ব্যবসায়ীদের করোনা ও রোজা বাণিজ্য। কথাটি শুনতে কেমন কেমন মনে হয়। আবার করোনা ও রোজা বাণিজ্য কী? করোনায় যখন লকডাউন চলছে, মানুষকে ঘরে রাখতে চেষ্টা অব্যাহতভাবে চেষ্টা করছেন প্রশাসন। তখন অধিক মুনাফাগোর ব্যবসায়ীরা সুকৌশলে লাগামহীনভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়াচ্ছেন তার সাথে আর এক দফা বৃদ্ধি করেছেন মহে রমজানের কারণে।
অর্থনীতির ভাষায় বাজার নিয়ন্ত্রণ বলে একটি কথা থাকলেও আমাদের দেশে এটা অনুউপস্থিত। তবে মাঝে মাঝে প্রশাসন ভেজাল, দাম বৃদ্ধির কারণে মোবাইল কোর্টের কারণে জেল জরিমান করে থাকেন তার পরেও বব্যবসায়ী মনোভাব পরিবর্তন হয়না। এ যেন কয়লা ধুয়ে ময়লা না যাবার মত অবস্থা। ইল্লত যায় না মোলে খাসলত যায় না ধুলে। রোজা আসলে তো শুধু মসুলমানদের আনন্দ আর আনন্দ। ১ মাস রোজা শেষ হওয়ার পর ঈদে বড়, মধ্যম, ছোটদের মহাআনন্দ। গরিব, ধনী সকল শ্রেণী শিশু-কিশোররা ঈদে আনন্দ করে সবচেয়ে বেশি। নতুন নতুন ফ্যাশনের নতুন জামাকাপড়, জুতা, পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা ঈদের বড় আনন্দ। ধনীদের আনন্দ আরও ব্যাপক। অনেক ধনী পরিবার ঈদে গাড়ি, বাড়ি, গহনাসেট কিনে পরাকে বড় আনন্দ মনে করে। এ সময় ব্যবসায়ীরা লাগামহীনভাবে বাড়ান তাদের বিক্রয়যোগ্য জিনিসপত্রের দাম। গরিবের বড় আনন্দ হচ্ছে ঈদের দিন নতুন একটা জামা কিনে পরা। নতুন জুতা হলেও ভালো হয় কিন্তু সেটা এবার গুড়ে বালি। কিন্তু করোনা ভাইরাসের করনে কর্মহীন মানুষের রোজা শেষে ঈদ আনন্দ তো দূরের কথা, সাহারি ইফতারী, শিশুদের খাবার খেয়ে বেঁছে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। যদিও বাংলাদেশ সরকারের প্রধান মন্ত্রীর উপহার হিসেবে গরীব, কর্মহীন মানুষদের ১০ করে চাউল দিচ্ছেন, শিশুদের পুষ্টিকর খাবার দিচ্ছেন, পাশাপাশি, পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহীনী, সমাজসেবক, রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, নানা ধরনের সিমিতি সংগঠন, রাজনৈতিকদল, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন ধরণের অবস্থাশালী মানুষ খাদ্য সহায়তায় নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও বাস্তব সত্য জনপ্রতিনিধি প্রভাবশালী দলের রাজৈনতিক নেতারা ত্রানের চাল, ডাল, তেল চুরিতে মহাব্যস্ত, তেল চুরি করে খাটের মধ্যে লুকিয়ে রেখেও রেহায় পাননি। চুরি করার অপরাধে জেল জরিমানা, দল থেকে বহিস্কারসহ অনেক ধরনের শাস্তি দেয়া হচ্ছে। চোরের পক্ষ নেয়ায় এক আওয়ামী লীগ নেতা বহিস্কার করা হয়েছে।
