আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ইউপি সদস্য কাইয়ুম সিকদার খুনের জেরে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নড়াগাতী থানাধীন কলাবাড়িয়া গ্রাম আতঙ্কের জনপদে পরিণত হয়েছে। এ হত্যাকান্ডের জের ধরে চারটি গ্রামব্যাপি চলছে সন্ত্রাসী তান্ডব। এ হত্যা মামলার আসামীদের দেড় শতাধিক বাড়িঘরে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহতের পক্ষের লোকজনের হামলা, হুমকি ও পুলিশের গ্রেফতারের ভয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়েছে আসামীপক্ষের লোকজন। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষজন। একরকম পুরুষশুন্য হয়ে পড়েছে কলাবাড়ীয়াসহ চারটি গ্রাম। তবে পুলিশের দাবি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ওই এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কালিয়া উপজেলার নড়াগাতী থানাধীন কলাবাড়িয়া, বিলাফোর, মুলখানা ও কালিনগরসহ ৪টি গ্রামজুড়ে বসবাসের ঘর-বাড়িতে চালানো হয়েছে ব্যাপক ভাংচুর ও লুটপাট। সর্বত্রই দেখা গেছে ধ্বংস-যজ্ঞের চিহ্ন। দেখে মনে হবে সুপারসাইক্লোন আম্পানের তান্ডবে এ ধ্বংস-যজ্ঞ হয়েছে। বাস্তবে তা নয়, নিহত কাইয়ূমের সমর্থিত লোকজনের সন্ত্রাসের ভয়াল থাবায় সবকিছু এভাবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। কলাবাড়িয়া সবুর ফকির-সবুর মোল্যার গ্রুপ এবং ইউপি সদস্য কাইয়ুম সিকদার গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলছিল দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদ। এর জের ধরে ২৬ মে রাতে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হয় জাতীয় কাবাডি দলের সাবেক অধিনায়ক ইউপি সদস্য কাইয়ুম সিকদার। হত্যার পর থেকে রাত নামলেই প্রতিপক্ষ নিহতের পক্ষের লোকজন বাড়িবাড়ি হানা দিয়ে আসামীপক্ষের ঘরবাড়ি ভাংচুর করে লুটে নিচ্ছে টিভি, ফ্রিজ, স্বর্ণালংকার, গরু, ছাগল, ধান, চাল, আসবাবপত্রসহ সহায় সম্বল। নিহতের লোকজনের হামলা ও হুমকির মুখে ইতোমধ্যে কলাবাড়িয়া গ্রামের সবুর মোল্যা, চান্দু মোল্যা, গাউস মোল্যা, চুন্নু মোল্যা, মাহবুর মোল্যা, সেকেন্দার শেখ মুলখানা গ্রামের সবুর ফকিরসহ দেড় শতাধিক পরিবার ভিটেমাটি ফেলে পালিয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনই আতঙ্কিত মানুষ গ্রাম ছাড়ছে। চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে সাধারণ মানুষও। ভিটেমাটি আঁকড়ে ধরেথাকা ভুক্তভোগীরা নিজেদের ওপর ঘটে যাওয়া বর্বরতার বিচার দাবি করেছেন।
এ বিষয়ে কলাবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান কায়েস বলেন, ‘আমি ১৯৯৭ সাল থেকে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আছি। আমার জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে কতিপয় লোক শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে এ হত্যাকান্ডে আমাকে আসামী করেছে। আমি বিগত প্রায় দেড় বছর এলাকা ছেড়ে নড়াইল কোর্টে আইন পেশার নিযুক্ত আছি। ঘটনার দিন আমি নড়াইলে ভার্জুয়াল কোর্টে মামলা করছিলাম এমন সময় এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। হত্যা পরবর্তী সময়ে এলাকার চারটি গ্রামের প্রায় দেড় শতাধিক বাড়িতে হামলা করে ঘরবাড়ি লুটপাট করা হয়েছে।’
অন্যদিকে, সহকারি পুলিশ সুপার রিপন সরকার বলেন, ‘হত্যার পরবর্তীতে কিছু সহিংসতা সংঘঠিত হলেও পুলিশের তৎপরতায় বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’
উল্লেখ্য কাইয়ুম সিকদার খুনের ঘটনায় কালাবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড. মাহমুদুল হাসান কায়েসসহ ৪৫জনের নামে নিহতের ছেলে মাইনুল ইসলাম মিল্টন বাদি হয়ে নড়াগাতী থানায় এ হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।