করোনায় আক্রান্ত মানেই মৃত্যু নয়। ভয় না পেয়ে সাহসিকতা আর সচেতনতার সাথে করোনাকে পরাজিত করা সম্ভব। এমনই দাবি করেছেন প্রথম দফায় করোনাজয়ী চিকিৎসক জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল কর্মকর্তা ডাঃ মুহাম্মাদ শিহাব উদ্দিন।
সস্প্রতি সুস্থ্য হয়ে ওঠা ওই চিকিৎসকের অভিজ্ঞতার কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। যদিও তিনি দ্বিতীয়বারের মতো আবারও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তবে নিয়ম মেনে চললে সুস্থ্য হওয়া সম্ভব যেমন দাবি তার, তেমনি এবারেও সুস্থ্য হয়ে আবার মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
সূত্রমতে, মানুষের সেবায় নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে করতে হঠাৎ একদিন নিজেই করোনায় আক্রান্ত হন। এরপর প্রথমে নিজ বাসায় ও পরে শেবাচিমের আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। সেরেও উঠেছেন অল্পসময়ের মধ্যে। তারপর আবার কর্মস্থলে যোগদানের মধ্যদিয়ে মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন।
প্রথম দফায় করোনা থেকে আরোগ্য লাভ করা একজন সৌভাগ্যবান হিসেবে ডাঃ শিহাব উদ্দিন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অসুস্থ রোগীকে প্লাজমা দেওয়ার। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজন নারী রোগিকে বাঁচাতে ছুটে যান এবং প্লাজমা দিয়েও আসেন। এরপর ৩০ মে আবার নমুনা দিয়ে টেস্ট করিয়ে গত ২ জুন জানতে পারেন দ্বিতীয় দফায় তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তারপরেও হাল ছাড়েননি ওই চিকিৎসক, স্বপ্ন দেখছেন সাহস নিয়েই আগামীর পথচলার।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রথম দফায় সুস্থ্য হওয়া নিয়ে ডাঃ মুহাম্মাদ শিহাব উদ্দিনের পোস্টটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো। “অনেকেই জানতে চেয়েছেন কিভাবে হল, কি কি করেছি, কেমন আছি। করোনা মানেই নিশ্চিত মৃত্যু নয়। ভয় নয়, সাহসিকতা আর সচেতনতার সাথে করোনাকে পরাজিত করা সম্ভব। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি”।
গত ১৩ এপ্রিল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত অবস্থায় জানতে পারি একজন নার্স, একজন পিয়ন ও জেনারেল ওয়ার্ডে সংঘর্ষে আহত হয়ে ভর্তিকৃত এক রোগীর কোভিড-১৯ পরীক্ষার রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে।
পরবর্তীতে আমার (শিহাব উদ্দিন) নমুনা পরীক্ষার পর ২০ এপ্রিল জানতে পারি আমি নিজেই করোনার আক্রান্ত হয়েছি। বাসায় আলাদা রুমে কয়েকদিন ছিলাম। ওইসময় নিজের শরীরকে ঠিক রাখার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিলাম এবং বাসার সবাইকেও বললাম, যেমন-প্রতিদিন একটা করে মাল্টিভিটামিন ট্যাবলেট, দুইটা ভিটামিন-সি ট্যাবলেট আর বেশি পরিমাণে ফল ও পানি খাওয়া। গরম পানি আর আদা চা খেতাম বেশি এবং গরম পানি দিয়ে অন্তত তিনবার কুলকুচি করতাম। প্রতিদিন দুই বেলা ব্যায়াম করা। জ্বর, কাশি আর ডায়রিয়া ছিলো তার জন্য কিছু ওষুধ খেয়েছি। এ ছাড়া প্রতিদিন সাবান দিয়ে গোসল করা। আর প্রতিদিনের কাপড় প্রতিদিন ধুয়ে ফেলা। রুটিন মেনে ঘুমানো, খাওয়া ও নামাজ পরা।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন পরিবারের সদস্যরা আমার রুমের দরজার বাহিরে খাবার রেখে যেতো। পরবর্তীতে আমি ওই খাবার নিয়ে খেতাম। আর আমার কাছে যে খাবার পাঠানো হতো তার কোনোটাই আমি ফেরত দিতাম না, যাতে কোনোভাবেই সংক্রমণের সম্ভাবনা না থাকে। পরবর্তীতে ২৩ এপ্রিল সকালে আমি শেবাচিম হাসপাতালের আইসোলেশনে চলে যাই। সেখানে খুব দ্রুতই আমার ফলোআপ রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পর ২৭ এপ্রিল আমি হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে আসি। বাসার সবার রিপোর্টও নেগেটিভ আসে।
পরবর্তীতে কর্মস্থলে যোগদান করে সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে থাকি। এরইমধ্যে একজন নারী রোগীকে বাঁচাতে প্লাজমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। এজন্য গত ২৬ মে ঢাকায় গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্লাজমা দিয়ে বরিশালে ফিরে আসি। পাশাপাশি যথানিয়মে কাজ চালিয়ে যেতে যেতে অনুভব করি জ্বর-সর্দি-কাশি অর্থাৎ নিজের শরীরে করোনার উপসর্গ। যদিও প্রথমবার এসবের কোনো উপসর্গই আমার ছিলোনা। তাই ৩০ মে আবার করোনা টেস্টের জন্য নমুনা দেই যার রিপোর্ট গত ২ জুন পজেটিভ আসে।
ঢাকা থেকে আসার পর কোনো লক্ষ্যণই ছিলোনা জানিয়ে ডাঃ শিহাব উদ্দিন বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া এক রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার পর থেকে কিছুটা সংশয়ে ছিলাম। কারণ ওই রোগী ঢাকা থেকে বাবুগঞ্জে এসেছিলেন। যাইহোক আবারও সুস্থ্য হয়ে মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করবো এ আশা নিয়েই আগের মতো নিজেকে আলাদা রেখে চিকিৎসা নিচ্ছি। নিয়ম-কানুন মেনে চলছি। আর সবাইকে আহবান জানাচ্ছি, করোনা একবার হলে আবার যে হবে না, এটা ভাবার কিছু নেই। তাই সচেতনতা আর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই করোনা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। আর উপসর্গ থাকলে কখনো উচিত হবেনা, তা গোপন করা, কারণ এ থেকেই সংক্রমিত হবে আশপাশের মানুষ।
বরিশালের সিভিল সার্জন ডাঃ মনোয়ার হোসেন বলেন, প্রথমবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ্য হয়ে সাবেক এক সংসদ সদস্যর স্ত্রীর জন্য প্লাজমা দিতে ঢাকা গিয়েছিলেন ডাঃ মুহাম্মাদ শিহাব উদ্দিন। এরপর দ্বিতীয় দফায় তার করোনা ধরা পড়লো, যা খুবই দুঃখজনক, তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।