বিচ্ছিন্ন ভাবে কিছু কিছু নিচু শ্রেণির জমিতে আধাপাকা বোরো ধান কাটা শুরু হলেও আর মাত্র এক সপ্তাহ পরেই শুরু হবে ধান কাটা। আগাম জাতের ধান এরইমধ্যে পাকা শুরু হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে নওগাঁ জেলা ও উপজেলাগুলো লকডাউন থাকায় ধান কাটা শ্রমিকের তীব্র সংকট দেখা দিতে পারে এমনটি আশঙ্কা কৃষকের। এছাড়াও গত কয়েকদিন থেকে বইছে ঝড়ো হাওয়া সাথে বৃষ্টি। এর ফলে তলিয়ে যেতে পারে নিম্নাঞ্চলের ধান এমন শঙ্কায় নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার বোরো চাষিরা ধান ঘরে তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে উপজেলায় ২০ হাজার ৪’শ হেক্টর জমিতে ধান রোপণ করা হয়েছে। শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধান বেশ ভাল হয়েছে। বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার রোগ বালাই না থাকায় ধানের অনেক ভাল ফলন হবে এমনটাই আশা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের। এরইমধ্যে আগাম জাতের ধান পাকতে শুরু করেছে। হয়তো আগামী সপ্তাহের শেষের দিকে এসব ধান কাটা শুরু হবে। কিন্তু সারাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে একের পর এক জেলাগুলো লকডাউন হয়ে যাওয়ায় এবার বোরো ধান ঘরে তুলতে কৃষি শ্রমিক সংকটের আশঙ্কা করছেন বোরো চাষিরা।
উপজেলার কৃষকরা বলছেন, উপজেলা জুড়ে ধান কাটা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিশেষ করে পার্শবর্তী জেলা চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট হতে হাজার হাজার শ্রমিক এসে ধান কেটে ঘরে তুলে দেন কৃষকের। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সম্প্রতি নওগাঁ জেলাসহ উপজেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেছেন জেলা প্রশাসন। লকডাউনে কিভাবে আসবেন কৃষি শ্রমিকরা এ নিয়ে সর্বত্র চলছে আলোচনা। যদি শ্রমিকরা লকডাউনের মধ্যে সময় মতো আসতে না পারেন তা হলে কিভাবে ধান ঘরে উঠবে এমন দুশ্চিন্তাই ঘুম নেই কৃষকের চোখে।
উপজেলার নিয়ামতপুর সদর ইউনিয়নের মায়ামারী গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আমন আবাদে ধান পাকার পরেও ধান কাটতে হাতে কিছু সময় পাওয়া যায়। কিন্তু বোরো মৌওসুমে নানান রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকে। ফলে ধান পাকার সঙ্গে সঙ্গে কেটে ঘরে তুলতে ব্যন্ত হয়ে পড়তে হয়।
বাহাদুরপুর ইউনিয়নের চকমনসুর গ্রামের বোরোচাষি হামিদুর রহমান বলেন, কয়েক বছর ধরে এমনিতে ধানের আবাদে নানা কারণে লোকসান গুনতে হয়েছে। এ মৌওসুমেও যদি শ্রমিক সংকটে সময় মতো ধান ঘরে তোলা না যায় তাহলে ব্যাপক লোকসানের কবলে পড়তে হবে। তাই সময় থাকতেই ধান ঘরে তুলতে কৃষিশ্রমিকদের অবাধ চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশি¬ষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
এ ব্যাপারে নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমির আব্দুল্লাহ মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, যে উপজেলা থেকে কৃষি শ্রমিকরা নিয়ামতপুরে আসবেন তারা সে উপজেলার কৃষি অফিসের প্রত্যয়নসহ সংশ্লিষ্ট উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্যসনদ আনবেন এবং সে সনদ নিয়ামতপুর কৃষি অফিসে দেখালে মিলবে ধান কাঁটার অনুমতি। তাছাড়াও কৃষকদের জন্য উপজেলার ৫টি কম মাইন্ড হারবেস্টরের (সরকারী ভূর্তকী দেওয়া) মাধ্যমেও ধান কাটতে নিয়ামতপুর কৃষি অফিস সহযোগীতা করবে।