরও দুইজন। রোববার বিকেলে বরগুনা সদর উপজেলার খাকবুনিয়া গ্রামের মোঃ রাব্বী (২৬) এবং মাইঠা গ্রামের মোঃ আমির হোসেন (১৬) চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। বরগুনা থানা পুলিশ নিজস্ব গাড়িতে করে তাদের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। এরআগে শুক্রবার বিকেলে খাকবুনিয়া গ্রামের মোঃ সেলিম (৬০) এবং ঘটবাড়িয়া গ্রামের মোঃ হিরন খান (৩৫) সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।