প্রতি বছর বাংলা নববর্ষ,মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে ক্ষুদ্র বাঁশ,বেত ও মৃৎ শিল্পের যে সঞ্চালন হয়,তা এখন স্থবির। কোভিড-১৯ এই শিল্পকে লাইফ সাপোর্টে নিয়ে যাচ্ছে। বাঁশ,বেত ও মৃৎ শিল্পের সাথে জড়িত পাবনার চাটমোহর উপজেলার ৫ শতাধিক পরিবার এখন কষ্টে আছেন। করোনাভাইরাসের কারণে এবার যেমন বাংলা নববর্ষ উদযাপন হয়নি,বসেনি বৈশাথী মেলা। হয়নি হিন্দুদের চড়ক উৎসব। ফলে এই শিল্পের উৎপাদিত পণ্যনামগ্রী বেচা-বিক্রিও বন্ধ। বাঁশ,বেত ও মাটির তৈরি তৈজষপত্র ও খেলনা তৈরিও বন্ধ। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন এই শিল্পের সাথে জড়িতরা। তারা এখন খাদ্য ও অর্থ সংকটে দিনাতিপাত করছেন। জীবন-জীবিকার তাগিদে পূর্ব পুরুষের পেশা অনেকেই ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। নিয়োজিত হচ্ছেন দিনমজুরীতে। কেউবা হোটেল রেস্তোরা,সেলুনে কাজ করছেন। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পের ভবিষ্যত এখন অনিশ্চয়তার মুখে।
উপজেলার অমৃতকুন্ডা গ্রামের বাঁশ ও বেত শিল্পের কারিগর ও পণ্যসামগ্রী বিক্রেতা নারায়ন চন্দ্র দাস,মায়া রানী দাস,হারান চন্দ্র দাসসহ অন্যরা জানালেন,চৈত্র ও বৈশাখ মাসে বাঙালীর নানা উৎসব চলে। এ সময় তাদের তৈরি বাঁশ ও বেতের তৈরি সাজি,কুলা,টুকরি,ঝুড়ি,ঢাকনা,ডালিসহ সৌখিন চেয়ার,টেবিল,হ্যাপ,ফুলদানী,কলমদানি,আয়নার ফ্রেমের ব্যাপক চাহিদা থাকে। প্রচুর পণ্য বেচাকেনা হয়। কিন্তু করোনার কারণে এবছর কোন মেলা বা উৎসব হয়নি। বাইরেও পণ্যসামগ্রী পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে তারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত।
ছোট শালিখা গ্রামের মৃৎ শিল্পী (কুমার) মনি পাল বললেন,এই পেশা ধরে রেখে আর জীবন চলছে না। মাটির তৈরি হাঁড়ি,পাতিল,ফুলদানী,খুটির চাহিদা নেই বললেই চলে। প্লাস্টিকের পণ্যসামগ্রী বাজার দখল করেছে। তারপর করোনার কারণে তারা বেকার হয়ে পড়েছেন। মাটিসহ উপকরণের দুষ্প্রাপ্্যতায় তারা হতাশায় পড়েছেন। আয় রোজগার বন্ধ। একই কথা বললেন উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের গৌরিপুর পালপাড়ার সুবোধ চন্দ্র পাল,কালিপদ পাল,লক্ষী রানী পালসহ অন্যরা।
চাটমোহর মহিলা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ শরীফ মাহমুদ সরকার বললেন,প্রণোদনা দিয়ে হলেও সরকারের গ্রামবাংলার ঐতিহ্যকে রক্ষা করা উচিত।
বিলচলন ইউনিয়ন উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.আলতাব হোসেন বললেন,করোনা পরিস্থিতিতে আমাদের এলাকার কুটির শিল্পের সাথে জড়িতরা এখন অসহায়। এটাকে রক্ষা করতে সরকারের উদ্যোগ নিতে হবে। দিতে হবে বিনাসুদে ঋণ। বিশেষ করে এনজিও’র ঋণের রাহুমুক্ত করা জরুরী।’
চাটমোহর উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ আঃ হামিদ মাস্টার বললেন,আমি এই পাল ও বেত শিল্পের সাথে জড়িত পরিবারগুলোকে করোনাকালীন সময়ে খদ্য ও অর্থ সহায়তা দিয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। আমার এ চেষ্টা অব্যাহত আছে। সরকারিভাবে তাদের জন্য স্থায়ী কিছু করা দরকার।