রংপুরের পীরগঞ্জে করোনায় প্রশাসন ব্যস্ত এবং পীরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে মাইকিং ও ১৪৪ ধারা জারি করা সত্বেও একাধিক জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালী করতোয়া নদীর বুকে থাবা দিয়ে প্রতিদিনই শত শত ট্রাক বালু লুটে নিচ্ছে। নদীপাড়ের বেশ কয়েকটি স্থানে প্রায় ১০ কোটি টাকা মুল্যের প্রায় এক লাখ ট্রাক বালু উত্তোলন করে মজুদ করে রাখা হয়েছে। নদীটির জয়ন্তীপুর ঘাটে নির্মানাধীন জয়ন্তীপুর ব্রীজের নীচ থেকেই প্রায় ৫০ হাজার ট্রাক বালু নদীপাড়েই মজুদ রয়েছে। অপরদিকে বালুভর্তি ট্রাক চলাচল করায় পাকা ও কাঁচা রাস্তা ভাঙ্গছে, ভাঙ্গছে জমি। বালু তোলায় আসছে বর্ষা মৌসুমে কয়েকটি ঘাট দিয়ে রংপুর-দিনাজপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা নাজুক হয়েছে বলে অসহায় গ্রামবাসী জানিয়েছেন।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর-দিনাজপুর জেলার পীরগঞ্জ, নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাটের প্রায় ২৫টি গ্রামের মধ্যে দিয়ে বয়ে গেছে করতোয়া নদী। নদীর তলদেশে বিভিন্ন স্থানে বোমা এবং শ্যালোমেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনে প্রতিযোগিতা চলছে। এতে নদীপাড়ের জমি, রাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় ভুক্তভোগী এলাকাবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের (ইউএনও) কাছে অসংখ্য লিখিত অভিযোগ করেন। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন বালু উত্তোলন বন্ধে মাইকিং করলেও বালুখেকোরা তা শুনছে না। উল্টো নদীপাড়েই কোটি কোটি টাকা মুল্যরে হাজার হাজার ট্রাক বালুর মজুদ করে রেখেছে। নদীটির টুকুরিয়া ইউনিয়নের জয়ন্তীপুর নামক ঘাটে নির্মানাধীন জয়ন্তীপুর ব্র্রীজের নীচ থেকে একাধিক বোমা মেশিন দিয়ে উপজেলার মদনখালী ইউনিয়নের মদনখালী গ্রামের সুলতান মাহমুদ প্রায় ৭০ হাজার ট্রাক বালু উত্তোলন করে ঘাটেই মজুদ করে রেখেছে। বালু উত্তোলনকারী সুলতান মাহমুদ জানায়, আমার সাথে উপজেলা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা রয়েছে। আমার নানা-মামার জমিতে বালুর মজুদ করেছি। নদীপাড়ে কয়েক একর জমির উপর বালুর বিশাল মজুদের ব্যাপারে ব্রীজটির শ্রমিকরা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, ব্রীজের নীচ থেকে আমরাও বালু তুলতে নিষেধ করেছি। কিন্তু না শুনে উল্টো হুমকি দেয়। টুকুরিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ দুর্গাপুর ও বিছনা গ্রামে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী খননের বালু নিয়ে দু’গ্রুপের মাঝে ভয়াবহ সংঘর্ষের পর উপজেলা প্রশাসন উল্লিখিত স্থানে অনির্দিষ্টকালের জন্য বালু উত্তোলন বন্ধে ১৪৪ ধারা জারি করেন। অপরদিকে নদীটির বড়আলমপুর ইউনিয়নের বাঁশপুকুরিয়ায় (মধ্যপাড়া) মদনখালী ইউনিয়ন আ.লীগের সম্পাদক সেলিম মিয়া ও তার ভাই শামীম মিয়া, উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা সালমান সিরাজ রিজু, যুবলীগ নেতা ইকবাল হোসেন এবং জামরুল মেম্বারসহ উপজেলার এক শীর্ষস্থানীয় জনপ্রতিনিধি প্রায় ৩০ হাজার ট্রাক বালুর মজুদ করে রেখেছে। বাঁশপুকুরিয়া মন্ডলপাড়ায় উপজেলা যুবলীগের পরিচয়দানকারী গোলাম রব্বানী এবং এনছার মেম্বারের ভাই প্রায় ১০ হাজার ট্রাক বালু মজুদ এবং প্রতিদিন নিয়মিত বিক্রিও করছে। বড়আলমপুর ইউনিয়নের শালপাড়া ঘাটের উত্তরে নদীটি থেকে ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান হাফিজার রহমানের সমর্থক জাহিদ, শামীম ও নুরু মিয়াসহ ১৭/১৮ জন বালু তুলে তাৎক্ষনিকভাবে প্রতি মাহিন্দ্র ৬’শ টাকায় বিক্রি করছে। রাস্তাঘাট ভাঙ্গন ও জমি রক্ষায় এলাকাবাসী বালু উত্তোলনে বাঁধা দিলে বালু সন্ত্রাসীরা নানাভাবে হুমকি দেয় বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী গ্রামবাসী জানান, জয়ন্তীপুর ঘাট থেকে গোপীনাথপুর মাদ্রাসার মোড় পর্যন্ত প্রায় ১ কিমি পাকা রাস্তা ভেঙ্গে শেষ হয়ে গেছে। এখন আর পাকা রাস্তা নেই, কাঁচা রাস্তা হয়েছে। ইউএনও টিএমএ মমিন বলেন, বালু উত্তোলন বন্ধে সম্প্রতি মাইকিং করা হয়েছে। তবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইউএনও টিএমএ মমিন বালু উত্তোলন বন্ধে মাইকিংয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, কোথা থেকে বালু তোলা হচ্ছে, তা জানি না। তবে টুকুরিয়া ইউনিয়নে করতোয়া নদীপাড়ের দক্ষিণ দুর্গাপুর ও বিছনা গ্রামে বালু উত্তোলন বন্ধে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।