স্বৈরতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র ও আমলাতন্ত্রের রাহুগ্রাস থেকে মুক্তির লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার হিসেবে অলংকিত হয়। সংবিধানে জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। অর্থাৎ প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারীরা জনগণের সেবক। স্বৈরতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র ও জমিদারতন্ত্রের মতো দেশের জনগণ কারও ধারক বাহক, হুকুম বরকন্দাজ বা সেবাদাস নহে। তদোপরি ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে সৃষ্ট আমলাতন্ত্রের পায়রুবী না করার জন্যই তাদের বিরুদ্ধে এত সংগ্রাম, রক্তক্ষয়, ত্যাগ ও স্বাধীনতার যুদ্ধ। ফলশ্রুতিতে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ ও পাকিস্তানি তস্করদের বিতাড়ন ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা।
ব্রিটিশ শাষিত পরাধীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর ১৯৬ বছরের শোষণ, ১৯৪৭ সালের পর পাকিস্তানিদের ২৪ বছরের শোষণ ও জমিদারতন্ত্রের লেবাসে আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অবর্ণনীয় নিষ্পেষন আজও ভুলে যাওয়ার নহে। জমিদারদের শোষণ, নির্যাতন, ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি আমলাদের রক্তচক্ষু, যারপর নাই কষাঘাত, অন্যায়, অবিচার, বুটের লাথি, গুলি আজও ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। এমনকি আমলাতন্ত্রের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে জমিদারদের খাজনা ট্যাক্স যথাসময়ে পরিশোধ না করার অপরাধে প্রজাদেরকে ঘোড়ার পায়ে বেঁধে ঘোড়া দৌড়াতে ওরা কুন্ঠাবোধ করেনি। আমলাদের ইতিহাস বড়ই মর্মান্তিক, হৃদয় বিদারক ও মর্মস্পশী। সেই সময় জেলা মহকুমা ও থানা পর্যায়ের কর্মকর্তারা এলাকার সাধারণ মানুষের ওপর যে অমানুষিক নির্যাতন ও নিপিড়ন চালাত, যার রয়েছে অজস্র ঐতিহাসিক ও দালিলিক উদাহরণ। সেই সময় আমলারা এত বেপরোয়া ছিল যে প্রজাদের সাথে ক্রীতদাসের মতো আচরণ করতেও কুন্ঠাবোধ করত না। এমনকি আমলাদের মতের বিরুদ্ধে কোনো কিছু বললে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করে এমনিতেই শাস্তি দিয়ে জেলখানায় পাঠিয়ে দেয়া হত।
আঞ্চলিক বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে জানা যায়, ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের স্বাধীনতার আগে তদানীন্তন কিশোরগঞ্জ মহকুমার পাকুন্দিয়া বাজিতপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় জমিদারদের বরকন্দাজ হিসেবে এ সমস্ত এলাকার থানা কুশীলব সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা এবং অন্যান্য আমলারা এলাকার প্রজাদের সীমাহীন অত্যাচার, উৎপীড়ন ও নির্যাতন চালিয়ে থাকে। সেই সময় পাকুন্দিয়া থানার কর্মকর্তা হীরালাল, বাজিতপুর সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা কৃষ্ণপদ সহ আরও অনেকের নাম উল্লেখ রয়েছে। এ ব্যাপারে এলাকার জনগণ কিশোরগঞ্জের এসডিও, এসডিপিওর নিকট বিচারপ্রার্থী হলে তাদের ওপর অত্যাচারের খড়গ নেমে আসে। তখন লালটুপি ও হাফপ্যান্ট পড়–য়া দাঙ্গা পুলিশ তাদেরকে লাঠিপেটা করে হাত-পা ভেঙ্গে দেয় এবং অনেককে
