সম্প্রতি সরাইলে স্পর্শকাতর বিষয়ের মিথ্যা মামলা নথিভূক্তি ও মাদকের বিস্তৃতি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বক্তারা। সেই সাথে পাকশিমুল ইউনিয়নের যুবলীগ নেতা আব্দুল আজিজের বিরূদ্ধে দায়ের বানোয়াট মিথ্যা মামলাটির দ্রূত ফাইনাল রিপোর্টের দাবী জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর সহ ৩-৪ জন ইউপি চেয়ারম্যান। সেই সাথে প্রভাবশালী কতিপয় দালালের তদবিরে তদন্ত ছাড়া থানায় মামলা নথিভূক্ত না করার জন্যও সভাকে অনুরোধ করেন। গতকাল রোববার সকালে নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম মোসার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় উপরোল্লেখিত আলোচনা হয়। সভার শুরূতে ইউএনও লকডাউন শিথিল অবস্থায় সকলের করণীয় সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেন। বক্তব্য রাখেন- সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফারজানা প্রিয়াংকা, সরাইল থানার এস আই আব্দুস সহিদ। সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার, অরূয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আব্দুল আজিজের বিরূদ্ধে দায়ের করা মামলাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাকে অযথা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। কোন স্পর্শকাতর মামলা নথিভূক্তির আগে নির্বাচিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মতামতের প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি। পুলিশ মনে না করলে তো আমাদের কিছু করার নেই। জনপ্রতিনিধিদের চেয়ে দালালদের গুরূত্ব বেশী হবে কেন? আজিজের বিরূদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মামলা করেছে। থানাও কেন জানি দ্রƒত নথিভূক্ত করে আসামী ধরে জেলহাজতে পাঠিয়ে দিয়েছে। অযথা আজিজ জেল খেঁটেছেন। এ মামলার ফাইনাল রিপোর্ট প্রদানের দাবী রাখলাম। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া বেগম বলেন, দালালদের চাপে টাকা বিনিময়ে থানায় মিথ্যা মামলা হয়। আর পুলিশকে ম্যানেজ করেই চলে মাদক ব্যবসা। আসলে প্রশাসন বুঝতে পারেনি, সরাইলের জনগণ কি জিনিষ? তিনি এ বিষয়ে সভার সভাপতির হস্তক্ষেপ কামনা করেন। শাহজাদাপুর ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খোকন বলেন, কালিকচ্ছের ঋষি বাড়ির উৎপাদিত ছুলা মদ ড্রাম ও প্লষ্টিকের কন্টিন ভর্তি করে আমার ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে নিয়মিত সাপ্লাই দিচ্ছে কতিপয় মাদক ব্যবসায়ি। বেশ কিছু ওঠতি বয়সের ছেলে ছুলামদের দিকে আসক্ত হচ্ছে। সেখানকার যুব সমাজের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। এ প্রশাসনকে দ্রূত ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানান। সরাইল মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ বদর উদ্দিন বলেন, ধূঁমপান করোনা ভাইরাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অথচ সরাইলে প্রকাশ্যে যত্রতত্র চলছে ধূঁমপান। আর চায়ের দোকানে অযথা চলছে আড্ডা। এসকল বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব রাখেন তিনি। সরাইল প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুব খান করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা পালন করায় উপজেলা পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়া সরকারের পাশাপশি স্বেচ্ছাসেবী সহ ২২-২৫টি সংঘটন ও কয়েক ব্যক্তির কার্যক্রমকে দৃষ্টান্তমূলক বলে উল্লেখ করেন। তিনি টিঘর গ্রামের প্রবাসী পিতার শিশু কন্যা সামিয়ার বাল্যবিয়েকে ঘিরে পরবর্তীতে ঘটে যাওয়া ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, নিজের বাল্যবিয়ের প্রতিবাদ নিজেই করতে হয়েছে সামিয়াকে। আর এর ফল স্বরূপ সরাইলের শিশু সামিয়া এখন আইনের বেড়াজালে পড়ে চট্রগ্রামের হাটহাজারির সেফ কাষ্ট্ররিতে অবস্থান করছে। করোনার প্রভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে কম। অথচ তারাবি, সেহরি ও ইফতারের সময় বিনা অজুহাতে চলে যায় বিদ্যুৎ। বৃষ্টির ফোঁটা ও হালকা বাতাস হলেই ঘন্টার পর ঘন্টা লাপাত্তা থাকে বিদ্যুৎ। এ অবস্থার উত্তোরণ চাই সরাইলবাসী। করোনা কমে গেছে ভাবলে ভুল হবে। আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে। সামনে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে। আমাদের প্রত্যেককে আরো সচেতন হতে হবে। সরকারের নির্দেশনা পালনে আরো আন্তরিক হওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। ৮ বছর ধরে এ সভায় প্রস্তাব রাখছি নারীনির্যাতন, চাঁদাবাজি ও অপহরণ এ সমাজের ভদ্রলোকদের সম্মানহানি করার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কিছু দালাল। কমপক্ষে ৭-১০ দিন সময় নিয়ে নিবিড় ভাবে তদন্ত করে সত্যতা পেলে মামলা নথিভূক্ত করার দাবী জানিয়ে আসছিলাম। কে শুনে কার কথা। এ ছাড়াও বক্তব্য রাখেন কালিকচ্ছ ইউপি চেয়ারম্যান মো. সরাফত আলী। এস আই আব্দুস শহিদ বলেন, মাদকের সাথে পুলিশের কোন সম্পৃক্ততা নেই। মাদকের বিরূদ্ধে সরাইল থানা আপোষহীন। সরাইল থানা মিথ্যা মামলা নথিভূক্ত করে না। শিশু সামিয়ার বিষয়টি ব্যতিক্রম। আইনের বাহিরে যাওয়ার রাস্তা পুলিশের নেই।