নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মেলাবরে একটি এলাকার নাম নিরাপদ সবজি গ্রাম। সম্পূর্ণ জৈব প্রযুক্তিতে ওই গ্রামের কৃষকেরা উৎপাদন করেন ১৬ ধরণের নিরাপদ ফসল। কিন্তু করোনায় সচেতন ভোক্তা ক্ষেতে আসতে না পারায় সবজি গ্রাম ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়েছে। বিপাকে পড়ে কৃষকেরা তাদের জৈব প্রযুক্তির ফসল বাজারে এনে পানির দরে বিক্রি করছেন। ফলে ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্থ নিরাপদ সবজি চাষিরা চরম দৈন্যদশায় ভুগছেন।
সোমবার সরেজমিনে জানা যায়, শুধুমাত্র জৈব সার ও জৈব বালাই নাশক দিয়েই ওই গ্রামের কৃষকেরা চাষাবাদ করেন। ভেষজ উদ্ভিদের লতা পাতা দিয়ে নিজেরাই তৈরী করেন বলাই নাশক ও জৈবসার। ভেষজ হরমোন ক্ষেতে প্রয়োগ করে উৎপাদন করেন ১৬ ধরণের নিরাপদ সবজি। আশানুরূপ উৎপাদন, সচেতন ভোক্তার চাহিদায় তাদের মুখে হাঁসি ফুটেছিল। কিন্তু করোনায় লকডাউনের কারণে তাদের ফসল ক্রেতাশূন্য হওয়ায় ক্ষেতেই বিনষ্ট হচ্ছিল। বাধ্য হয়েই তাদের জৈব্য প্রযুক্তির নিরাপদ ফসল বাজারে এনে অর্ধেক দরে বিক্রি করছেন। ফলে নিরাপদ সবজি গ্রামের কৃষকেরা চরম আর্থিক সংকটে পড়েছেন।
ওই গ্রামের কৃষক প্রভাষ চন্দ্র, বিষ্ণু চন্দ্র ও আবদুর রহিম জানান, করোনা ভাইরাসের আগে সচেতন ক্রেতারা ক্ষেতে গিয়ে প্রতি কেজি দু’ এক টাকা বেশি দরে পছন্দের সবজি ক্রয় করত। এখন খুচরা ক্রেতা ও পাইকার না আসায় গতকাল করলা, বেগুন, শশা, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, ডাটাশাক ও ঝিঙ্গা বাজারে নিয়ে গিয়ে করোনার আগের চেয়ে অর্ধেকের কম দামে বিক্রি করেছি। কেননা, বাজারে নিরাপদ সবজির নির্দিষ্ট কোন দোকান না থাকায় জৈব প্রযুক্তিতে উৎপাদিত সবজি বেশি দরে নিচ্ছেন না। বাধ্য হয়েই ক্ষেতের সবজি বাজারে এনে কম দরে বিক্রি করায় লোকসান গুনতে হচ্ছে।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, ওই গ্রামের ৩০জন কৃষককে প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দেয়ায় তারা জৈব প্রযুক্তিতে নিরাপদ সবজি উৎপাদন করছেন। ভবিষ্যত প্রজন্মের সুস্বাস্থ্যের কথা ভেবে এখন অনেকে জৈব প্রযুক্তিতে ফসল করার জন্য উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। প্রত্যেক বাজারে নিরাপদ সবজি বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট একটি দোকানের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। করোনা দুর্যোগে নিরাপদ সবজি চাষিরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যর্যমূল্য না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন।