করোনাভাইরাসের কেউ মাস্ক না পরলে জেল জরিমানার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে। এ যেন নিরন্ন মানুষদের সাথে মরার উপর খড়ার গা হয়ে এসেছে। যখন নিরন্ন মানুষ চাকুরি হারিয়ে-ব্যবসা হারিয়ে অভূক্ত তখন নিরন্ন মানুষকে করোনা পরিস্থিতিতে সহায়তার হাত না বাড়িয়ে অন্ধকারের দিকে কেন ঠেলে দিচ্ছে, তা আমার বোধগম্য নয়; আমার মত বোধগম্য নয় অসংখ্য অভূক্ত-নিরন্ন মানুষেরও।
বাংলাদেশে সহায়তার মাত্র আড়াই হাজার টাকা করোনা পরিস্থিতিতে লুট হয়েছে, লুট হয়েছে ত্রাণও; এসব যখন অহরহ হচ্ছে; তখন নিরন্ন মানুষদের কথা না ভেবে বিপদ তৈরি করতে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাইরে চলাচলের ক্ষেত্রে সবসময় মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তা নাহলে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ এর ধারা ২৪ (১), (২) ও ধারা ২৫ (১) ও (২) অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর এই আইন বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন ও যথাযথ কর্তৃপক্ষ। আর বলা হচ্ছে- আইনের ধারা অনুযায়ী কেউ মাস্ক না পড়ে বের হলে ৬ মাস জেল অথবা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এছাড়া কেউ যদি এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন তাহলে তিন মাসের জেল এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮, ২৪ (১), (২) দেখা যায়: ২৪। (১) যদি কোনো ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণুর বিস্তার ঘটান বা বিস্তার ঘটিতে সহায়তা করেন, বা জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও অপর কোনো ব্যক্তি সংক্রমিত ব্যক্তি বা স্থাপনার সংস্পর্শে আসিবার সময় সংক্রমণের ঝুঁকির বিষয়টি তাহার নিকট গোপন করেন তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ। (২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ৬ (ছয়) মাস কারাদন্ডে, বা অনূর্ধ্ব ১ (এক) লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন। অথর্ব মন্ত্রী-সচিবরা যখন সকালে এক কথা, বিকেলে এক কথা বলছে, তখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সংবিধান শিখিয়ে দিয়ে বলছে যে, আইনের ২৫ ধারায় রয়েছে- ২৫। (১) যদি কোনো ব্যক্তি- (ক) মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তাহার উপর অর্পিত কোনো দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন, এবং (খ) সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশ্যে মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোনো নির্দেশ পালনে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ। (২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনূর্ধ্ব ৩ (তিন) মাস কারাদন্ডে, বা অনূর্ধ্ব ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদন্ডে, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন। একই সাথে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, রাত ৮টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত অতীব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। মানুষের পেটে ভাত নাই, বাড়ি ভাড়া দিতে ব্যর্থ ভাড়াটিয়াদেরকে রাতের আঁধারে বের করে দিচ্ছে বাড়িওয়ালারা, এমন পরিস্থিতিতে তাদের উচিৎ ছিলো গণমানুষের কথা ভাবা, মানুষের খাদ্য নিশ্চয়তা নিয়ে এগিয়ে আসা; তা না করে গণপরিবহন ভাড়া ৬০ ভাড় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়েছে। অথচ বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। বাংলাদেশের একটি লিখিত সংবিধান রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে সাধারণ জনগণের অধিকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত একটি বিশেষ অধ্যায় রয়েছে। ঐ অধ্যায়ে আইনের দৃষ্টিতে সমতা, সরকারি নিয়োগ লাভে সুযোগের সমতা, আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার, জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার রক্ষণ, গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ, বিচার ও দন্ড সম্পর্কে রক্ষণ, চলাফেরার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক-স্বাধীনতা, পেশা বা বৃত্তির স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার, গৃহ যোগাযোগের রক্ষণ ও মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ ইত্যাদি বিষয়ে অনেকগুলো ধারা রয়েছে। আমাদের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ মন্ত্রীবর্গ ও সরকারের কর্মকর্তারা সংবিধানের এই মৌলিক ধারাগুলো মেনে চলা ও সর্বাবস্থায় বাস্তবায়নের জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু রাষ্ট্র ও সরকারের কর্তাব্যক্তিরা কি আমাদের সংবিধানের মৌলিক অধিকার সম্পর্কিত ধারাগুলো প্রতিপালন করে চলেন বর্তমানে এ প্রশ্ন সাধারণ জনগণের।
