পর্যটন জেলা কক্সবাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগির সংখ্যা। বিশ্ব মহামারি করোনার প্রাদুর্ভাব কক্সবাজার জেলার শহরগুলো ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে প্রত্যন্ত গ্রামে। জেলার দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া ছাড়া সব উপজেলায় শক্ত ভাবে হানা দিয়েছে করোনা। পাশাপাশি বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাঝে করোনার হানা ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয়দের।
পাল্লা দিয়ে করোনা রোগি সনাক্ত হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। জেলা সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা যায়-বুধবার (২৭ মে) পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মহিলাসহ ৯ জন। আর কক্সবাজারের ৮ উপজেলায় সনাক্ত হয়েছে ৪৯২ জন করোনা আক্রান্ত রোগি (এদের মধ্যে ২৯ জন রোহিঙ্গা শরণার্থীও রয়েছে)। আর সুস্থ হয়েছেন ১০৩ জন।
এদিকে সর্বশেষ বুধবার (২২ মে) কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তথ্যনুযায়ী আক্রান্তের মধ্যে বেশীর ভাগ রোগি চকরিয়া উপজেলায় ১৪৫ জন। সমান আক্রান্ত রোগি কক্সবাজার সদর উপজেলাও ১৪৫ জন। এ ছাড়া পেকুয়া উপজেলায় ৩৯ জন, মহেশখালী উপজেলায় ৩০ জন, উখিয়া উপজেলায় ৭৩ জন, টেকনাফ উপজেলায় ১৭ জন, রামু উপজেলায় ১১ জন, কুতুবদিয়া উপজেলায় ৩ জন এবং রোহিঙ্গা শরনার্থী ২৯ জন।
জানা গেছে-কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের করোনা পরীক্ষার ল্যাবে জেলার আট উপজেলা ছাড়াও ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্প, বান্দরবার জেলা ও এর কয়েকটি উপজেলা এবং চট্টগ্রামের লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া থেকে সন্দেহভাজন রোগীর করোনা নমুনা সংগ্রহ এবং পরীক্ষা করা হয় প্রতিদিন। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে সচেতনতা বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেয়ার পরও জনগণের উদাসীনতায় সারাদেশের মত কক্সবাজার জেলায়ও করোনা রোগির সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
কক্সবাজার চেম্বার ও সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, করোনা যেহেতু একটি ছোঁয়াচে ভাইরাসজনিত রোগ সেহেতু শুরু থেকেই এ বিষয়ে সরকার ও প্রশাসন নানা সচেতনতা মূলক কার্যক্রম চালিয়েছে। প্রশাসনের সঙ্গে সচেতনতা চালিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা ও সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনও। কিন্তু সবকিছুকেই উদাসীনভাবে নিয়েছে সাধারণ মানুষ। ফলে এখন এর কুফল দৃশ্যমান হচ্ছে। লক ডাউনকে তাচ্ছিল্য করায় প্রতিদিন বাড়ছে করোনা রোগির সংখ্যা।
কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ অনুপম বড়-য়া বলেন, কমেজ ল্যাবে দিন দিন সন্দেহভাজন করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহ বাড়ছে। বিশেষ করে কক্সবাজার জেলা ছাড়াও বান্দরবান এবং চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। যার কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ল্যাবে করোনা নমুনা পরীক্ষা চাপ বাড়ছে। তারপরও নিরসলভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তিনি সকলকে সামাজিক দূরত্ব বজায় ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডাঃ মাহাবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার (২৮ মে) সকাল ১১টার দিকে মুঠোফোনে জানান-সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারেও করোনা রোগির সংখ্যা বাড়ছে। তিনি জানান-বুধবার (২৭ মে) পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯২ জন। সুস্থ হয়েছেন ১০৩ জনের মত রোগি। সিভিল সার্জন বলেন-যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের আগে থেকে ডায়াবেটিক, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ ছিল।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন বলেন-সম্প্রতি লকডাউন সীমিত ঘোষণার পর অবিবেচকভাবে ঘুরে বেড়ানোর চেষ্টা চালিয়েছে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। ফলে, কক্সবাজারেও এখন করোনা রোগির সংখ্যা বাড়ছে। এরপরও যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োগ হওয়ায় মৃত্যুর হার কমই রয়েছে। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন অর্ধশত রোগিও। তিনি বলেন-সচেতনতা ছাড়া করোনার প্রাদুর্ভাব কমানো অসম্ভব। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সকলে সচেতন হলে করোনার গতি ধরে রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করেন জেলা প্রশাসক।