বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় পাঁকা ধান কাঁটার জন্য ‘পরবাসি’ (বহিরাগত নির্দিষ্ট লোক) পাওয়া যাচ্ছে না। করোনা ভাইরাস দুর্যোগের কারণে যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় মোংলা, রামপালসহ অন্যান্য এলাকা হতে ‘পরবাসি’ ধান কাটতে আসতে পারছে না। প্রতিদিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ও ঝড়ো বাতাস বইছে। এই অবস্থায় দুশ্চিন্তাগ্রস্থ কৃষকেরা ব্যাপক অর্থনৈতিক ক্ষতিসহ আরো দেনাগ্রস্থ হয়ে পড়ার আশংকায় রয়েছেন। কাঁদছেন তারা। গত বছর ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এবার অনেক জমি বোরো ধান চাষে অনাবাদি রয়েছে। তবুও যে জমি আবাদ হয়েছে সেখানে হয়েছে ধানের বাম্পার ফলন। এই ফলন এখন ঘরে ওঠানো দায়!
চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার জানান, ‘বাইরের এলাকা হতে ধান কাটতে আসা শতাধিক লোকের তালিকা আমাদের কাছে আছে। তারা যদি চিতলমারীতে ধান কাটতে আসতে চান তো তাদের কৃষি কার্যালয়ের প্রত্যায়নপত্র নিয়ে আসতে পারবেন। করোনার বিধিনিষেধ মেনে তাদের চলতে হবে। এছাড়া, চিতলমারী উপজেলার কোন কৃষক ধান কাঁটার প্রয়োজনীয় লোকবলসহ কোন সমস্যায় পড়লে আমাদের জানালে সহযোগিতা করা হবে।’ তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে ধান কাঁটার জন্য ২৯টি ছোট মেশিন কৃষকদের দেয়া হয়েছে। আরো সাতটি বড় মেশিনের চাহিদা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।
এব্যপারে আড়-য়াবর্ণী গ্রামের কৃষক মো: পান্না মুন্সী জানান, এবছর বোরোর আবাদ ভালো হয়েছে; কিন্তু করোনার আতঙ্কে বাহির থেকে কিশান না আসায় তা কাটা থেকে শুরু করে মাড়াই পর্যন্ত দারুন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
চরবানিয়ারী ইউনিয়নের শ্যামপাড়া গ্রামের কৃষক বিভাষ মন্ডল বলেন, ‘কান্দেও পরবাসি পাচ্ছি নে! শেষ পর্যন্ত বউ-ছল-মাইয়ে নিয়ে যাইয়ে ধান কটতি হবে। ঠিকঠাক ধান ঘরে তুলতি না পারলি দেনায় পথে বসতি হবে!’ তিনি আরো বলেন,‘গতবার দাম পাইনি, তাই এবার আমার আড়াই বিঘা চাষযোগ্য জমির মধ্যে এক বিঘা জমি বোরো ধান লাগাইনি (প্রতি বিঘায় ৬২ শতক)। এলাকার প্রায় ৩৫ থেকে ৩৭ ভাগ জমি অনাবাদি রইছে। গতবার ন্যায্য দাম পালি এবারো সব জমি চাষ করতাম। ’
হিজলা ইউনিয়নের পাঙ্গাশিয়া গ্রামের সত্যেন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, তিনি এবার সাড়ে ১০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করেছেন। আশা করছেন প্রায় ৮০ মেট্্িরকটন ধান উৎপাদন হবে। উপজেলা কৃষি অফিসের লোকবলের সহায়তায় তিনি ধান কাটবেন বলে আশা করছেন।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ২৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ কম হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বোরো আবাদ হয়েছিল ১১ হাজার ৭৩০ হেক্টর জমিতে এবং ফলন হয়েছিল ৮৯ হাজার ৯৯৩ মেট্্িরকটন ধান। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে বোরো আবাদ হয় ১১ হাজার ৪৭০ হেক্টর এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৮৫ হাজার ৬১৫ মেট্রিকটন। এর মধ্যে উফশী জাতের ধান রয়েছে নয় প্রকার এবং হাইব্রিড জাতের ধান রয়েছে ৪৩ প্রকার।