চাদা না পেয়ে সংখ্যালঘু মিষ্টি ব্যবসায়ীর বসতবাড়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর, মারপিট ও লুটপাটে ৪ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতিসাধনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ২৯ মে সন্ধ্যায় বগুড়ার শেরপুর পৌর শহরের পূর্ব ঘোষপাড়ায় (৩নং ওয়ার্ড) ঘটেছে। এ ঘটনায় থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়েরের ৫/৬দিন অতিবাহিত হলেও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার পূর্বক আইনি ব্যবস্থা ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভূক্তভোগী পরিবার।
এ ঘটনায় ৫ জুন শুক্রবার বেলা ১২টায় শেরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মিষ্টি ব্যবসায়ী বিপুল মোহন্ত।
সংবাদ সম্মেলনকারীর লিখিত অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, শেরপুর পৌর শহরের পূর্ব ঘোষপাড়ার বিশ্বনাথ মোহন্তের ছেলে বিপুল মোহন্ত তার বাড়ীতেই মিষ্টির কারখানা তৈরী করে ব্যাবসা করে আসছিল। তার ব্যবসায় ঈশর্^াম্বিত হয়ে প্রতিবেশী সিরাজ বিশ্বাসের ছেলে সোহেল বিশ্বাস ইতঃপূর্বে বিপুল মোহন্তের কাছে ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে নানা ভয়ভীতি ও হুমকী দেখায়। তার অনৈতিক দাবীর প্রেক্ষিতে কয়েক দফায় ১২ হাজার টাকাও প্রদান করেন।
সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, ২৯ মে বিকালের দিকে মিষ্টির দোকানে আমি কাজ করছিলাম। এ সময় আমার ছেলে রিংকু (৬) ও সোহেল বিশ্বাসের মেয়ে ছিনথিয়া (৬) খেলাধুলাকে কেন্দ্র করে তুচ্ছ ঘটনায় উভয় পরিবারের মাঝে ঝগড়া হলেও পরে এলাকার লোকজনদের উপস্থিতিতে বিষয়টি মিমাংসাও করে ফেলি। এরপরে ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে আমার কারখানায় আমি ও আমার স্ত্রী রমা মোহন্ত, ছেলে জয় মোহন্ত ও কারিগর শ্রমিক কাজ করার সময় সোহেল বিশ্বাস, গফুর শেখ, পলি আক্তার, সেলিম শেখ, সাহেব আলী ও ভোলা দাসসহ ৪০/৪৫ জনের সংঘবদ্ধ দল দেশীয় অস্ত্র লাঠিশোঠা, লোহার রড, কাঠের বাটাম নিয়ে অতর্কিতভাবে কারখানায় হামলা চালায়। এ সময় সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ সোহেল বিশ্বাস আমাকে বলে যে, ‘এই ন্যাংটির বাচ্চা, তুই বাকী চাঁদাগুলো দে’। আমি অস্বীকৃতি জানালে সংঘবদ্ধরা আমাকে কিলঘুষি মেরে আমার পকেটে থেকে ৪৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ সময় আমার স্ত্রী রমা মোহন্ত এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা আমার কারখানার জলন্ত খড়ি দিয়ে আঘাত করে। একপর্যায়ে স্ত্রীর গলা থেকে সোনার চেইন ছিড়ে নিয়ে শ্লীলতাহানি করার চেস্টা ও আমার ছেলে জয়কে মারধর করে। তাদের মারপিটে স্ত্রী ও ছেলে দৌড়ে বাড়ির ঘরের মধ্যে ঢুকলে সন্ত্রাসীরা ওখানেও হামলা চালিয়ে আমার ঘরে রক্ষিত শোকেচ ড্রয়ারের তালা ভেঙ্গে নগদ ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যাংকের ও বাড়ির মুল্যবান কাগজপত্র নিয়ে যায়। এর পরে আমার মেয়ে বর্ষা মোহন্তকে মারধর করে কানের দুল ছিনিয়ে নিয়ে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমাদের চিৎকারে আশেপাশের প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসীরা পুনরায় কারখানায় মধ্যে রাখা মিষ্টির কাজে ব্যবহৃত মিষ্টিসহ ১৫ গামলা, ঘরে বেড়া ভাংচুর, ১বস্তা চিনি সহ প্রয়োজনীয় বিনষ্ট করে ১ লক্ষাধিক টাকা ক্ষতিসাধনসহ প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকা লুট করে নিয়ে বীরদর্পে চলে যায়।
এ ঘটনায় বিপুল মোহন্ত বাদী হয়ে গত ২ জুন সন্ধ্যায় সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ সোহেল বিশ্বাস, গফুর শেখ, পলি আক্তার, সেলিম শেখ, সাহেব আলী, ভোলা দাস সহ ৪০/৪৫ জন(অজ্ঞাতনামা) আসামি করে শেরপুর থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। এর প্রেক্ষিতে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঘটনার সত্যতা পাওয়ার ৫/৬দিন অতিবাহিত হলেও অদ্যাবধি কোন আইনি ব্যবস্থা না পাওয়ায় পরিবার পরিজনের জীবনের নিরাপত্তাহীনতা ভূগছেন। এদিকে আসামীপক্ষ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে ঘটনার মিমাংসার জন্য হুমকী ধামকী দিয়ে আসছে বলে ভুক্তভোগী বিপুল মোহন্ত জানিয়েছেন।
এ ছাড়াও থানায় লিখিত অভিযোগে উল্লিখিত আসামীদের মধ্যে গফুর শেখের স্ত্রী শেফালী খাতুন থানার ওসি সাহেবের বাসার কাজের মেয়ে হওয়ার সুবাদে এ ঘটনায় ‘আসামীদের গ্রেফতারতো দুরের কথা, মামলা বা এজাহার হিসেবে গণ্যই করতে পারবো না’ বলে আসামি পক্ষরা এলাকায় বলে বেড়াচ্ছে।
এ দিকে থানার বড়কর্তার সাথে যদি বিবাদী বা বিবাদী পরিবারের লোকজনের গোপন সখ্যতা থাকে তাহলে আমাদের মতো গরীব ও সহজ সরল লোকজন কিভাবে সঠিক বিচার পাইবে? বলে কান্নাজড়িত কন্ঠে এমন হতাশা ও আক্ষেপ করে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও আইনি ব্যবস্থা চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ভূক্তভোগী বিপুল মোহন্ত ও তার স্ত্রী সন্তানেরা।