তিনদিকে বঙ্গোপসাগর, একদিকে নদী, তারই মাঝখানে একটি দ্বীপচর। নাম তার কলাগাছিয়া। স্থানীয়দের কাছে কলাগাছিয়া চর নামেই পরিচিত। ভৌগলিক অবস্থান পটুয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা রাঙ্গাবালীতে। সেখান থেকেও বিচ্ছিন্ন এই দ্বীপে করোনার কারণে মৌসুমী জেলেরা আটকে রয়েছে। যেখানে যাতায়াতের বাহন শুধুমাত্র ট্রলার ও নৌকা। এখন তাও বন্ধ রয়েছে। সেই বিচ্ছিন্ন দ্বীপচরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাশরাফুর রহমান নিজেই ত্রান নিয়ে হাজির হলেন। ফলে সেখানকার ক্ষুধার্থ মানুষেরা পেলো দুমুঠো খাবারের খাদ্য সামগ্রী।
ওই দ্বীপ চরের এখন বাসিন্দা রেবেকা বেগম (৪০)। স্বামী পরিত্যক্তা রেবেকা দুই সন্তান ছেলে শাকিল (১৫) ও মেয়ে মুন্নিকে (১২) নিয়ে কাজের খোঁজে এসেছিলেন এই দ্বীপচরে। এখানে সাগর থেকে মাছ ধরে ট্রলারগুলো নোঙর করে। মাছ বাছাই, বিশেষ করে লাল টাইগার চিংড়ি মাথা ফেলে প্রক্রিয়াজান করা হয় এখানে। আবার শুটকির দিনে মাছ শুকানোর কাজ করেন এরা।
রেবেকা জানায়, শহরের অসুকের (করোনার) কথা তারা জানে না। এখানে ভাসমান দোকান আসতো। সেখান থেকে চাল-ডাল কিনতেন তারা। কিন্তু কোন লোকজন এখানে আসে না। সাগর থেকে মাছ নিয়ে ট্রলারও আসছে না।
ওই চরের বাসিন্দা ওমর মিয়া (৪৩) জানায়, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে তিনিও এই চরে কাজ করতে এসেছেন। কিন্তু এখন বেকার বসে দিন কাটাচ্ছেন। ট্রলার না পাওয়ায় উপজেলা শহরের তারা আসতে পারছেন না। দীর্ঘ এক মাস ধরে এই চরে আটকে পড়ে কর্মহীন হয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছিল তাদের।
এই অবস্থায় বুধবার ট্রলার করে চাল-ডালসহ খাদ্য সামগ্রী নিয়ে হাজির হয়ে ইউএনও মাশফাকুর রহমান। তিনি চরের এই কর্মহীন অভাবী মানুষের শতাধিক পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরন করে গেছেন।
খাদ্য সামগ্রীর মধ্যে ছিল ১০ কেজি চাল, ৩ কেজি আলু, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি পিঁয়াজ, ১ লিটার সোয়াবিন তেল, ১ কেজি লবন ও একটি করে রসালো ফল তরমুজ। এদিকে চরের মানুষগুলো এভাবে খাদ্যসামগ্রী পাবেন তা বুঝতেই পারেনি।
এদিকে রাঙ্গাবালীর দ্বীপচর কলাগাছিযাই নয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাশফাকুর রহমান এই করোনা পরিস্থিতিতে কর্মহীন মানুষের জন্য উপজেলায় যে সকল দ্বীপে জনপ্রতিনিধিরা যেতে সাহস পাচ্ছিল না, তিনি নিজে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী, উত্তাল সাগর ট্রলারে পাড়ি দিয়ে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে দ্বীপচরগুলোতে হাজির হচ্ছেন ইউএনও মাশফাকুর রহমান।
কিভাবে দ্বীপ চরের মানুষের জন্য খাদ্যসামগ্রী নিয়ে গেলেন জানতে চাইলে ইউএনও মাশফাকুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, উপজেলার চর কলাগাছিয়া বঙ্গোপসাগরে মোহনায় জেগে ওঠা দ্বীপ। উপজেলা সদর থেকে অন্তত ৩০ কিলোমিটার দক্ষিনে। যথন জানতে পারি সেখানে এখনও খাদ্য সামগ্রীপৌছে নি। বুড়া গোরাঙ্গ নদ পাড়ি দিয়ে অন্তত ১৫ কিলোমিটার দক্ষিন সাগরে চর কলাগাছিয়ার অবস্থান। অনেকেই সেখানে যেতে সাহস পাচ্ছিল না। কিন্তু সেখানকার মানুষগুলো না খেয়ে কষ্টের কথা জানতে পেরে থাকবে আগে প্রস্তুতি নিয়ে গত শনিবার সকাল ৮ টার দিকে ট্রলঅরে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে নিজেই রওনা দেই। বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে সেখানে পৌছি। কিন্তু চরের মানুষ কিছু বুঝতে পারছিল না। যখন তাদের কাছে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া শুরু করি তখন অনেকেই আমাদের জড়িয়ে তাদে অভাবও কষ্টের কথি বলতে থাকে।
তিনি বলেন, আসলেই দুর্গম ও বিচ্চিন্ন চরের মানুষগুলো এনিতেই বেশ অনেক কষ্টে থাকে। অনিশ্চয়তা ও বিপদের সাথে যুদ্ধ করে সামান্য জীবিকার জন্য এখানে কোনভাবে টিকে থাকে। করোনা পরিস্থিতির কারণে কর্মহীন অভাবী মানুষের জন্য জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে খাদ্যসামগ্রী বিতরন করা হচ্ছে। তবে এই দ্বীপ চরবাসির কথা কারো হয়তো নজরে আসেনি। জানতে পারি এই দুরের দ্বীপচরে এখন ত্রানসাগ্রী পৌঁছেনি। তখন আমি উদ্যোগ নিয়ে উপজেলার দুরের দ্বীপচরগুলোতে নিজে গিয়ে খাদ্যসামগ্রী চরবাসির হাতে পৌছে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে উপজেলার চর কলাগাছিয়া, চর কাসেম ও চর নজির এই তিনটি দ্বীপচরে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে নিজে গিয়ে চরের মানুষের হাতে পৌছে দেওয়া হয়েছে। এই তিনটি চরে ২৫০ টি পরিবার খাদ্যসামগ্রী সহায়তা পেয়েছেন।
তিনি বলেন, রাঙ্গাবালী উপজেলায় ১ লাখ ৪৫ হাজার বসরি জন্য এ পর্যন্ত মোট ৯০ টন চাল ও ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা বরাদ্দ এসেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে উপজেলার ৯ হাজার মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরন করা হচ্ছে। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যেগে উপজেলায় দেড় হাজার পরিবারকে খাদ্যসহায়তা পৌছানোর কর্যক্রম চলছে।