প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরেও থামছেনা ত্রাণ ও চাল চুরির ঘটনা। কিন্তু গোটা বিশ্ব আজ করোনা মরণ ছোবলে ক্ষত বিক্ষত, লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে, কোটি কোটি মানুষ আক্রান্ত, বাংলদেশও করোনা হানা দিয়েছে দেশের এখন ৫০ শতাংশ মানুষের সামনের ঈদে একটি জামা, একখানা লুঙ্গি এবং এক জোড়া নতুন জুতা কেনার সামর্থ্য থাকবে না করোনার করনে। তবুও তারা ঈদ করবে। ধনীদের ঈদের আনন্দের ঢেউয়ের সঙ্গে নিজেকে ভাসিয়ে ঈদ আনন্দ করবে। আল্লাহ যদি আমাদের ক্ষমা করেন, করোনা ভাইরাস থেকে আমাদের মুক্তিদেন তবে ঈদের আনন্দ গরীব ধনী পরিবারের সদস্যগণ উপভোগ করতে পারবেন। কেউ কেউ ঈদ আনন্দ করতে স্বপরিবারে বিদেশ ভ্রমণ করবেন। রমজান শেষে এই ঈদুল ফিতরে ছুটিতে সকলে দল বেঁধে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া বেড়াতে যাবেন তারা। অনেক ধনী পরিবারের এইটি নিয়মিত ভ্রমণ পরিকল্পনা থাকে। অনেক ধার্মিক পরিবার রমজানের শেষে ওমরা করার জন্য মক্কা-মদিনা সফরে যান। অনেকে একাকী বা অনেকে সপরিবারে। এদের সংখ্যা খুবই কম। কারণ ধর্মের রীতি-নীতি মানি আমরা অনেকটা দায়সারাভাবে, যাকে বলে ‘আমল আমাদের খুবই সীমিত। তাই অনেক ক্ষেত্রে আমাদের নামাজ পড়া উঠাবসা ছাড়া আর কিছুই হয় না।’ আর যদি করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন অব্যাহত থাকে জুমা, তারাবির নামাজের মত ঘরে বসে ঈদের নামাজও একা একা আদায় করতে হবে।
করোনা ও রোজাকে পুঁজি করে দেশের ব্যবসায়ীগণ দফায় দফায় বাড়াচ্ছেন জিনিস পত্রের দাম। আমাদের মুসলমান সমাজে ধর্মীয় বড় দুইটি উৎসব রয়েছে। একটি হচ্ছে রমজান শেষে ঈদ অর্থাৎ ঈদুল ফিতর। আর অপরটি হচ্ছে রমজানের আড়াই মাস পর ঈদুল আযহা। কোরবানির ঈদ। এই দুই ঈদে মুসলমান সমাজে ব্যবসায়িক কর্মকান্ড- বেশ প্রসারিত। রমজানের ঈদের বাণিজ্য প্রকৃত অর্থে শুরু হয় রমজান শুরুর দুই মাস পূর্ব থেকে। দেশের সকল ব্যবসায়ী রমজান শুরুর বেশ কয়েক মাস পূর্ব থেকে রমজানের বাণিজ্যের প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে।
আল্লাহপাক ব্যবসাকে ‘হালাল’ করেছেন আর সুদকে করেছেন ‘হারাম’। ব্যবসাকে ইসলাম ধর্মে উত্তম কাজ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমাদের প্রিয় নবী ব্যবসা করেছেন। তাই ব্যবসা এক অর্থে সুন্নত। কিন্তু আজকের সমাজে ব্যবসা নানা দিকে সম্প্রসারিত। প্রথমত, ব্যবসা অভ্যন্তরীণ, অপরটি হচ্ছে বিদেশে। বিদেশের ব্যবসাকে আমরা আমদানি-রপ্তানি এই দুই শব্দে চিহ্নিত করি। আর অভ্যন্তরীণ ব্যবসা দুই রকম। প্রথমত, ট্রেডিং ব্যবসা, দ্বিতীয়ত, উৎপাদনমুখী ব্যবসা। রমজানে অভ্যন্তরীণ, আমদানি-রপ্তানি, উৎপাদনমুখী সকল ব্যবসাই পরিচালিত হয়। আমরা সকল ধরনের ব্যবসায়ীগণ ঈদকে সামনে রেখে ব্যবসার ছক এঁকে থাকি।
