নেত্রকোনার দুর্গাপুরে গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়ন ভূমিদস্যু সুজন মিয়া ও তার সহোদর ২০জন ভাইদের অত্যাচারে ৪টি পরিবার এখন গৃহছাড়া হয়ে দিনাতিপাত করার অভিযোগ রয়েছে ।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গাঁওকান্দিয়া ইউনিয়নের শ্রীপুর গ্রামের মৃত: রহমত আলীর পুত্র সুজন মিয়া (৪৫) ও অজ্ঞাত নামীয় ১৯ জন সহোদর মিলে ঐ গ্রামের নিরীহ সাধারণ মানুষের জোরপূর্বক জমি দখলের মহোৎসব চালিয়ে আসছে। ভুমি দস্যুতা, মারপিট,চাঁদাবাজি,সমাজে নানা ধরনের অপ কর্মের সাথে ঐ সহোদরা জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এদের ভূমি দস্যু,মারপিট,ভয়ভীতি,প্রাণ নাশের হুমকী, অপহরণ,চাঁদাবাজি,ষাঁড়ের লড়াই দিয়ে কোটি কোটি টাকার জুয়ার আসর জমিয়ে আসছে। সহোদর ভাইদের অত্যাচারে শ্রীপুর গ্রামের মৃত: কেনু মুন্সির পুত্র ইন্তাজ আলী,আরজ আলী, সিরাজ আলী ও মোক্তার উদ্দিন এর পুত্র মোস্তাক মিয়া এখন ঢাকায় বসবাস করছে। নুন আনতে পান্তা ফোরায় এসব পরিবারে বইছে কস্টের চাপ। আর নানা যন্ত্রনার কথাই শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মোবাইলফোনে বলছিলেন ঢাকা থেকে ফেরত আসা ভুক্তভোগী ইন্তাজ আলী।
অভিযোগের লিখিত বিবরণে জানা গেছে, শ্রীপুর গ্রামের রহমত আলী ব্যক্তিগত জীবনে পাঁচটি বিবাহ করেণ। ঐ পাঁচটি সংসারে ১৯জন পুত্র ও ১২জন কন্যা সন্তান রয়েছে। আর এ জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বড় পুত্র সুজন ও সহোদররা মিলে ঐ এলাকা সহ আশপাশের সবক’টি গ্রামে ভুমি দখল,সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ,অন্যের জমিতে জোর পূর্বক বাড়ি নির্মাণ,নারী নির্যাতন,চাঁদাবাজির মতো ঘটনা রীতিমতো ঘটিয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে কেহ প্রতিবাদ করতে চাইলে নানা ধরণের হুমকী-দমকী এমনকি প্রাণ নাশের ভয়ভীতি দেখিয়ে থাকে ওরা। দলীয় কোন পদ-পদবী না থাকলে সুজনের এত ক্ষমতার উৎস কোথায় জানতে চায় সচেতন মহল। ২০ ভাইয়ের দাপটে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে বেড়ান সে। কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুুখ খুললে, জোরপূর্বক জমি দখল করে বসেন এই সুজন। জমি দখলের বিষয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ পাহাড়সম। অর্থের নেশায় কাউকেই তোয়াক্কা করছেন না সে। থানা পুলিশের ভয়-ভীতি দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে নানা ধরণের হয়রানী ও নির্বিচারে জমি দখল করে যাচ্ছে সুজন মিয়া গংরা। সুজন মিয়ার জমি দখলের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ঝানজাইল বাজারের পশ্চিমে তাতিরকোনা গ্রামের ৫শতক ভূমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগে মোঃ সালাম বাদী হয়ে দুর্গাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে। শ্রীপুর গ্রামের মোঃ আবুল হাশেম এর ১ একর ৯২ শতাংশ ভূমি জোরপূর্বক বেদখল দেয়ার অভিযোগে এপ্রিল মাসের ২০ তারিখে ইউঃ যুবলীগের আহবায়ক মিলন মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্গাপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করে। অভিযোগ দাখিলের পর থেকেই বাদীকে বিভিন্ন ধরণের গালি গালাজ সহ ভয় ভীতি প্রদর্শণ করে আসছে। ১ একর ৯২ শতাংশ ভূমিতে রোপনকৃত মরিচ উত্তোলন করতে গেলে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মারপিট করেত আসে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এ বিষয় জানিয়েও কোন ধরণের প্রতিকার মেলেনি। ২০১২ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি শ্রীপুর গ্রামের আরজ আলী জমি দখলের অভিযোগে সুজন সহ চার ভাইয়ের বিরুদ্ধে দুর্গাপুর থানায় একটি মামলা দাখিল করে। দুর্গাপুর থানার জিডি নং-১৪৫। ২০১৩ সালের ৫ই নভেম্বর লেটিরকান্দা পাগলবাড়ি শাহজাহান শাহ ওরফে প্রিন্স সুজন মিয়ার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে ১৪৩/৪৪৭/৩৮৫/৫০৬ দঃ বিঃ আইনে মামলা রুজু করে দুর্গাপুর থানার মামলা নং ০৬/১৫৯। ২০১৭ সালের ৩ এপ্রিল উত্তর শংকরপুর গ্রামের মোঃ আজিম উদ্দিন ওরফে কুবাদ সুজন মিয়ার বিরুদ্ধে চাঁদা দাবী,মারপিট,অপহরণ,প্রাণ নাশের হুমকী’র অভিযোগে একটি মামলা দাখিল করেন। মামলা নং দুর্গাপুর ০২/৫১। ২০১৯ সালের ২৫ ডিসেম্বর তাতিরকোনা গ্রামের মোঃ সালাম জমি দখলের অভিযোগে দুর্গাপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করে। ডায়েরী নং-১০৬৯। ২০২০ সালের ২০ মার্চ ১ একর ৯২ শতাংশ ভূমি জোরপূর্বক দখলের অভিযোগে শ্রীপুর গ্রামের আবুল হাশেম একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করে দুর্গাপুর থানায়। অসংখ্য অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সমাজে দাপটের নানা অপরাধ মূলক কার্যক্রম করে যাচ্ছে এই মিলন। তাঁর ঐ দাপটে এখনও জিম্মি আশ পাশ এলাকার অসংখ্য মানুষ। ওদের অনিয়মের বিষয়টি এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। তাঁদের এ অনিয়মের বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। বিস্তর অভিযোগের বিষয়ে সুজন মিয়ার নিকট জানতে চাইলে প্রতিনিধিকে বলেন, আমি কোন জমি দখলের সাথে জড়িত নই। প্রতিহিংসা মূলক আমার বিরুদ্ধে অনেকে মামলা করেছে তবে কোন মামলারই ভিত্তি নেই।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব প্রতিনিধিকে বলেন, সুজন মিয়া’র বিরুদ্ধে জমি দখলের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। সে দলের কোন সদস্য পদেও নেই তবে এসব অপরাধের বিচার নিয়ে কেউ পরিষদে আসেনা। সামাজিকভাবে এসব অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা উচিত।এ ব্যাপারে দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি)মোঃ মিজানুর রহমান প্রতিনিধিকে বলেন,আমি ওর বিরুদ্ধে বেশক’টি মৌখিক অভিযোগ শুনেছি। এরকম অপরাধের সাথে জড়িতদের কোন প্রকার ছাড় দেওয়া যায়না। অবশ্যই তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।