জেলখানায় প্রেরণ করে থাকে। পাকিস্তান সৃষ্টি হওয়ার পরও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বিভীষিকার কারণে জনগণের ওপর আমলাদের বেদনাবিদুর ঘটনার শেষ থাকেনি।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার হিসেবে সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে থাকে। অর্থাৎ দেশের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রজাতন্ত্রের সেবক। এখানে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানী আমলের আমলাদের মতো জনগণের ওপর খবরদারী, অত্যাচার, অবিচার ও অশোভন আচরণের কোনো সুযোগ রাখা হয়নি। অর্থাৎ আমলাতন্ত্র নামক বুরে্যাক্রেসি শব্দটিকে বিষোদগার হিসেবে প্রত্যাখান করা হয়ে থাকে। সংবিধানে উল্লেখ করা হয়, দেশের মালিক জনগণ, জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস ও চাবিকাটি। অর্থাৎ কবু ড়ভ ঃযব ংঃধঃব। এমনকি স্বৈরতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র ও জমিদারতন্ত্রের মতই স্বাধীন বাংলাদেশে আমলাতন্ত্র (বুর্যোক্রেসি) ও আমলাতান্ত্রিকতাকে মনে করা হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে ব্রিটিশ ও পাকিস্তানের সৃষ্ট আমলাতন্ত্রের (বুর্যোক্রেসি) বিভীষিকার অবসানতো দুরের কথা বরং এই আমলাতন্ত্র (বুরে্যাক্রেসি) জনগণের মাথার ওপর নতুন উচ্ছাসে চেপে বসেছে। স্বাধীন দেশের সরকারী অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রজাতন্ত্রের জনগণ যে আচার, আচরণ, সহযোগিতা, সহমর্মিতা, সেবা পাওয়ার কথা তা অনেকের কাছে প্রত্যাশা করাও যেন অমূলক হয়ে পড়েছে। গভর্নমেন্ট অব দি পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ এ ব্যাক্যটির মর্ম উপলব্দি করতেও যেন অনেকেই ভুলে যেতে বসেছে। এছাড়া গণতন্ত্রের মূল কথাই হচ্ছে অব দি পিপলস, বাই দি পিপলস এন্ড ফর দি পিপলস। এটার বাস্তবায়ন ও চর্চা আমলাতন্ত্রের কারণে বাংলাদেশসহ আরও অনেক গণতান্ত্রিক দেশে অনুপস্থিত বলে অনেকেই মনে করে থাকে।
অনেকেই মাসের পর মাস ফাইল আটকে রাখা, সময়মতো অফিসে না আসা, ঘন্টার পর ঘন্টা লালবাতি জ্বালিয়ে গল্প গুজব, জনগণের সাথে অসদাচরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার করলেও এ ব্যাপারে জবাবদিহিতা ও প্রতিকারের কোনো সুযোগ নাই। অনেক সময় স্বাধীন বাংলাদেশে তাদের এ অবস্থা থেকে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের স্বৈরশাসক, একনায়ক ও জমিদারতন্ত্রের বিভীষিকার দৃশ্যপট ভেসে ওঠে। যা কোনো অবস্থাতেই স্বাধীন দেশের জনগণের কাম্য নহে। এদেশের সবাই বাংলাদেশী। এদেশের কারও অস্থি, মজ্জা, আচার ও আচরণে আমলা ও আমলাতান্ত্রিকতা মানেই ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি শোষক ও আমলাদের ১৯৬ বছর ও ২৪ বছরের শোষণ ও বিভীষিকারই নামান্তর ও পুনরাবৃতি।
কিছুদিন আগে একজন বিশিষ্ট লেখক ও কলামিষ্ট প্রসঙ্গক্রমে একটি নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, স্বৈরতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, সেনাতন্ত্র ও রাজতন্ত্রের মতো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকারের আমলাতন্ত্র কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নহে। তেল এবং পানি যেমন মিশে না তেমনি গণতন্ত্রে আমলাতন্ত্রের অবস্থানও একই রকম। কিছুদিন আগে ভুক্তভোগী একজন অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষক চিটিপত্র কলামে লিখেছেন, কোনো এক কাজে সরকারি কর্মকর্তাকে তিনদিন অফিসে পাননি। চারদিন পর অফিসে পেয়ে বললেন, আপনাকে তিনদিন পর আজ অফিসে পেলাম। একথা শুনেই নাকি সেই কর্মকর্তা চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে ওঠলেন। তিনদিন কেন অফিসে পেলেন না, আপনার কাছে কী জবাব দিতে হবে? যান, আপনার কোন কথা আমি শুনব না। আপনার কাজও করব না। যেখানে বিচারপ্রার্থী হলে প্রতিকার পাবেন, সেখানে যান। আমার কাছে আসবেন না। এই হল স্বাধীন, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রজাতন্ত্রের সেবকদের জনসেবার নমুনা। এমন অসংখ্য উদাহরণের শেষ নেই। ক্ষমতার দাপটে সরকারী চেয়ারে বসে অনেকে যেমন সাধারণ মানুষকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে থাকে তেমনি দাপটের কথাও কম শুনা যায়নি। আমলাতন্ত্রের ব্রিটিশ ও পাকিস্তানি দজ্জালদের সৃষ্ট একটি বিষফোঁড়া ও অগণতান্ত্রিক অপসংস্কৃতি। যা সৈরাচার ও একনায়কদের রেখে যাওয়াও নির্বাসিত জমিদারতন্ত্রের ধারক বাহক হিসেবে সিক্ত।