আমদানি বাণিজ্য : রমজান আসার পূর্ব থেকে আমদানিকারকগণ রমজানে নিত্যপণ্যসহ সকল পণ্যের সংগ্রহশালা গড়ে তোলেন। বিশেষ করে আমাদের ঢাকা শহরের মৌলভীবাজার, চকবাজার ও চট্টগ্রাম শহরের খাতুনগঞ্জ এলাকার ব্যবসায়ীগণ প্রচুর আমদানির পরিকল্পনা করে থাকেন। বিশেষ করে ছোলা, বাদাম, কিসমিস, খেজুর, গম ও নিত্যপ্রয়োজনীয় মসলা, চিনি প্রভৃতি প্রচুর পরিমাণ আমদানি করে থাকেন। তাদের এই আমদানির ফলে ব্যাংকসমূহ বাণিজ্য করে নিজেদের অর্থ বিনিয়োগ করে। এলসি খোলার সময় ইন্স্যুরেন্স করে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো কভার নোট ইস্যু করে বাণিজ্য করে থাকে। আমদানির কর সিএন্ডএফ, ট্রান্সপোর্ট, রেলওয়ে মালামাল আনা-নেওয়া করে অন্য রকম বাণিজ্য করে থাকে। তাতে দেখা যায়, দিনমজুর থেকে শুরু করে সমাজের বিত্তবান সকল ব্যক্তি ঈদবাণিজ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন। যখন চাহিদা বাড়ে তখনই ব্যবসায়ীগন নিজে খেয়াল খুশি মত দাম বাড়ান।
ইফতার বাণিজ্যে এবার করোনা কারণে ভাটা: রমজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ঢাকাসহ সকল শহরে ইফতার বাণিজ্য বেশ রমরমা। ঢাকা শহরে চকবাজার, বেইলিরোডসহ সম্ভ্রান্ত এলাকাসমূহে দোকানিরা নানা ইফতারি তৈরি করে সাজিয়ে বসেন বিক্রি করার জন্য। বেশ বিক্রি হয়। ইফতারের সময় আমাদের দেশের মানুষের প্রিয় জিনিস হচ্ছে ছোলা, মুড়ি, জিলাপি, বেগুনি, ছমুচা, চিকেন ফ্রাই, নানা রকমের কাবাব, দইবড়া, হালিম, সেমাই, খেজুর, খোরমা প্রভৃতি। ইফতারের শুরুতে নানা রকম শরবত থাকা চাই। লেবু শরবত, বোরহানি, রুহ আফজা প্রভৃতি ইফতারের টেবিলে সাজিয়ে আমরা ইফতার করতে বসি। শহরের বড় বড় মসজিদসমূহে ইফতারির আয়োজন হয়। প্রতিদিন বায়তুল মোকাররম মসজিদে দুই থেকে তিন হাজার মুসল্লির ইফতারির আয়োজন করা হয়ে থাকে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন তাদের নিজেদের অর্থ থেকেও দাতাদের দান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার রোজাদার ব্যক্তিদের ইফতার করিয়ে থাকেন। ইয়াতিমখানা মসজিদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল জনপ্রতিনিধি, সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ মানুষেকে ইফতারী করার ব্যবস্থা করে থাকেন।
কারণ আমরা বিশ্বাস করি, একজন রোজাদারকে ইফতার করালে একটি রোজার সওয়াব পাওয়া যায়। সউদি আরবেও ইফতারির সময় প্রচুর ইফতারি দানশীল ব্যক্তিগণ মক্কা ও মদীনা শরিফের মসজিদ সমূহে বিলি করে থাকেন। সেখানে অনেক সময় প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায় কে কাকে কত বেশি ইফতার করাতে পারবেন।
