করোনাভাইরাসের সংকটময় মুহূর্তে নড়াইল সদর উপজেলার বাগডাঙ্গা এলাকায় ধানকাটা কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের উদ্বোধন করা হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে ধানকাটা এ মেশিনের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম (বার)।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের ৫০% ভতূক্তির মাধ্যমে প্রায় ১৫ লাখ টাকায় গত ২৮ এপ্রিল মেশিনটি কিনেছেন নড়াইলের হবখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম চঞ্চল।
এ ব্যাপারে সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বিশ্বাস জানান, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় একরপ্রতি ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা খরচ হলেও এই মেশিন দিয়ে ধানকাটাসহ অন্যান্য প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে একরপ্রতি খরচ হবে প্রায় ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। আর এক একর জমির ধান কাটতে সময় লাগছে একঘণ্টা। এ ছাড়া ঘণ্টায় তেল খরচ ৬ থেকে ৭ লিটার। করোনাভাইরাসের কঠিন সময়ে কৃষকদের কষ্ট লাগবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সারাদেশের কৃষকদের জন্য এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
মেশিনটির মালিক ইউপি চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম চঞ্চল বলেন, গত বুধবার (২৯ এপ্রিল) এ মেশিন দিয়ে আমাদের এলাকায় পরীক্ষামূলক প্রায় ৬ শতক জমির ধান কেটেছি। এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ধানকাটা শুরু হলো। এ মেশিন দিয়ে ধানকাটায় কৃষকদের চাহিদা রয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিনের সহধর্মিনী নাহিদা আক্তার চৌধুরী সুমি, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা সেলিম, সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বিশ্বাস, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি চঞ্চল শাহরিয়ার মিম, সাধারণ সম্পাদক রকিবুজ্জামান পলাশ, এসএসসি ফলপরীক্ষার্থী ফাইজুম সালেহীন সামির, শিক্ষার্থী সামিহা মুবাশ্বিরা রোজ প্রমুখ।
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইলের উপ-পরিচালক চিন্ময় রায় বলেন, গত ২৮ এপ্রিল ধানকাটার কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনটি আমরা পেয়েছি। এটির মূল্য প্রায় ২৮ লাখ। এ ক্ষেত্রে সরকার ৫০% ভর্তূকি দিয়েছে। যে ব্যক্তি বা কৃষক এই মেশিনটি কিনবেন, তিনি অর্ধেক দামে কিনতে পারবেন। জেলায় বরাদ্দকৃত প্রথম মেশিনটি সদর উপজেলার হবখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ১৪ লাখ টাকায় কিনেছেন। কৃষকেরা তাকে মূল্য পরিশোধ করে ধানকাটার কাজে মেশিনটি ব্যবহার করতে পারবেন। বাকি পাঁচটি মেশিন প্রক্রিয়াধীন। নড়াইল-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ধানকাটা মেশিন পেয়েছি। ছয়টি মেশিনের মধ্যে সদরে চারটি এবং লোহাগড়া ও কালিয়া উপজেলায় একটি করে মেশিন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
এ মেশিন ধানকাটা, ঝাড়া ও প্যাকেজিংয়ের কাজ সম্পন্ন করবে। বিভিন্ন কোম্পানি ভেদে প্রতিটি মেশিনের দাম ২৮ থেকে ৪০ লাখ টাকা। এ ছাড়া শুধুমাত্র ধান কাটতে পারে এমন ১০টি রিপার মেশিন আমরা বরাদ্দ পেয়েছি। এ মেশিন শুধু নড়াইল নয়, সারাদেশেই বরাদ্দ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগময় মুহূর্তে এই মেশিনসহ কৃষি যন্ত্রপাতি কেনার জন্য প্রায় ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
কৃষিবিদ চিন্ময় রায় আরো বলেন, করোনাভাইরাসের সংকটময় মুহূর্তে নড়াইলে ধানকাটা শ্রমিকের খুব একটা সংকট হবে না। কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনসহ ব্যক্তিগত ভাবে অনেকে কৃষকদের ধান কেটে দিচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকেরা সহজে ঘরে ধান তুলতে পারবেন। নড়াইলে এখন পুরোদমে ধানকাটা চলছে। এ বছর জেলায় ৪৭ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে বোরা ধান চাষাবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন।