মরণঘাতি করোনা ভাইরাসের চরম ঝুঁকি নিয়ে মাঠে কাজ করছে লালমনিরহাটের মাঠ প্রশাসন, পুলিশ ও ত্রাণ শাখার কর্মকর্তা কর্মচারীরা। পিপিই ছাড়াই সকলের মাঝে সেবা পৌছে দিতে নিজেরাই ভাইরাসের বাহক হতে বসেছেন।
জানা গেছে, বিশ্বজুড়ে চরম আতংকের নাম প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস ছড়িয়েছে সারাবিশ্বে। যার মৃত্যু দেড় লাখ অতিক্রম করেছে। দেশেও মৃত্যু সংখ্যা দেড়শত ছাড়িয়ে গেছে। মানুষের মাঝে দিনদিন আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। দেশের চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা ব্যাক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম(পিপিই) ছাড়া সাধারন রোগীর সেবাকে অনিরাপদ ভেবে পিপিই নিয়েছেন। পিপিই পড়েই সাধারন রোগীর সেবা দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। সন্দেহজনক রোগীর নমুনা নিতে চিকিৎসক টিম পিপিই পড়লেও পাশে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তা দেয়া পুলিশ সদস্য রয়েছেন শুধুমাত্র সাধারন মাস্ক পড়ে। কোন কোন পুলিশ সদস্য পড়ছেন সাধারন রেইনকোর্ট। নিরাপত্তহীনতায় সেবা দিতে গিয়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এরইমধ্যে দেশের একটি থানা লকডাউন ঘোষনা করা হয়েছে। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে আক্রান্তের ঝুঁকি।
ঘরে অবরুদ্ধ থাকা মানুষদের ঘরে খাদ্য পৌছে দেয়া ত্রাণ শাখার কর্মীদের সরকারী ভাবে একটি সাধারন মাস্কও সরবরাহ করা হয়নি। তারা নিজেদের উদ্যোগে মাস্ক পড়েই সেবা দিচ্ছেন। খাদ্য বিভাগের গুদাম কর্মকর্তাদেরও একই অবস্থা। প্রতিনিয়ত গুদাম থেকে খাদ্য শস্য সরবরাহ দিচ্ছেন কোন রকম নিরাপত্তা ছাড়াই। সেখানেও জমায়েত হচ্ছেন অর্ধশত শ্রমিক ও কর্মচারী। তারাও নিরাপত্তাহীনতায় করোনা ঝুঁকি নিয়ে চলছেন বলে দাবি এসব বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীর। এ ঝুঁকি থেকে বাদ পড়েননি মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তরাও। লকডাউনের কারণে তাদের কাজের পরিধিও বেড়ে গেছে। ঝুঁকিপুর্ন হলেও মাঠ পর্যায়ে সরকারী নির্দেশ বাস্তবায়নে যেতে হচ্ছে তাদের।
এ সংকটময় মুহুর্তে মাঠ প্রশাসন, পুলিশ, ত্রাণ শাখা ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাসহ যারা জরুরী সেবা দিচ্ছেন তারাও সর্বস্থরের মানুষের সাথে মিশে যাচ্ছেন পিপিই ছাড়াই। ফলে সংক্রামন ভয়াবহ আকারে ছড়ানোর আশংকায় শ্বঙ্কিত তারা। লালমনিরহাটে দুইজন করোনা রোগী শনাক্তে আতঙ্ক আরো বেড়েছে। এসব জরুরী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী আক্রান্ত হয়ে আইসলোশনে আছেন। কয়েকজন মৃত্যুর মিছিলে সামিল হয়েছেন। এরপরও নেই সতর্কতা।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক ত্রাণ শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, পিপিই তো দুরের কথা মাস্ক বা গ্লোভস পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়নি। জীবন বাঁচাতে নিজেরাই মাস্ক সংগ্রহ করে যথাসম্ভব সাবধানতার সাথে মানুষের হাতে ত্রাণ পৌছে দিচ্ছি। ত্রাণ তো সুস্থ্য-অসুস্থ্য ও লকডাউন বাসার সদস্যদেরও দিতে হচ্ছে। যা চরম অনিরাপদ। নিজের জন্যই বলছি না, যারা এ নিরাপত্তাহীন হাতের ত্রাণ নিচ্ছেন তারা কতটুকু নিরাপদ?। ইতোমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ত্রাণ শাখার একজন কর্মচারীর মৃত্যু ও দুই কর্মকর্তা সপরিবারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন। তাই দ্রুত পিপিই সরবরাহ করার আহবান জানান তিনি।
পুলিশের একজন পরিদর্শক(ওসি) বলেন, চিকিৎসকরা পিপিই পড়ে শুধুমাত্র রোগীর সেবা দিচ্ছেন। পুলিশ সদস্যরা সেবা দিচ্ছেন সর্বস্থরের জনগনকে। তারা জানে না কে আক্রান্ত। লকডাউন পরিবারের কাছে যেতে হচ্ছে পুলিশকে। সুস্থ্য-অসুস্থ্য সকল সেবা গ্রহনকারী প্রতিনিয়ত থানায় আসছেন। ত্রাণ বিতরন, জনসচেতনতা, সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখা, কোয়ারেন্টিন ও লকডাউন নিশ্চিত, মরদেহ দাফন ও আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখাসহ সকল কাজে পুলিশ সম্পৃক্ত। মাস্ক ও কখনো রেইনকোর্ট পড়ে এ ঝুঁকিপুর্ন কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ছে পুলিশ। সেই জরুরী বাহিনীর সদস্যরা যদি আক্রান্ত হয়ে লকডাউনে যান। তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরমভাবে ব্যাহত হবে। এ কারণে আপাতত থানা পুলিশকে পৃথক পৃথক টিম করা হয়েছে। এক একটি টিম যেন কোয়ারেন্টিন। যে টিম আক্রান্ত হবে। সেটাই কোয়ারেন্টিনে যাবে। বাকীটা দায়িত্বে। তাই কোয়ারেন্টিন হওয়ার আগেই প্রতিটি সদস্যের জন্য পর্যাপ্ত পিপিই সরবরাহ করার দাবি জানান তিনি।
লালমনিরহাট পুলিশ সুপার আবিদা সুলতানা বলেন, আক্রান্তের খুব কাছে যাওয়ার মত পরিস্থিতির জন্য সামান্যতম পিপিই দেয়া আছে। ৮শতাধিক পুলিশ সদস্যের জন্য মাত্র একশত পিপিই তৈরী করা হয়েছে। তবে সকল সদস্যকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া হয়েছে এবং পিপিই দেয়া প্রয়োজন হলেও সংকটের কারণে সবাইকে দেয়া সম্ভব হয়নি। আপাতত তাদেরকে প্রয়োজনে রেইনকোর্ট ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। পিপিই চাওয়া হচ্ছে বরাদ্ধ এলে সবাইকে দেয়া হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, মাঠ প্রশাসন, ত্রাণ ও খাদ্য বিভাগসহ সকল জরুরী সেবা প্রদানকারীরা শুধু মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে সেবা দিচ্ছেন। প্রয়োজন হলেও সরবরাহ না থাকায় সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরকার সরবরাহ দিলে পৌছে দেয়া হবে। তবে কাজের পরিধি অনুযায়ী পিপিই প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।