মোবাইল কোর্ট বা ভ্রাম্যমান আদালত একটি আইনসিদ্ধ প্রথা। মাদক ও ভেজাল প্রতিরোধে মোবাইল কোর্টের অভিযানকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তারপরও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ব্যাপারেও কিছু আইনী নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, কুড়িগ্রামের আরডিসি (রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর) নাজিম উদ্দিন ১৩/৩/২০২০ ইং শুক্রবার মধ্যরাতে কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের বাসার তালা ভেঙ্গে ঘুম থেকে তুলে আনে। মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে ১ বছরের কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। বেদম প্রহার, বকাঝকা করে এবং কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।
অনেকে মনে করে আরডিসির একান্ত ক্ষমতার অপব্যবহারই নয়, তাতে জমিদারতন্ত্রের আমলের আমলাতান্ত্রিক বিভীষিকাও প্রতিফলিত হয়েছে। এ ঘটনা ফেসবুক, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মিডিয়া ও ১৬/৩/২০২০ ইং বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ১৬/০৩/২০২০ ইং দৈনিক রূপান্তর এর প্রথম পাতায় “কালেমা পড়ে ফেল, তোকে এনকাউন্টার দেওয়া হবে” মর্মে শিরোনামে একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে সাংবাদিক আরিফুল সেই মধ্যরাতের ভয়াবহ ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, রাত ১২টার পরপরই হঠাৎ করে ঘরের দরজা ভেঙ্গে তারা আমার ঘরে ঢুকে। ঢুকেই কুড়িগ্রামের আরডিসি নাজিম উদ্দিন আমাকে কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। আরডিসি আমাকে শুয়রের
বাচ্চা বলেও গালিগালাজ করে। তারপর টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়। এসময় আমি বারবার আরডিসিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম আমার দোষ কী ও আমার অপরাধ কী ? আমার কোনো অপরাধ থাকলে বলেন। তাদের কেহই আমার কোনো কথা, অনয়, বিনয় কর্ণপাত না করে আমাকে টেনে হিঁছড়ে নিয়ে যায়। আর সে সময় মোবাইল কোর্টের কর্ণধার আরডিসি নাজিম উদ্দিন বলতে থাকে খুব বড় সাংবাদিক হয়ে গেছিস, তোর সাংবাদিকতা আমি ছোটাব। ডিসির বিরুদ্ধে তুই লিখিস ইত্যাদি। তারপর মারতে মারতে আমাকে টেনে হিঁছড়ে গাড়ীতে তুলে চোখ, হাত বেঁধে ফেলা হয়। আমাকে বার বার ক্ষীপ্ত কন্ঠে বলে আজ তোর জীবন শেষ। তুই কালেমা পড়ে ফেল, তোকে এনকাউন্টারে দেয়া হবে। এ সময় আমি তার (আরডিসির) তর্জন, গর্জনে মৃত্যু ভয়ে ভীত হয়ে জীবন রক্ষার জন্য অনেক অনুনয় বিনয় করি এবং প্রাণভিক্ষা চাই।
আমি বলি, আমার বাবা নেই। আমার দুটি সন্তান আছে। আমাকে যেন না মেরে ফেলা হয়। আমাকে মেরে ফেললে বাচ্চা দুটি এতিম হয়ে যাবে। আরিফুল আরও বলে, আরডিসির নেতৃত্বে গাড়ীতে করে কোথায় আমাকে নিয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারি না। পরে চোখের বাঁধন হাত দিয়ে একটু হালকা করে বুঝতে পারি তারা আমাকে ধরলার পাড়ে সেতুতে নিয়ে গেছে। সেখানে নিয়ে গিয়ে আবার বলা হয় কালেমা পড়। তোর জীবন শেষ। একথা শুনার পর আমি আল্লাহকে ডাকা শুরু করি। এ সময় আরডিসি নাজিম উদ্দিন সঙ্গীয় আরেকজনকে বার বার বলতে ছিলেন, ডিসি স্যারকে ফোন দাও, মেসেজ দাও। কী করব সেটা বলতে বলো। এরপর সেখান থেকে তারা আবার আমাকে গাড়ীতে করে একটি ভবনে নিয়ে যায়। আমি চোখের বাঁধন একটি ঢিলা করে বুঝতে পারি এটা কুড়িগ্রামের ডিসির কার্যালয়।