আমাদের দেশ ছাড়াও পৃথিবীর সকল অমুসলিম দেশে মুসলমানেরা মসজিদে ইফতারির আয়োজন করে থাকে।
কোন কোন মসজিদে রুটিন করে পালা ক্রমে দানশীল মসুলমানগণও ইফতারির ব্যবস্থা করে থাকেন। অস্ট্রেলিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রে বিভিন্ন মসজিদে পালাক্রমে মসজিদে ইফতারির ব্যবস্থা করতে অমুসলমান ভাইবোনদেরও দেখা যায়। করোনা ভাইরাসের কারণে লকডাউন থাকায় এগুলি করা সম্ভব হবে না।
নতুন জামাকাপড় ও জুতা বাণিজ্য : রমজানের ঈদে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় নতুন পাঞ্জাবি-পায়জামা, জামা, প্যান্ট, শাড়ি, লেহেঙ্গা, থ্রিপিসসহ জুতা-মোজার বাণিজ্য। শহরের অলিগলিতে সকল দোকানে নতুন জামাকাপড়ের সমাহার। ধনী ব্যক্তিদের তো কথা নেই কমপক্ষে একসেট নতুন পাঞ্জাবি-পায়জামা, শার্ট ক্রয় করা। কোটি কোটি মানুষ নিজের পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন জামা কিনে থাকেন। রমজানে এক মাসের বাণিজ্য বলতে গেলে বাকি এগারো মাসের বাণিজ্য করে নেয় আমাদের দেশের ব্যবসায়ীগণ। রমজান যত শেষ হতে থাকে ততই জামাকাপড়ের দাম বাড়তে থাকে। লাভের পরিমাণও বাড়তে থাকে। জামাকাপড় ছাড়া জুতা-মোজার বাণিজ্যও বেশ ভালো। নতুন একটি টুপি ক্রয় করতে হবে। সকলে অন্তত একটি নতুন টুপি, আতর ঈদের দিনের জন্য কিনে থাকেন। যারা ধনী ব্যক্তি তারা দামি দামি কসমেটিক দামি দোকান থেকে ক্রয় করে থাকেন। অনেকে ঈদের বাজার করার জন্য ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর ও কলকাতা চলে যান। নিজেদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বিদেশ থেকে ঈদের পোশাক ক্রয় করে নিয়ে আসেন। এবার সবাই লকডাউনে কারণে সবাই গৃহবন্ধি।
স্বর্ণ, রুপা, ডায়মন্ড বাণিজ্য : রমজানের ঈদে সবচেয়ে বড় বাণিজ্য হয়ে থাকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের। স্বর্ণ, রুপা, ডায়মন্ড প্রভৃতি দোকানসমূহে প্রতিদিন ভিড় লেগেই থাকে। করোনার কারণে এবার সেটা দেখা যাবেনা।
যাতায়াত যোগাযোগ বাণিজ্য : করোনার লগডাউনের সময় কয়েকগুণ বেশী ভাড়া নিয়ে মাইক্রো, পুন্যবাহী ট্রাক, ট্রাকে মাছের ড্রামে বসে আসছেন। রমজানের শেষে শহরের মানুষের গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার এক হিড়িক পড়ে যায়। বড় বড় শহরগুলো একেবারে খালি হয়ে যায়। লক্ষ লক্ষ মানুষ ঢাকা, চট্টগ্রাম শহর বড় বড় জেলা শহর থেকে নিজের গ্রামের বাড়িতে পরিবারসহ বেড়াতে যায়। পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্য বিশালসংখ্যক মানুষ গ্রামে চলে যায়। গ্রামে