অন্যান্য বছরের তুলনায় চিরিরবন্দরে এবার লিচুর ফলন ভালো হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রভাব উপজেলার লিচু বাগানগুলোতেও পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে লিচু বাগান মালিকরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এ সময়ে লিচুগাছে সবুজ পাতা আর ফলের সমারোহ। প্রায় সব গাছেই ফলন এসেছে। এরই মধ্যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবারেও লিচুর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। লিচুর ফলন দেখে খুশি হলেও বাগান মালিকদের মুখে হাসি নেই। করোনাভাইরাসের প্রভাবের কারণে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার বড় বড় ব্যবসায়ীরা এখনও এই লিচু বাগানের ফল কেনার আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অথচ প্রতিবছর লিচুগাছে ফুল ফোটার পরপরই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বেপারীরা এসে লিচু বাগান কিনে রাখতেন। এনিয়ে লিচুর বাগান মালিকরা পড়েছেন বিপাকে। চলতি মাসের শেষের দিকে পাকা টসটসে লিচু বাজারে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
দিনাজপুরের লিচু মানে রসে টুইটম্বুর। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয়। খেতে সুস্বাদু। বাতাসের তালে, গাছের পাতার ফাঁকে দুলছে আর দুলছে। দেখেই জিভে জল এসে যায়। মন চায় হাত দিয়ে ধরে মুখে নিতে খেতে। মিষ্টি ও রসালো স্বাদ আর বৈশিষ্ট্য নিয়ে নানাজাতের লিচুর মধ্যে বেদানা, বোম্বাাই, মাদ্রাজি, চায়না-থ্রি আর দেশি লিচুরগুটি ফলনে নুয়ে পড়ছে এখন গাছের ডালপালা। যে লিচুর স্বাদ নেয়ার জন্য রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন ভিড় জমায় দিনাজপুরে। এখানকার অধিকাংশ গাছই আগাম বিক্রি হয়ে যায়। কিছু গাছ পাইকাররা কিনে অতিরিক্ত দামেও বিক্রি করে থাকেন। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর লিচু চাষিরা তেমন লাভবান হতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন অনেক চাষি। করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে কাঙ্খিত দাম পাওয়া নিয়েও শঙ্কিত রয়েছেন লিচু চাষিরা।
উপজেলার পুনট্টি ইউনিয়নের লিচু বাগানের মালিক আফছার আলী খান, আব্দুস সালামসহ কয়েকজন জানান, এসময় লিচুর বাগানগুলোর ফল কেনাবেচা হয়। কিন্তু গতবারের তুলনায় এখনও বেচাকেনা শুরু হয়নি। ক্রেতাও খুব কম। এখানকার লিচু সারাদেশে যায়। কিন্তু গণপরিবহন বন্ধ। আবার করোনাভাইরাসের প্রভাবে এই ফলটি বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছি। একটি বড় গাছে ২০-২৫ হাজার এবং সবচেয়ে ছোট গাছে ১ থেকে দেড় হাজার পর্যন্ত লিচু পাওয়া যাবে। লিচুর ভার রুখতে গাছে খুঁটি দেয়া, বাদুর-পাখি থেকে রক্ষা পেতে বৈদ্যুতিক সংযোগের মাধ্যমে বাতি জ্বালানো, পাহারা দেয়া, বেপারী না আসায় কীটনাশক স্প্রে করাসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন লিচু চাষীরা। এখন চাষিরা লিচুগাছের আলাদাভাবে যতœ নিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ দেলোয়ার হোসেন জানান, উপজেলায় ছোটবড় নিয়ে ৪৫০ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। বাগান ছাড়াও কিছু সংখ্যক বাড়ি, বাড়ি সংলগ্ন জমিতে ২/৪টি করে লিচুগাছ রয়েছে। এ বছর লিচুগাছে সন্তোষজনক গুটি দেখা যাচ্ছে। অনেকের লিচু পাকতে শুরু করেছে। যদি করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে তাহলে বাজারমূল্য ভালো হতে পারে।