স্বাধীনতার ৪৯ বছার পরে এসেও বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাম্প্রতিক কর্মকান্ড ও ভূমিকার কারণে আজ এ প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের কি মৌলিক কোনো অধিকার নেই। দেশের মধ্যে যদি কোনো নাগরিক শৃঙ্খলা বিরোধী কাজ করে তাহলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাকে আটক করে আইনানুযায়ী আদালতে সোপর্দ করতে পারেন। অথবা কোনো নাগরিক বা কোনো গোষ্ঠীকে সন্দেহ হলে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেন। কিন্তু রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো মিছিল সমাবেশে যোগদানকারীদের ওপর প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করছে। মাত্র ক’দিন আগে আগে যাত্রাবাড়ী এলাকায় হরতাল চলাকালে পুলিশ বিনা কারণে গুলি করে খলিল নামে এক ছাত্রকে হত্যা করে। তারপর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সভা সমাবেশ থেকে শুরু করে বিবাহ অনুষ্ঠান থেকেও সাধারণ জনগণকে আটক করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যা আমাদের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। আমাদের সংবিধান সাধারণ জনগণকে সভা -সমাবেশ ও সংগঠন করার অধিকার দিয়েছে। কিন্তু সরকার ও তার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মৌলিক অধিকারকে চরমভাবে ভূলুণ্ঠিত করছে।
সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দেশের সাধারণ জনগণের নিরাপত্তার জন্যই নিয়োগ ও কর্ম সম্পাদন করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তারা দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করবে। তবে তাদেরকে কাজ করতে হবে মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা করে এবং আইন অনুযায়ী। কিন্তু আমরা সাম্প্রতিক সময়ে দেখছি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইন বহির্ভূত কর্মকান্ড করছে।
হরতাল বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির একটি স্বীকৃত কর্মসূচি। যে কোনো রাজনৈতিক দল সরকারের কর্মকান্ড বা সিদ্ধান্তের সাথে দ্বিমত পোষণ করে রাজনৈতিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে হরতাল আহ্বান করতে পারে। হরতালের সমর্থকরা হরতালের পক্ষে মিছিল মিটিং ও পিকেটিং করতে পারে। রাজনৈতিক দলের এসব কর্মসূচির ব্যাপারে সরকারের দ্বিমত থাকতে পারে। কিন্তু তাই বলে সরকারের নির্দেশে হরতালের সমর্থনকারী দলের নেতাকর্মীদের পিকেটিং ও মিটিং-এ গুলি চালিয়ে নেতাকর্মীদের হত্যা করতে পারে না। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উপর এ ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন আইনের শাসনের চরম লঙ্ঘন এবং আমাদের সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। আমি মনে করি সরকার ও দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেশের বিরোধী দল তথা সাধারণ জনগণের প্রতি এ ধরনের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা উচিত। সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আমাদের সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকার ও আইন অনুয়ায়ীই দেশের সাধারণ জনগণ তথা দলমত নির্বিশেষে কাজ করতে হবে। সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার রক্ষায় যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করবে এটাই আমাদের কাম্য। সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নীতিনির্ধারকদের এ বিষয়ে বোধোদয় হোক এ প্রত্যাশা সকলের।
একই সাথে করোনা পরিস্থিতিতে আইনের চোখে সমতার কথাও মনে রাখতে হবে বিনয় আর ভালোবাসায়। সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী; আর তার প্রমাণ সংবিধানের এই ধারাতে রয়েছে- ২৮(১) ধর্ম প্রভৃতি কারনে বৈষম্য: কেবলমাত্র ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী,নারী পুরুষ বা জন্মস্থানের কারনে কোন নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না। ২৮(২) নারী পুরুষের সমঅধিকার: রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবে। ২৯(১) সরকারী নিয়োগ লাভে সমতাঃ (১) প্রজাতন্ত্রে কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে। (২) কেবল ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠি, নারী পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারনে কোন নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হবে না, কিংবা সেক্ষেত্রে তার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না। ৩১. আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার: আইনের আশ্রয় লাভ এবং আইনানুযায়ী ব্যবহার লাভ যে কোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার। বিশেষত: আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না, যাতে কোন ব্যাক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনাম বা সম্পত্তির হানি ঘটে। ৩২. জীবন ও ব্যাক্তি স্বাধীনতা লাভের অধিকার: আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যাক্তি স্বাধীনতা হতে কোন ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না। ৩৩. গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ: কোন গ্রেফতারকৃত ব্যাক্তিকে গ্রেফতারের কারন জ্ঞাপন না করে প্রহরায় আটক রাখা যাবে না এবং উক্ত ব্যাক্তিকে তার মনোনিত আইনজীবীর সাথে পরামর্শ ও তার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হতে বঞ্চিত করা যাবে না। গ্রেফতারকৃত ও প্রহরায় আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের চবিবশ ঘন্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে এবং আদালতের আদেশ ব্যতীত তাকে উক্ত সময়ের অধিককাল আটক রাখা যাবে না। ৩৪. জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধকরণ: সকল প্রকার জবরদস্তি শ্রম নিষিদ্ধ এবং এ বিধান কোনভাবে লঙ্ঘিত হলে তা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য হবে। ৩৫. বিচার ও দন্ড সম্পর্কে-