সেখানে নেয়ার পর আবার আরডিসি নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি কক্ষে নিয়ে বিবস্ত্র করে এবং বেধড়ক মারপিট করা হয়। নাজিম উদ্দিন বলে, তোর ভিডিও করে রাখছি। এ সময়ও আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, চড়, থাপ্পড় ও লাথি মেরে থাকে। এক পর্যায়ে আরডিসি নাজিম উদ্দিন বলে তোর বাবার নাম কী। আমি বলি স্যার আমার বাবাতো মারা গেছে। তখনও নাজিম উদ্দিন আমাকে বিবস্ত্র অবস্থায় পেটাতে পেটাতে বলে, বল ডিসি আমার বাবা, ডিসি আমার বাবা।
এ ধরণের লোমহর্ষক ঘটনা যে আরও ঘটছে না তাও অবিশ্বাসের কিছু নেই। এ ধরণের নাজিম উদ্দিনরা প্রশাসনের ভাবমুর্তি কোথায় নিয়ে গেছে তা যথেষ্ট ভাবার বিষয়। শাসন, প্রশাসন, আইন ও বিচার কার্যে এখনও অনেক ভালো লোক আছে। অনেকেই ক্ষমতার অপব্যবহার ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ভোগে না। আরডিসি নাজিম উদ্দিন এক সময় কক্সবাজার প্রশাসনে চাকরি করেছেন। সেখানে কর্মকালিন সময়ে যে দূর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে তাও ২৫/৩/২০২০ ইং আদ্যোপান্তসহ দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত হয়েছে। নিবন্ধের সংক্ষিপ্ত কলেবরে আরডিসি নাজিম উদ্দিন সহ আরও অনেকেরই আমলনামার বিস্তারিত তুলে ধরতে না পারায় অন্য নিবন্ধে বিস্তারিত তুলে ধারার আশা রাখি। আরও তথ্য, সূত্র, দালিলিক প্রমাণ ও প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার আলোকে এ ধরণের ঘটনার দৃশ্যমান হলে অবাক ও বিস্মিত না হওয়ারই কথা। যা সময়ই এক সময় তা বলে দিবে।
স্বাধীন বাংলাদেশে আরডিসি নাজিম উদ্দিনের মতো ক্ষমতার দানবীয় অপরাধ ও আমলাতন্ত্রের বিভীষিকা কোনো মতেই এ দেশের জনগণ মেনে নিতে পারে না। যদি তাই হয় তবে প্রজাতন্ত্রের জনগণের দুঃখ, বেদনা ও অশ্রু ধারার শেষ না থাকারই কথা। যেভাবে দূর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, তেমনিভাবে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও বিভীষিকা নিরসনকল্পে প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারীরা যেমন সেবক (গভর্নমেন্ট অব দি পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ) তেমনি দেশের জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস ও প্রজাতন্ত্রের সেবা প্রত্যাশী। দেশ থেকে আমলাতন্ত্রের অবসান না হলে মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার স্বপ্ন ও জনগণের প্রত্যাশা অপূর্ণই থেকে যাবে।
পরিশেষে বলব, এদেশ থেকে ব্রিটিশ পাকিস্তান সাম্রাজ্যের অবসান ও জমিদারতন্ত্রের নির্বাসন হলেও তাদের রেখে যাওয়া আমলাতন্ত্র ও আমলাতান্ত্রিক বিভীষিকার আজও অবসান হয়নি। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র শুধু বাধাই নয়, গণতান্ত্রিক শাসন, প্রশাসন, আইন ও বিচার ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র সাংঘর্ষিক বলেও রাষ্ট্র বিজ্ঞানীরা মনে করে থাকে।
১৯৭৫ সালে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ভাষনে বঙ্গবন্ধু সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, এটা স্বাধীন দেশ। ব্রিটিশ ও পাকিস্তানের কলোনী নয়। জনগণের পরিশ্রমের পয়সায় মাইনে পান। ওদের অর্থেই আপনাদের সংসার চলে। ওদের সম্মান করে, ইজ্জত করে কথা বলুন। দেশের মালিক জনগণ। দেশের জনগণ কারও সেবাদাস নহে।
(এ.কে.এম শামছুল হক রেনু)
লেখক কলামিষ্ট