বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতির সভাপতি হাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান কবির এক যুক্ত বিবৃতিতে বলেন, বর্তমান করোনা মহামারীজনিত পরিস্থিতিতে কৃষক, কৃষি ও জাতীয় স্বার্থে আমরা গত ২১ মার্চ, ৫ এপ্রিল, ১৭ এপ্রিল, ২২ এপ্রিল, ৩০ এপ্রিল, ১৪ মে ও ২২ মে বিভিন্ন দাবিনামা পেশ করেছিলাম। উৎপাদন খরচ কমানো, ভূমির সুষ্ঠু বণ্টন, চাষে কৃষককে সরাসরি ভর্তুকি প্রদান করে কৃষি ও কৃষককে রক্ষা করা প্রয়োজন। কিন্তু সরকার সে পথে না হেঁটে সস্তার বাজিমাত করার জন্য ‘চাষের জমি ফেলে রাখলে অধি গ্রহন করা হবে’- এ বক্তব্য ছুড়ে দিয়েছে। চাষ না করার জন্য জমি ফেলে রাখার দায়ে যদি কৃষকের জমি অধিগ্রহন করতে হয় তাহলে রাষ্ট্র ও সরকারের গণবিরোধী ভূমিকার কারণে যে কৃষক সবজি, ফুলসহ অন্যান্য কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য পায়নি তার দায়ও সরকারকেই বহন করতে হবে। ধান মেরে চিংড়ি ও অন্যান্য মৎস্য চাষ হয়েছে রাষ্ট্রীয় মদদে। তারাই অপরিকল্পিত ভাবে ফসলী জমি ধ্বংস করে অপরিকল্পিত অবকাঠামো ও স্থাপনা নির্মাণ করে চলেছে। কৃষি উৎপাদনের উপকরণকে বাণিজ্যিক পণ্যে রুপান্তরিত করেছে এবং কৃষিক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত নয়াউপনিবেশিক ও আধাসামন্ত্রতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যকরি রেখেছে। বার বার আবেদন নিবেদন করার পরও খাসজমি ভূমিহীন গরীব কৃষকদের মাঝে বণ্টন করেনি। তারা সুন্দরবন ধ্বংস, ওয়াপদ বাঁধ সৃষ্টি, জলবায়ু ধ্বংস করে দেশের বন্যা, জলাবদ্ধতা তথা প্রাকৃতিক বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়ার কুকর্ম সম্পন্ন করায় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, লবণাক্ততা, পানির স্তর নেমে যাওয়ার সঙ্কটসহ সামগ্রীক বিপর্যয় সৃষ্টি করে কৃষকের রক্ত ঘামানো ফসল বার বার ধ্বংস করেছে। নদ-নদী ভরাট হয়ে বন্যা-অক্যাল বন্যায় ফসলহানিও ঘটে চলেছে। উপরোক্ত সামগ্রীক কৃষক ও কৃষি তথা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের স্বার্থ পরিপন্থি ভূমিকা নিয়েছে। অপরদিকে কৃষি উৎপাদনে সার-বীজ-কীটনাশকসহ সেচে ব্যবহৃত তেল-ডিজেল বিনামূল্যে ও অন্যান্য উপকরণ ভর্তুকিমূল্যে প্রদান এবং উৎপাদন ব্যয়ের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ মূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা বিধান না করে মধ্যস্বত্তভোগিদের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। ফলশ্রুতিতে আজ ধনী কৃষক মধ্যকৃষকে, মধ্যকৃষক গরীব কৃষকে আর গরীব কৃষক ভূমিহীন কৃষকে পরিণত হয়ে চলেছে। কৃষি উৎপাদন বিমুখ হয়ে কৃষিতে জীবিকা নির্বাহ করতে না পেরে দেশের শহর বন্দরসহ বিদেশে শ্রম দাসত্ব করতে বাধ্য হচ্ছে। চরম নির্যাতন-নিপীড়িত ভোগ করছে, অঘোরে জীবন দিচ্ছে। অথচ রাষ্ট্র ও সরকার তার দায়-দায়িত্ব পালন না করে এ ধরণের নির্দেশ প্রদান করাটা সম্পূর্ণ গণবিরোধী। আমরা এ নির্দেশনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বর্তমান পরিস্থিতিতে উত্থাপিত দাবিসমূহসহ কৃষকের ৭ দফা দাবি বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানাই। একই সাথে কৃষককে সহায়তা ও উদ্বুদ্ধ করার বদলে হুমকি প্রদান মূলক নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবিতে কৃষকসহ সমগ্র জনগোষ্ঠিকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।