যাওয়ার জন্য কেউ নিজস্ব গাড়ি, কেউ বা ভাড়া গাড়ির ব্যবস্থা করেন। অবশিষ্ট জনগণ বাসে, ট্রেনে, স্টিমার ও লঞ্চে করে গ্রামের গন্তব্যে যাতায়াত করে। তাতে কোটি কোটি টাকার আর্থিক লেনদেন হয়। সারাদেশে রেলওয়ে বিশেষ ট্রেন সার্ভিস দিয়ে যাত্রীদের সেবা দেয়ার মাধ্যমে বাণিজ্য করে। ঢাকা, চট্টগ্রাম শহর থেকে শত শত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস গ্রামে গ্রামে মানুষদের পৌঁছে দেয়। তাতে এই সকল বাস মালিকগণ কোটি কোটি টাকা যাতায়াত বাণিজ্য করে থাকেন। সারা বছর যা আয় করে, এক ঈদের সময় কয়েকগুণ বেশি আয় করে থাকেন। আবার অভ্যন্তরীণ বিমান ও এই সময় বাণিজ্যিক রুটে ব্যবহৃত হয়। যাত্রী যাতায়াত বেশ বেড়ে যায়। অভ্যন্তরীণ বিমানগুলো বেশ রমরমা ব্যবসা করার সুযোগ পায়। সেটা এবার দেখা যাবে না হয়তো।
ব্যবসায় নেই কোন ছাড় : পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ সময় বিশেষ ছাড় দিয়ে বাণিজ্য করে। কিন্তু আমাদের দেশে ছাড় মাত্রই নেই। বরং করোনা, মহামারিতে রোজা ও ঈদের সময় ব্যবসায়ী ও দোকানিরা দ্বিগুণ/ তিনগুণ মূল্যে পণ্য বিক্রি করে লাভ করার চেষ্টা করেন। মানুষও প্রয়োজনে দ্বিগুণ/ তিনগুণ মূল্য দিয়ে পণ্য কিনে নিজেদের ঈদের আনন্দে ভাগাভাগি করে নেয়। অর্থ সম্পদশালী ব্যক্তিগণ পণ্যের মূল্যের দিকে না দেখে নিজেদের প্রয়োজনের তাগিদে যে কোনো মূল্যে পণ্য কিনতে দ্বিধা করেন না।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ২৫ ডিসেম্বর খ্রিস্টানদের বড় দিন উপলক্ষে বেশ ছাড় দিয়ে বাণিজ্য করতে দেখা যায়। ক কিন্তু আমাদের দেশে মুসলমান বা অমুসলমান যাই হোক না কেন, কোন ছাড় দিয়ে বাণিজ্য করতে দেখি না। কারণ আমাদের মানসিক মূল্যবোধ কেন যেন হারিয়ে গেছে। আমরা শুধু টাকা উপার্জন করতে চাই। অর্থ আর অর্থ আয় করা যেন আমাদের নেশা হয়ে পড়েছে। বিবেক, সত্য-মিথ্যা কোন কিছুই আমাদেরকে দৃষ্টিচক্ষু খুলতে সাহায্য করে না। আমরা কেমন যেন বিবেকহীন হয়ে পড়েছি। অথচ রমজান আমাদের কী শিক্ষা দেয়। রমজান আমাদের শিক্ষা দেয় ধৈর্য, সততা, নিষ্ঠা, পরোপকার ও সততা। কিন্তু ব্যক্তি জীবনে আমরা এই সকল গুণগুলো অর্জন করার জন্য মোটেই চেষ্টা করি না। মনে হয় এই জীবনই সব। এ জীবন পরে আর কোন জীবন নাই। কিন্তু মুসলমান তো বিশ্বাস করে আরও একটি বড় জীবন আছে। সেই জীবনে এ জীবনের সকল কর্মের হিসাব দিতে হবে। ভালোমন্দের হিসাব নেওয়া হবে। মন্দের শাস্তি, ভালো কাজের পুরস্কার পরকালে পাওয়া যাবে। এই বিশ্বাসে আমাদেরকে নামাজ, রোজায় শিক্ষা দেয়। কিন্তু আমরা আমল করতে দ্বিধা করছি।
রমজানের শিক্ষা নৈতিকতা, সততা সকল কিছুই ধূলাই লুণ্ঠিত।
