২৯ ও ৩০ মে। বরগুনার ইতিহাসে দুটি কালো দিন। একাত্তরের ওই দু’টি দিনে বরগুনা জেলখানায় আটক নিরীহ বাঙ্গালীদের নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী। পৈশাচিক নির্যাতন চালায় অসহায় নারীদের ওপর। সেদিনের কথা মনে করে এখনও আঁতকে ওঠেন এখানকার মানুষ।
পটুয়াখালী জেলার তৎকালীন সামরিক আইন প্রশাসক মেজর নাদের পারভেজের নেতৃত্বে হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতনে সেদিন কেঁপে উঠেছিল বরগুনার মাটি। বরগুনা কারাগারে চালানো হয় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। একে একে মেরে ফেলা হয় ১৬০-১৭০ জন নিরীহ বাঙ্গালীকে। রক্তে লাল হয়েছিল পুরো জেলখানা এলাকা। বঙ্গালীদের আহাজারী আর স্বজন হারাদের কান্নায় সেদিন ভারী হয়ে উঠেছিল বরগুনার আকাশ বাতাস।
সেই লোমহর্ষক ঘটনার স্বাক্ষী ছিলেন পাঁচটি বুলেটের আঘাত থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা ফারুকুল ইসলাম। তিান বলেন, ১৯৭১ সালের ২৯ ও ৩০ মে বরগুনা কারাগারে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায় পাকিস্তানী বাহিনী। দুই দিনে মেরে ফেলা হয় ১৬০-১৭০ জন নিরীহ বাঙ্গালীকে। পরে তাদের কারাগারের পাশেই গণকবর দেয়া হয়। তিনি আরও বলেন, ২৯ মে আমার আগে ৩৯ জনকে হত্যা করা হয়। তারমধ্যে আমার ভাই নাসিরকেও মেরে ফেলা হয়। পরে আমার বুকে দুইটি গুলি করা হয়। সেগুলো আমার বুকে না লাগায় পিঠে আরও দুইটি গুলি করা হয়। এভাবে পাঁচটি গুলি করা হয়। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমার গায়ে একটি গুলিও লাগেনি। আমি মরার মত করে পড়ে থাকি। পরে আমাকেসহ অন্যান্য লাশগুলো গণকবরে ফেলে রাখা হয়। সেখার থেকে অলৌকিকভাবে আমি বেঁচে যাই।
ওই দুই দিনে শুধু গণহত্যাই নয়। রাজাকারদের সহযোগিতায় গণপুর্ত বিভাগের ডাকবাংলায় বাঙ্গালী নারীদের ধরে নিয়ে নির্যাতন চালিয়েছিল পাক হানাদাররা। নির্যাতনশেষে কারাগারে নিয়ে মেরে ফেলা হত তাদের।
এদিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য বরগুনা সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-৭১, বরগুনা প্রেসক্লাব ও শিশু সংগঠন খেলাঘর বিভিন্ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।