ক) এক অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারীতে সোপর্দ ও দন্ডিত করা যাবে না। খ) ফৌজদারী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যাক্তি আইনের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত বা ট্রাইব্যুনালে দ্রুত ও প্রকাশ্যে বিচার লাভের অধিকারী। গ) কোন অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না। ঘ) কোন ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেয়া, নিষ্ঠুর, অমানবিক বা লাঞ্চনাকর দন্ড দেয়া যাবে না। ৩৬. চলাফেরার স্বাধীনতা: জনস্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে বাংলাদেশের সবর্ত্র অবাধ চলাফেরা, দেশের যে কোন স্থানে বসবাস ও বসতি স্থাপন এবং বাংলাদেশে ত্যাগ ও বাংলাদেশে পুনঃপ্রবেশ করবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। ৩৭. সমাবেশের অধিকার: জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। ৩৮. সংগঠনের স্বাধীনতা: জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে। তবে শর্ত থকে যে নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্পর্ক বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে এবং দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গী কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে কোন সমিতি বা সংঘ গঠন করার অধিকার থাকবে না। ৩৯. চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা: ক) চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়। খ) রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশী রাষ্ট্র সমূহের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে এবং আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তি সঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে (১) প্রত্যেক নাগরিকের বাকস্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। (২) সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকবে। ৪০. পেশা ও বৃত্তির স্বাধীনতা: আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তি সঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন আইনসঙ্গত পেশা বা বৃত্তি গ্রহণের এবং যে কোন আইনসঙ্গত কারবার বা ব্যবসা পরিচালনার অধিকার থাকবে। ৪১. ধর্মীয় স্বাধীনতা: আইন শৃঙ্খলা ও নৈতিকতার সাপেক্ষে ক) প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার থাকবে। খ) প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার থাকবে। ৪২. সম্পত্তির অধিকার: আইনে আরোপিত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের সম্পত্তি অর্জন, ধারন, হস্তান্তর ও অন্যভাবে বিধিব্যবস্থা করার অধিকার থাকবে। আইনের কর্তৃত্ব ব্যতীত কোন সম্পত্তি বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ, রাষ্ট্রায়ত্ব বা দখল করা যাবে না। ৪৩. গৃহ ও যোগাযোগ : রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, জনশৃঙ্খলা, জনগণের নৈতিকতা বা জনস্বার্থের প্রতিহুমকি সৃষ্টি না করলে কোন নাগরিকের গৃহে বলপূর্বক প্রবেশ, তল্লাশি ও আটক করা যাবে না। এছাড়া ও প্রত্যেক নাগরিক তার চিঠিপত্রের অধিকার লাভ করবে। ৪৪. মৌলিক অধিকার বলবতকরণঃ সংবিধানের ৩য় অধ্যায়ে বর্ণিত মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের জন্য কোন ব্যক্তি হাইকোর্ট বিভাগে যেতে পারবে।’ এটাই যখন বাস্তবতা; তখন নিরন্ন মানুষগুলো কিন্তু চাইলেই তাদেরকে করো না পরিস্থিতিতেও অভূক্ত রাখা হচ্ছে? কেন তাদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় কাজ করছে না সরকার? এই প্রশ্ন নিয়ে আইনগতভাবে পদক্ষেপ নিতে পারে। সে কথা ভুলে গেলে চলবে না। নাগরিক অধিকার অন্যদের অধিকার অক্ষুণ্ণ রেখে রাষ্ট্রের বিধিবহির্ভূত পরিসরে বাধাহীন, নিরুপদ্রব ও সুন্দর জীবনযাপনের জন্য সমাজের সকল ব্যক্তির প্রাপ্য অধিকারসমূহ। সাধারণত আইনি ঘোষণা বা সাংবিধানিক বিধিমতে প্রয়োজনে আইনের রক্ষকদের দ্বারা এসব অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়। সাধারণ নাগরিকদের বিরুদ্ধে অত্যাচারী রাষ্ট্র এবং এর বিভিন্ন এজেন্টদের ক্ষমতার অপব্যবহার রোধে এ অধিকারসমূহ সংরক্ষণ ও চর্চা করা হয়। রাজতন্ত্র, সামন্ত জায়গিরতন্ত্র ও জমিদারিতে তো বটেই, স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থায় বা দুর্বল গণতন্ত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার অতি সাধারণ ঘটনা। এ অধিকারসমূহ অবশ্য তখনই ভোগ করা যায় যখন অন্যদের ক্ষেত্রেও একই অধিকার স্বীকৃত থাকে; সে সঙ্গে সমাজে সাধারণ কল্যাণ নিশ্চিত করার প্রয়োজনগত সম্পর্কসূত্রে উক্ত অধিকারগুলো সুস্পষ্ট সীমারেখায় চিহ্নিত করা থাকে। ভুলে গেলে চলবে না এসব বাস্তবতা; আলোর কথা। গণমানুষের অধিকারের কথা; তাদের জীবন-নিরাপত্তার কথা ভেবে বাংলাদেশকে করোনা পরিস্থিতিতেও এগিয়ে যেতে হবে। তা না হলে সংবিধান শুধু জরিমানা আদায়ের জন্যই ব্যবহার হবে না, ব্যবহার হবে বয়ে চলা লোভি এমপি-মন্ত্রী-সচিবদের জোয়ার থামাতেও...
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি