পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে মটরবাইক যোগে ফিরছিলাম সদর উপজেলা অভিমূখে। পথিমধ্যে বাবুগঞ্জ বাজারের নিকট ওয়াপদা সড়কের স্লইজগেট। বামপাশে তাকানো মাত্র চোক পড়ে গেলো প্রায় ৮০ বছরের এক বৃদ্ধার দিকে। তিনি কাস্তেহাতে খালের পাশে বেড়েওঠা বুনো কচু ক্ষেতের দিকে যাচ্ছিলেন। বাইক থেকে নামলাম; আমার সাথে ছিলেন দৈনিক কালের কন্ঠ প্রতিনিধি কপিল ঘোষ।
ক্যামেরাটা হাতে নিয়ে এক পায়ে দু’ পায়ে বৃদ্ধার কাছে এগিয়ে গেলাম। জিজ্ঞাসা করলাম কচু কাটছেন কেন? এদিয়ে কি করবেন? তিনি উত্তর দিলেন সেদ্ধকরে খাবো। জানতে চাইলাম ভাতের সাথে খাবেন, নাকি ভাত ছাড়া ? তিনি বললেন বাবা ভাত পাবো কোহানে; ভাতের সাথে দেহা হয়না কদ্দিন।
প্রশ্ন করলাম আপনার কেউনেই? বললেন একটা ছাওয়াল আছে সে জুদাখায় (ভিন্নখায়)। জানতে চাইলাম কেউ কোন সাহায্য করেনা? উত্তরে বললেন, আমাগে টিপু ১০ শের চাল দেছে আর কিছু মালামাল। তা এতদিন খাইছি; এহন খাবার কিছুনাই তাই কচুর ডাগুয়া (কচুরডাগা) বাড়ি নিয়া সেদ্ধকরে খাবো।
আগে তো বাগান-ঘাটের শাক খুঁটে নিয়ে হাটবাজারে ব্যাচতাম। তাই দিয়ে একার সংসার চইলে যাতো। এহন তো তা পাত্তিছি না।
চেয়ারম্যান, মেম্বর আপনাকে কোন সরকারি মালামাল দেয়নি? এমন প্রশ্নে বলেন, এহনো আমি কিছু পাইনাই।
বৃদ্ধা নমিতা বিশ্বাস বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার হিজলা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের শান্তিপুর গ্রামের মৃত: সন্তোষ বিশ্বাসের স্ত্রী।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. বাদশা শেখ জানান, সরকারি ত্রাণ তিনি পাননি। কারণ বরাদ্দ পর্যাপ্ত নেই। তাই নমিতার মতো মানুষদের প্রয়োজনীয় সাহায্য করা যাচ্ছে না। তবে তিনি বয়স্ক ভাতার টাকা পান।
কোনো সরকারি ত্রাণের খাবার পাননি। তাই কচু সেদ্ধ খাচ্ছি!' বলছিলেন নমিতা বিশ্বাস (৮০)। বাবুগঞ্জ বাজারের পাশে খালের চরে জন্মানো কচু তিনি কাটছিলেন বৃহস্পতিবার। কচুগুলো কাটা শেষে তিনি বস্তাবন্দি করেন। পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়া পরিচিতজনকে ডেকে বলেন খাল হতে কচুর বস্তার পাড়ে তুলে দিতে। একদিন কচু কাটলে তার দু-তিন দিন চলে যায় বলে জানালেন। তিনি আরো জানান, করোনার কারণে বাজার বন্ধ। তাই শাক বেচাও বন্ধ। কিন্তু সরকারি কোনো ত্রাণ বা খাবার এখনো তিনি পাননি।
নমিতা। তার দুই ছেলের মধ্যে একজন বেঁচে আছে। ভ্যানচালক ছেলে স্ত্রীকে নিয়ে পৃথক থাকে। বেঁচে থাকার জন্য তাই বয়োবৃদ্ধ নমিতাকে একাই লড়াই করতে হয়। তিনি আরো জানান, মাঝে-মধ্যে সর্বশেষ পেয়েছেন গত অগ্রহায়ণ (ডিসেম্বর) মাসে। যতদিন বাঁচবেন এভাবে সংগ্রাম করেই বাঁচতে চান নমিতা। তবু ভিক্ষা করবেন না। কারো কাছে মাথা নোয়াতে নারাজ তিনি।
তার ওয়ার্ডে প্রায় আট শ পরিবারের মধ্যে সাড়ে সাত শ পরিবার ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু এ পর্যন্ত সরকারি ত্রাণ বরাদ্দ পেয়েছেন ৬৫ পরিবার। তার ওয়ার্ডে সরকারি গুচ্ছগ্রামের শতাধিক পরিবারসহ দলিত শ্রেণির অসংখ্য মানুষ রয়েছে। যারা দিন আনে দিন খায়। তাদের সহায়তা করা প্রয়োজন।
সরকারি ত্রাণ না পেলেও প্রায় দুই সপ্তাহ আগে স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে নমিতাকে কিছু খাবারের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন বলে জানান ইউপি সদস্য বাদশা শেখ।