রণবাঘা বাজার। বগুড়ার নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে। বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের দুই পাশেই খোলা আকাশের নিচে ধানের বাজার। এই বাজার থেকে প্রতিবছরে সরকারের রাজস্ব আদায় হয় কোটি টাকার অধিক।
জানা গেছে, বৃটিশ আমলে জমিদাররা এই হাটটি চালু করলেও আজ পর্যন্ত এই হাটের অবকাঠমো উন্নয়নে নজর দেয়নি কেউ। নজর নেই স্থানীয় প্রশাসনেরও। যতটুকু সরকারি জায়গা আছে তার পুরোটাই অবৈধ দখলদারদের হাতে। ওই সব অবৈধ স্থাপনা সাতমাস আগে দুটি বুলডোজার দিয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছিল। ফের ওইসব জায়গা পুরোটাই দখল হয়েছে।
এতে এই বাজারের মূল ব্যবসায়ীরা সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় মহাসড়কের উপরেই ধান শ্রমিক ট্রাক লোড আন লোড করছে প্রতিদিন। এতে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে অনেকেই। এখানকার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ তুলেছেন, প্রতি বছর এই হাট থেকে কোটি টাকার অধিক রাজস্ব আদায় হলেও অবকাঠামো উন্নয়ন শূন্য।
রণবাঘা হাটে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের দুই ধারেই গড়ে উঠেছে ধানের আড়ত। রাস্তার উপরেই প্রতিদিনি হাজার হাজার টন ধান বস্তাজাত হচ্ছে। এসব ধান দেশের বিভিন্ন জয়গায় চলে যাচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে তাদের। বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের উপর দিয়ে প্রতিদিন শত শত বাস-ট্রাক যাতায়াত করে। হাটের মূল জায়গা দখলদারদের দখলে থাকায় নিরুপায় হয়ে ব্যবসায়ীরা রাস্তার দুই ধারকেই বেছে নিয়েছেন কারবার করার জন্য। তাছাড়া হাটের আয়তনও অনেক কম।
আগে শুধু শুক্রবারে এখানে হাট বসতো। ১৯৮৬ সালে স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে শুক্রবারের পাশাপাশি সোমবারেও হাটের আয়োজন করেন। আস্তে আস্তে বেশ সাড়া পড়ে। দিন দিন ব্যবসায়ীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এলাকায় বেকার যুবকরা বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ পায়। সময়ের ব্যবধানে রণবাঘা হাট এখন শুধু বগুড়া জেলা নয়, আশেপাশের জেলা থেকেও অনেক ব্যবসায়ী এখানে বেচাকেনা করার জন্য আসে।
ধানের পাশাপাশি জ্যৈষ্ঠ আষাঢ় এবং শ্রাবণ মাস জুড়ে এখানে পশুরহাট বসে। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় গরুরহাট হিসেবেও রণবাঘা বেশ পরিচিত। পরিচিত মাছেরহাট হিসেবেও। ব্যবাসয়িক ভাবে সফল এই হাটটির আয়তন মাত্র সাত বিঘা। সেই সাত বিঘাও অবৈধ দখলে চলে গেছে।
রণবাঘা হাট-বাজারের শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বেলাল হোসেন জানান, এখানে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি প্রতি হাটে নওগাঁ, দিনাজপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধার অনেক ব্যবসায়ী ধান কিনতে আসেন। উত্তরাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য হাটগুলোর অন্যতম একটি হাট হচ্ছে রণবাঘা। এখানে শুধু ধান ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ৩০০ ব্যক্তি। এই হাট থেকেই তাদের পরিবার চলে।
সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মখলেছার রহমান মিন্টু বলেন, এই হাট-বাজার থেকে কোটি টাকার অধিক রাজস্ব আদায় হলেও এখানে অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন কখনোই হয়নি। হাজারো সমস্যার মধ্য দিয়ে ব্যবসায়ী এবং ক্রেতা-বিক্রেতারা কেনাকাটা করে আসছে। এ ছাড়া নেই পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়।
জানতে চাইলে সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রভাষক আবদুল বারী বলেন, এবার রনবাঘা হাট-বাজার এক কোটি ৩৩ লাখ টাকা বার্ষিক ইজারা বন্দবস্ত দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে ২৫% হাট উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ পেয়ে থাকি। তারমধ্যে সাড়ে ৯% ভ্যাট রয়েছে। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে হাটের উন্নয়ন কাজ হয়ে থাকে। এ ছাড়া হাটের জায়গা উচ্ছেদের পর আবার দখল হয়েছে। উচ্ছেদের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. শারমিন আখতার বলেন, রনবাঘা হাটে ইতোমধ্যে মাছের আড়তে কয়েকটি টিন সেট করা হয়েছে। মাঠে মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। এ ছাড়া রনবাঘা হাটের উন্নয়ন কাজ অব্যাহত আছে। আগামী অর্থবছরে আরো হাটের উন্নয়নের পরিকল্পনা রয়েছে।