করোনাভাইরাসের বৈশি^ক এই সংকট অনেক কিছুই শিখিয়েছে মানুষকে। গরীবের চাল, টাকা কিংবা ত্রাণ নিয়ে যেমন নয়ছয় করেছেন অনেকে, তেমনি হত দরিদ্র অসহায় ও অসুস্থের কারণে উপার্জন বন্ধ হওয়া পরিবারের মানুষকে খুঁজে বের করে তার পাশে দাঁড়িয়ে মানবতার হাত এগিয়ে দেওয়ার মত ঘটনাও ঘটছে এই সমাজেই। তফাৎ শুধু মানসিকতা আর চিন্তা চেতনার। এমনই ভাবে দরিদ্র অসহায় ও শারিরিক ভাবে অচল মানুষদের খুঁজে বের করে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার একদল যুবক। সম্পুর্ন নিজেদের বাজারের টাকা বাচিয়ে তহবিল গড়ে তা থেকেই এসব অসহায়দের পাশে এগিয়ে এসেছেন তারা। সাহায্য পাওয়া মানুষগুলোর কাছে এখন তারা মানবতার বন্ধু হিসেবেই পরিচিত।
উপজেলার বোনারপাড়ার বাটি গ্রামের বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম। ডায়াবেটিস ও দৃষ্টিশক্তি হারানো সহ নানা অসুস্থতায় কঙ্কালসার হয়ে পঙ্গুপ্রায় অবস্থা। শরীর ভালো থাকা অবস্থায় ঢাকায় রিক্সা চালিয়ে ভালো ভাবেই জীবিকা নির্বাহ করত সে। দির্ঘদিন ধরে শরীরে অসুখ বাসা বাধায় স্ত্রীও চলে গেছে। দিন মজুরের কাজ করে কোনমতে সংসার চালান তার বাবা আবদুল হালিম। করোনার সংকট সময়ে হাতে কাজ না পেয়ে চরম কষ্টে দিন কাটতে থাকে পরিবারটির। বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পেয়ে জাহিদুলের বাড়িতে হাজির হন মানবতার বন্ধুরা। ব্যবস্থা করেন প্রায় একমাসের খাবারের। অসুস্থ জাহিদুলের চিকিৎসার বন্দোবস্ত করেন। বগুড়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা করান তারা। এক সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে অনেকটা সুস্থ্য হয়ে বাড়িতে আসেন জাহিদুল। উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের প্রতিবন্ধি শাহাদত হোসেন একটি হুইল চেয়ারে অভাবে বাড়ির বাহিরে আলোর মুখ দেখতে পারে না। এখবর শুনে হুইল চেয়ার নিয়ে পৌছে দেন ওই যুবকরা। একই ভাবে এই সংকট সময়ে ৭০ জন ভিক্ষুকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রায় ১০ দিনের (নিত্যপণ্য) খাবার পৌছে দিয়েছেন তারা। এছাড়াও কর্মহীন অসহায় ও অক্ষম পরিবার খুঁজে খুঁজে তালিকা তৈরি করেন এই মানবতার বন্ধুরা। নিজেদের ঈদ বাজার থেকে বাঁচিয়ে গতকাল এসব পরিবারের মাঝে শাড়ি, লুঙ্গি ও শিশুদের মাঝে নতুন জামা উপহার হিসেবে তুলে দেন তারা। প্রায় একই বয়সের মানবতার এই একদল বন্ধুরা মিলে গড়ে তুলেছেন হ্যান্ড ফর হেল্প নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। যার একমাত্র কাজ শুধু অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো। এই বন্ধুদের মধ্যে একজন আহসানুল কবির মানিক বলেন, আসলে অসহায়দের পাশে দাড়ানোই প্রকৃত মানবতা মনে করি। তাই সমাজের এস পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কিছু করতে পারলে সবাই আনন্দ পাই আমরা।