নড়াইলের লোহাগড়ায় কথিত অপহরণ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ জাহিদ শেখকে আটকের পর বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী আসামীকে ছিনিয়ে নেবার ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। লোহাগড়া থানার এস,আই মিল্টন কুমার দেবদাস বাদী হয়ে ১৪ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৫০/৬০ জনকে আসামি করে গত ৩০ এপ্রিল মামলা দায়ের করেন। অভিযোগ উঠেছে, ঘটনার পর পুলিশ একাধিক আসামীর বাড়ি ভাংচুর সহ মহিলা ও পুরুষদের মারপিট-গালিগালাজ করেছে। আসামি ছিনিয়ে নেবার সময় লোহাগড়া থানার দুই এ,এস,আই সহ পাঁচজন পুলিশ সদস্য আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ মামলার ১০ নং আসামি এস,এস,সি ফল প্রত্যাশী অনিকা খানম(১৭)কে রাতে আটক করে জেল হাজতে পাঠানোয় বিতর্ক উঠেছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দিঘলিয়া ইউনিয়নের তালবাড়িয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম ওরফে ডাকু শেখের ছেলে মোঃ জাহিদ শেখ (৩৭) এর নামে গত ৩ ডিসেম্বর লোহাগড়া থানায় ছাত্রী অপহরণের অভিযোগে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন দিঘলিয়া পূর্বপাড় গ্রামের শেখ রবিউল ইসলামের ছেলে শেখ আরিফুজ্জামান রুবেল। ওই মামলায় অভিযোগ আনা হয় তালবাড়িয়া গ্রামের মুরাদ শেখ ওরফে মবু শেখের ছেলে জান্নাতুল ফেরদৌস জান্নাত (২৫), রফিকুল ইসলাম ওরফে ডাকু শেখের ছেলে মোঃ জাহিদ শেখ সহ অজ্ঞাতনামা ৮/১০ জনে বাদীর বোন ইসরাত জাহান তন্নি(১৬)কে ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপহরণ করে নিয়ে যায়। রফিকুল ইসলাম ওরফে ডাকু শেখ, নান্নু মিয়াসহ গ্রামবাসীরা জানায়, মামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত নিজ বাড়িতে জান্নাতুল ফেরদৌস জান্নাত এবং ইসরাত জাহান তন্নি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ঘর সংসার করছেন। দীর্ঘদিন তাদের মধ্যে প্রেমজ সম্পর্ক চলছিল অথচ মিথ্যা অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়। মোঃ জাহিদ শেখ ও জান্নাতুল ফেরদৌস জান্নাত পরস্পর সম্পর্কে চাচাতো ভাই।
গত ৩০ এপ্রিল লোহাগড়া থানার এ,এস,আই কবির হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ কথিত ওই অপহরণ মামলার আসামি তালবাড়িয়া ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহিদ শেখ কে আটক করে। তালবাড়িয়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম ওরফে ডাকু সহ গ্রামবাসীদের অভিযোগ, পুলিশ জাহিদকে নিজ বাড়ি থেকে আটকের পর তালবাড়িয়া বাজারে এনে বেধড়ক মারপিট করে। এতে গ্রামবাসী বিক্ষুদ্ধ হয়ে পুলিশকে মারপিট করে জাহিদকে ছিনিয়ে নেয়। ঘটনার দিবাগত গভীর রাতে পুলিশ রফিকুল ইসলাম ওরফে ডাকু এবং মুরাদ শেখ ওরফে মবু শেখের বাড়িতে হানা দিয়ে ভাংচুর করে। এ সময় মুরাদ শেখের ভাই নান্নু মিয়া(৪০)কে মারপিট করে পুলিশ।
আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ জাহিদ শেখের মা জাহানারা বেগম(৬৫) অভিযোগ করেন, খবর পেয়ে তালবাড়িয়া বাজারে গিয়ে দেখি আমার ছেলেকে পুলিশ বেদম মারপিট করছে। আমি ছেলেকে বাঁচানোর চেষ্টা করি। তখন পুলিশ আমাকে সহ আমার ছেলেকে বেদম মারপিট করছিল। এ সময় গ্রামবাসীরা পুলিশের উপর ক্ষেপে যায়। বাদল শেখের স্ত্রী ফাতেমা বেগম(৪০) জানান, অনেক রাতে পুলিশ জাহিদের বাড়িতে এসে ভাংচুরসহ মহিলাদের গালিগালাজ করেছে। মুরাদ শেখের ভাই নান্নু মিয়া অভিযোগ করেন,পুলিশ ওই রাতে আমাদের বাড়িতে এসে ভাংচুরসহ আমাকে মারপিট করে। মুরাদ শেখের স্ত্রী খুরশিদা বেগম লক্ষী অভিযোগ করেন, পুলিশ ঘর থেকে আমার আমার মেয়ে ও আমাকে গালিগালাজ করে বের করে দিয়ে তল্লাশীর নামে আসবাবপত্র ভাংচুর করেছে। এস,এস,সি ফল প্রত্যাশী আমার নির্দোষ মেয়েকে পুলিশ গভীর রাতে থানায় ধরে নিয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ জাহিদ শেখের পিতা রফিকুল ইসলাম ওরফে ডাকুসহ গ্রামবাসীরা আরো অভিযোগ করেন, আসামি ধরবার নামে পুলিশ ও ডিবি সদস্যরা গত ২/৩ দিন যাবত আমাদের বাড়িতে এসে হুমকি-ধমকি,গালিগালাজ করেছে। এমনিতেই করোনার ভয়ে আছি। তার পরে পবিত্র রোজা চলছে। অথচ পুলিশ প্রায়দিনই এসে আসামি ধরবার নামে তান্ডব চালাচ্ছে। আমরা ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছে ন্যায্য তদন্ত ও বিচার প্রার্থনা করছি। আওয়ামী লীগ পরিবার হয়েও আমরা পুলিশের কাছে অযথা নির্যাতিত হচ্ছি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস,আই মোঃ আতিকুজ্জামান, মারপিট-গালিগালাজ ও ভাংচুরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আসামি ধরতে গেলেই তারা এমন অভিযোগ আনবে। মামলার আসামি অনিকা খানমকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামীদের আটকের চেষ্টা চলছে।