জাকাত, ফিতরা : রমজান মাসে আমরা মুসলমানগণ জাকাত দেয়ার জন্য হিসাব করি। তবে সকল মুসলমান প্রকৃত জাকাতের হিসাব করে জাকাত আদায় করেন না। কিছুকিছু মুসলিম ব্যক্তি পুরোপুরি হিসাব করে জাকাত আদায় করেন। তবে সেই সংখ্যা খুবই সামান্য। অনেকে লামসাম একটা টাকার পরিমাণ জাকাত দিয়ে থাকে। এটা ইসলাস সমর্থন করে না। অনেকে শাড়ি, লুঙ্গি ক্রয় করে এলাকার গরিব লোকদের মধ্যে বিলি করেন।
ভেজাল-নকলে বেহাল অবস্থা : আমাদের প্রতিটি দ্রব্যে ভেজাল দেয়ার একটি মানসিকতা তৈরি হয়েছে। খাদ্যে ভেজাল দেয়া, মাপে কম দেয়া যেন আমাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে অতিরিক্ত কীটনাশক দিয়ে খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে সকল সবজি পর্যন্ত না খাওয়ার তালিকায় গিয়ে পৌঁছেছে। এসব নানা জটিল রোগে আমরা আক্রান্ত হচ্ছি। মাছ, তরকারি, ফলমুল সকল কিছুতে ভেজাল ও ক্ষতিকর কীটনাশক দেয়া। বাজার নিয়ন্ত্রণের সংস্থাগুলোও নিষ্ক্রিয়। ভেজাল বন্ধ করা, অতিরিক্ত কীটনাশক দেয়া বন্ধ করার যেন কেউ নেই। মাসে মাসে ভেজাল মেশানোর অভিযোগ কিছু শান্তি দেখা যায়। কিন্তু ভেজাল তো বন্ধ হচ্ছে না। অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করার জন্য সরকারের উদ্যোগ খুবই সামান্য। এই কারণে আমাদের স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় অনেক বেশি। স্বাস্থ্য খাতের ব্যয় অনেক কমে যাবে যদি আমরা ভেজাল খাদ্য ও অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার বন্ধ করতে পারি।
নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সততার অভাব : রমজান আমাদের কী শিক্ষা দেয়, তা আমরা যেন একেবারে ভুলে গিয়েছি। রমজান আমাদের শিক্ষা দেয় ধৈর্য, সততা, নৈতিকতা, সততা ও মানসিক মূল্যবোধ। কিন্তু আমরা তা চর্চা করি না। মূল্যবোধ ও নৈতিকতা আমাদের জীবন থেকে একেবারে যেন বিদায় হয়ে গিয়েছে। এটা তো হওয়ার নয়। আমি প্রতি মুহূর্তে রমজানে যে শিক্ষা তা নিজের জীবনে একটিবারও চর্চা করার ইচ্ছে করি না। আনারসে অতিরিক্ত কীটনাশক দিয়ে লাভে বাজারে বিক্রি করি। নিজের ছেলেকে বলি আনারস খাবে না। অথচ বাজারে বিক্রি করে লাভ করছি, এ যে অন্যায়-অবিচার তা বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করছি না। এই তো আমাদের সমাজের চিত্র। এই চিত্রের পরিবর্তন না করতে পারলে রমজান আমাদের কোনো শিক্ষাই দিল না। আমরা মানুষ নামের অমানুষ হয়ে গেলাম। নৈতিকতা, সততা, মূল্যবোধ ও সত্যকে সত্য বলার অভ্যাস, দুর্নীতিকে না বলি।
লেখক: মোঃ হায়দার আলী সভাপতি জাতীয় সংবাদিক সংস্থা গোদাগাড়ী উপজেলা শাখা, রাজশাহী