মহামারী হয়ে ওঠা করোনা ভাইরাসের প্রদুর্ভাবের এই সময়ে মানুষ চার দেয়ালে বন্দি হয়ে পড়েছে। প্রতিদিন মৃত্যু আর আক্রান্তের খবরে বিচলিত হয়ে এক ঘন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। সেই সময় ফরিদপুরে এক চিলতে রূপালী আলো হয়ে দেখা দিয়েছে পুকুর ভর্তি পদ্ম ফুল।
ঘরে থাকা হপিয়ে ওঠা চিন্তা ক্লিষ্ট মানুষ একটু মুক্ত নির্মল বাতাস নিতে তাই ছুটে আসছেন শহরের ঝিলটুলী মহল্লা এলাকায় সিভিল সার্জনের বাস ভবনের পুকুরের পাড়ে। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে কদায় এদো হয়ে ওঠা ওই পুকুরে ফুটেছে শত শত পদ্ম ফুল। প্রতিদিন পদ্ম পুকুর পাড়ে ভিড় জমাচ্ছে নানা বয়সী মানুষ, লাল রঙের পদ্ম ফুল দেখতে। দখিনা বাতাস এসে পদ্ম গাছের পাতা ও ফুলের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ার সময় ফুলগুলি নড়ে ওঠে, পাতাগুলি নড়ে ওছে। এভাবেই ফুলগুলিও যেন তার অনুভূতির কথা বলে যায় দর্শনার্ধীদের উদ্দেশ্যে।
‘পদ্ম দিঘী’, পদ্ম বিল’, ‘পদ্ম পুকুর’ এ শব্দগুলি আজকাল বই-এর অক্ষরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাস্তবে তেমন দেখা মেলে না। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে এক প্রকাশ বিলুপ্ত হতেই বসেছে পদ্ম ফুল। নতুন প্রজন্ম তাই পদ্ম বিল বা পদ্ম পুকুরের কথা শুনেই বড় হয়েছে। বাস্তবে দেখা পাওয়া খুব একটা হয়ে ওঠে নি। কিন্তু সে আশাই পূরণ করেছে ফরিদপুর শহরের এ পদ্ম পুকুর।
তিন বছর আগে ফরিদপুরের তৎকালীন সিভিল সার্জন অরুন কুমার বিশ্বাস গোপালগঞ্জ অঞ্চলের বিল থেকে পদ্ম ফুলের চারা এনে রোপন করেন এ পুকুরে। সেই থেকে প্রতিবছরই ফুল ফোটার সময় এ পুকুরটি ফরিদপুরবাসীর নিকট একটি আকর্ষণীয় জায়গা হয়ে উঠেছে।
ফরিদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি শিপ্রা গোস্বামী বলেন, মানুষের জীবন চার দেয়ালের ইটের পাজরে বন্দি হয়ে আছে। দূরন্ত শৈশব এখন স্বপ্নের অতীত। এর সাথে যুক্ত হয়েছে করোনাভাইরাসজনিত মহামারী। সব মিলিয়ে ভালো নেই মানুষ, মানুষের মনে নেই স্ফূর্তি। এই অবস্থায় সিভিল সার্জনের বাড়ির পুকুরের পদ্ম ফুলের ভূবন ভুলানো হাসি কিছু সময়ের জন্য হলেও ভুলিয়ে দেয় মনের মলিনতা, শরীরকে করে তোলে প্রফুল্ল।
ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, পুকুরটি সংস্কার করা হবে, যাতে আর বড় পরিসরে ফুটতে পারে পদ্ম ফুল। পাশাপাশি পুকুরের চারপাশে বেঞ্চ বানিয়ে দেওয়া হবে যাতে দর্শনার্ধীরা দুদন্ড জিরিয়ে পদ্ম ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।