লালমনিরহাট ১০০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লালমনিরহাটের প্রথম করোনা শনাক্ত রাজমিস্ত্রী কামরুল ইসলাম ও তার সাত বছর বয়সী আবু সালমানকে সুস্থ ঘোষণা করে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়পত্র প্রদান করেছে।
রোববার (৩ মে) দুপুরে লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পিতা ও পুত্রকে সুস্থ ঘোষণা করে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়পত্র প্রদান করেন।
এই উপলক্ষে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা করা হয়। ওই হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডাঃ মনজুর মোর্শেদ দোলনের উপস্থাপনায় অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন কভিড-১৯ জয়ী কামরুল ইসলাম। এরপর লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডাঃ নির্মলেন্দু রায়, তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ সিরাজুল ইসলাম, চিকিৎসক ডাঃ মাহামুদুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এনএম নাসির উদ্দীন ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান।
ফ্রন্ট লাইনের চিকিৎসক ডাঃ মাহমুদুল হাসান নিজের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, তাদেরকে সাহস দেওয়াই ছিল আমার মুল চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা সবার সহযোগিতায় তাদের সুস্থ করে পরিবারের নিকট তুলে দিতে পেরে আমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। সবার আগে আমাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আইসোলেশনে এবং হোম কোয়ারেন্টিনে থেকে চিকিৎসকের গাইডলাইন মেনে চললে কভিড -১৯ জয় করা যায়। এই বিষয়ে সবাইকে সতর্ক হতে হবে, সজাগ থাকতে হবে।
আনুষ্ঠানিক বিদায় অনুষ্ঠানে লালমনিরহাট অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এসপি পদোন্নতি প্রাপ্ত) এনএম নাসির উদ্দীন বলেন, জেলায় প্রথম শনাক্ত কভিড-১৯ জয়ী পিতা কামরুল ইসলাম ও তার শিশু সন্তান আবু সালমানকে চিকিৎসা প্রদানকারী চিকিৎসক, নার্স সহ সকল স্টাফদের নিকট পুলিশের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ 'লেটার' প্রদান করা হয়েছে। এবং করোনা জয়ী পিতা ও পুত্রকে শুভেচ্ছা উপহার সামগ্রী প্রদান করা হয়েছে। সদর থানার ওসি মাহফুজ আলমকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান বলেন, সরকার চেষ্টা করছে প্রত্যেক করোনা পজেটিভ শনাক্ত নাগরিককে সুস্থ করার। চিকিৎসক, চিকিৎসক সংশ্লিষ্ট স্টাফ, পুলিশ, সেনাবাহিনী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন সেক্টরের সবাই নিরলসভাবে পরিশ্রম করছে। জেলায় প্রথম করোনা পজেটিভ পিতা ও পুত্রের চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সকল পক্ষের সাথে সমন্বয় সাধন করে আমরা জয়ী হয়েছি। এই সফলতা আমাদের ধরে রাখতে হবে। সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘরে থাকার আহবান করছি।
তিনি কামরুল ইসলাম ও আবু সালমানের উদ্দেশ্য বলেন, আপনারা চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলবেন। আপনার খাবার নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না। আপনার এই বিজয় হিমালয়ের চেয়েও অনেক বড়। মহান আল্লাহতায়ালার অশেষ রহমতে আজ আপনারা বাড়ীতে ফিরছেন। এজন্য শুকরিয়া প্রকাশ করছি।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায় পুলিশ প্রশাসন ও গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানিয়ে করোনা পজেটিভ পিতা-পুত্রের বিজয়ী হওয়া সম্পর্কে বলেন, আমরা সাহস ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রেখে সেবা দিয়েছি। এতে সকলের সর্বাত্মক সহযোগিতায় তাদের সুস্থ করে পরিবারের নিকট তুলে দিতে পেরে আমরাও আনন্দিত। তবে এই কভিড -১৯ থেকে মুক্ত থাকতে হলে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে হবে। এটাই প্রথম শর্ত। কেননা, গণজমায়েত থেকে দুরে থাকাই আমাদের করোনা পজেটিভ ঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখতে পারে।
এরপর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পুলিশ বিভাগ, চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে খাবার, নগদ অর্থ প্রদান করা হয় ওই পরিবারকে। এছাড়াও শিশু সন্তান আবু সালমানের হাতে সাংবাদিক মোয়াজ্জেম হোসেন নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেন।