উপকূলীয় এলাকার মানুষকে সতর্কবার্তা দিতে পতাকা উত্তোলন করছেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। সোমবার দুপুরে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায়। ছবি: প্রথম আলোঘূর্ণিঝড় আম্পানের খবরে উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। করোনার প্রাদুর্ভাবে বিপর্যস্ত উপকূলের মানুষ। এর ওপর ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস। উপকূলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সব মিলিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে বেশির ভাগ মানুষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাবনাবাদ নদের পাড়ের এলাকা লালুয়া ইউনিয়নের চাড়িপাড়া, চৌধুরীপাড়া, মঞ্জুপাড়া, নাওয়াপাড়া, ছোট পাঁচ নং, বড় পাঁচ নং, পশুরবুনিয়া, বুড়োজালিয়া ও চান্দুপাড়া গ্রামের মানুষজন সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। এ এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ বিধ্বস্ত হয়ে আছে বহুদিন ধরে। ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাস হলে এসব গ্রামের কমপক্ষে তিন হাজার মানুষ প্লাবিত হয়ে ক্ষতির শিকার হবে। ভেসে যাবে হাঁস-মুরগি, গবাদিপশু। তলিয়ে যাবে বহু বাড়িঘর।
চান্দুপাড়া গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘একদিকে করোনার কারণে জীবন লইয়া বিপদে আছি, আরেক দিকে ঘূর্ণিঝড় আম্পান আইতাছে। মোরা কই যামু?’ প্রান্তিক এ কৃষক আরও বলেন, সিডরের পর থেকে তাঁরা একের পর এক ঝড়ের তা-বে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। ঝড় যখন আসে, তখন সব চুরমার হয়ে যায়। একটু ঠিক হতে না হতেই আবার নতুন করে বিপদের মধ্যে পড়েন। এভাবেই চলছে তাঁদের জীবন।
পর্যটনকেন্দ্র কুয়াকাটা-সংলগ্ন ৪৮ নম্বর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ এবং মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের অবস্থাও চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। সাগর মোহনার এ বাঁধ দুটি জোয়ারের তা-বে ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
জানতে চাইলে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালীউজ্জামান বলেন, লালুয়া ইউনিয়নের ৭ কিলোমিটার বাঁধ পুরোপুরি বিলীন হয়ে আছে। পায়রা বন্দরের অধিগ্রহণের কারণে সেখানে বাঁধ করা যাচ্ছে না। অপর দিকে কুয়াকাটা ও নিজামপুর বাঁধের জরুরি মেরামতকাজ করে দেওয়া হয়েছে। এখন ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে যদি সাত-আট ফুট পানির উচ্চতা হয়, তখন কিছু করার থাকবে না।
ঘূর্ণিঝড় আম্পান মোকাবিলায় কলাপাড়া উপজেলা প্রশাসন জরুরি সভা করে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে জনগণকে সতর্ক করতে সোমবার দিনভর কলাপাড়া পৌর শহরসহ উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভায় মাইকিং করা হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ১৫৮টি ইউনিটের ২ হাজার ৩৭০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া উপকূলের মানুষজন যাতে নিরাপদে আশ্রয় নিতে পারে, সে জন্য ১৬৩টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে। যেসব বেসরকারি সংস্থা দুর্যোগ নিয়ে কাজ করে, তাদের সঙ্গে সভা করে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ক্ষয়ক্ষতি হলে তাৎক্ষণিকভাবে কী করা দরকার হবে, তা নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে।