দেবহাটা উপজেলার নাংলা এলাকায় প্রবল ঘূর্নিঝড় আম্ফানে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত নদী ইছামতি নদীর দক্ষিন নাংলা এলাকায় ভাঙ্গন কবলিত বেড়িবাধ পরিদর্শন করেছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল। ঘূর্নিঝড় আম্ফানে এ ভেড়ীবাধটি ভেঙ্গে গিয়ে ঐ এলাকার ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এই ভাঙ্গনে দক্ষিন নাংলা, মাঝেরআটি, জোনাইপাড়া, মোল্লাপাড়া ও ছুটিপুর গ্রামের মানুষের জীবন একদিকে যেমন অচল হয়ে পড়েছে তেমনি অন্যদিকে তারা ছেলে মেয়ে, গবাদী পশুসহ জিনিষপত্র নিয়ে বিপদে রয়েছেন। এই ভাঙ্গনে পাশর্^বর্তী আরো কয়েকটি গ্রামের মানুষ গবাদি পশু, ঘের ও ফসলফলাদী নিয়ে বিপদের ঝুঁকিতে রয়েছেন। সহায় সম্পদ রক্ষার জন্য তাদের খাওয়া ঘুম প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কিন্তু প্রায় সপ্তাহ পার হতে চললেও পাউবো বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ বাধ মেরামতে কোন পদক্ষেপ এখনো গ্রহন না করায় ঐ গ্রামগুলির মানুষ হতাশ। যার কারনে বুধবার দুপুর সাড়ে ৩ টার দিকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল সরেজমিনে ভাঙ্গন কবলিত স্থানটি পরিদর্শন করেন। এসময় জেলা প্রশাসকের সাথে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজিয়া আফরীন, দেবহাটা উপজেলা আঃলীগের সভাপতি নওয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মুজিবর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এসময় শতশত মানুষ এলাকার মানুষকে বাচাতে নতুন একটি রিংবাধ দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে দাবী জানালে জেলা প্রশাসক তাদেরকে আশ^স্ত করেন। এরআগে একইদিন দুপুর ১ টার দিকে সাতক্ষীরা জেলা আঃলীগের সভাপতি সাবেক সাংসদ মুনসুর আহম্মেদ এবং জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আঃলীগের সাধারন সম্পাদক আলহাজ¦ নজরুল ইসলাম উক্ত ভাঙ্গন কবলিত ভেড়ীবাধটি পরিদর্শন করেন। এসময় তাদের সাথে দেবহাটা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ¦ আব্দুল গনি, উপজেলা আঃলীগের সভাপতি নওয়াপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ মুজিবর রহমান, উপজেলা আঃলীগের সাধারন সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি, জেলা পরিষদ সদস্য বিশিষ্ট সমাজসেবক আলহাজ¦ আল ফেরদাউস আলফা, পারুলিয়া ইউপি চেয়াম্যান সাইফুল ইসলামসহ স্থানীয় ইউপি সদস্য ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এসময় উপজেলা চেয়ারম্যান এলাকাবাসীর দাবীর পক্ষে একটি দাবীনামা নেতৃবৃন্দের কাছে হস্তান্তর করেন। ঐ এলাকার সাধারন মানুষ নিজেদের শ্রমে ভাঙ্গন কবলিত স্থানটি কোনরকমে মেরামত করলেও তাদের মধ্যে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। বড় ধরনের জোয়ার সৃষ্টি হলে ঐ বাধটি ভেঙ্গে পুনরায় প্লাবিত হতে পারে কয়েকটি গ্রাম। স্থানীয়রা জানান, আগামী ৩/৪ দিন পরে বড় ধরনের গোন উঠবে, আর সেসময় হয়তো আবারো তারা প্লাবিত হতে পারেন। তাই এক অজানা আশঙ্খায় তারা দিনযাপন করছেন। গত কয়েকমাস আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে উক্ত স্থানে ব্লক দেয়ার জন্য কয়েক কোটি টাকার বরাদ্দ করা হয়। কাজটি টেন্ডার পান ঢাকার এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজটি করছে সাতক্ষীরার এক ঠিকাদার। ঐ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি ড্রেজার মেশিন দিয়ে প্রশস্ত ভেড়ীবাধটি উপর থেকে মাটি কেটে নিচু করে ফেলে। যার কারনে ঝড়ের কবলে ভেড়ীবাধ উপচে পানি গ্রামের মধ্যে ঢুকতে ঢুকতে বাধটি ভেঙ্গে যায়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, নদীতে জাল ঠেলা ও নদীর পাড়ের সাথে মৎস্য ঘের গড়ে তোলার ফলে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব মৎস্য ঘের পরিচালনা করেন। যার ফলে স্থানীয়দের কোন কথায় তারা কর্ণাপাত করেননা তারা। যে কারণে নদী ভাঙ্গন থামছে না। তবে বর্তমান নদীতে জোয়ারে পানি বেশি হওয়ায় অধিকাংশ বেড়িবাধ নাজুক হয়ে দাড়িয়েছে। এতে যে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে হুমকির মুখে থাকা বসন্তপুর এলাকার ভেড়ীবাধ, শিবনগর ও টাউনশ্রীপুর এলাকার ভেড়ীবাধগুলো। তাই অবিলম্বে সংস্কার করার জন্য দাবী জানানো হয়েছে।