নওগাঁর পত্নীতলায় বাঁকরইল আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় ২২বিঘার একটি দিঘী লীজ দেওয়া নিয়ে লঙ্কাকান্ড ঘটেছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের দিঘী সদস্যদের বাহিরে লীজ না দেওয়ার বিধান থাকলেও আশ্রয়ণ প্রকল্প বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের যোগসাজেশে নীতি বর্হিভূতভাবে দিঘী লীজ দিয়ে প্রায় ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি ফাঁস হয়ে পড়লে আশ্রয়ণের ১শত১৮ জন সদস্য ভাগের টাকা না পাওয়ায় জলাশয়ে নামতে দিচ্ছেনা লীজ গ্রহীতাকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার দিবর ইউনিয়নের বাঁকরইল আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রায় ২২বিঘার একটি দিঘী রয়েছে। আশ্রয়ণের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ ১শত ২০টি ভূমিহীন পরিবারের বাস। সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী আশ্রয়ণ বাসিন্দাদের নিয়ে গঠিত সমবায় সমিতির মাধ্যমে জলাশয়ে মাছ চাষ ও লভ্যাংশ সমানভাবে সদস্যদের মাঝে বন্টন হওয়ার কথা। ২০১৫ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্প বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন বাঁকরইল গ্রামের মৃত কাফিজ উদ্দীনের ছেলে আমিন ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন একই গ্রামের আবদুল বারিকের ছেলে ওমর ফারুক। নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে আশ্রয়ণ প্রকল্প বহুমুখী সমবায় সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও আমিন ও ওমর ফারুক নির্বাচনের ধার ধারেন না। সভাপতি-সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অদ্যাবধি তাঁরা একই পদে বহাল রয়েছে। আশ্রয়ণের বসবাসকারী কয়েকজন বাসিন্দা অভিযোগে জানান, সভাপতি ওমর ফারুকের ৩বিঘা সম্পত্তি থাকলেও তিনি সম্পদ গোপন করে গুচ্ছগ্রামে ঘর নিয়েছেন এবং সেখানে রাজত্ব করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের জলাশয় লীজ দেওয়ার বিধান লংঘন করে সভাপতি আমিন, সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক, দিবর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হামিদ মাষ্টার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন অর-রশিদ ও আওয়ামী লীগ নেতা লিটন শেখ ২০১৯ সালে পাশ্ববর্তী খেলনা গ্রামের ইজাবুল নামে এক ব্যক্তির নিকট ৫ বছরের জন্য ২৪লাখ টাকায় দিঘীটি লীজ দেন। এ সময় আশ্রয়ণ প্রকল্প বহুমুখী সমবায় সমিতির কয়েকজন সদস্য দ্বিমত পোষণ করলে তাদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয় এবং তাদের আশ্রয়ণ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। সে সময় সদস্যদের চাপ ও দাবীর মুখে সভাপতি আমিন ও সাধারণ সম্পাদক প্রত্যেক সদস্যকে ১০হাজার করে টাকা প্রদান করেন। লীজ গ্রহীতা এরপর থেকেই পুকুরে মাছ চাষ করে আসছিলেন। সম্প্রীতি সদস্যরা জানতে পারে যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ২৪ লাখ টাকায় দিঘীটি লীজ দিলেও তাদের ১২ লাখ টাকার লভাংশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানার পর তাঁরা তাদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য দিঘীতে নামতে লীজ গ্রহীতা ইজাবুলকে বাধা প্রদান করে। আশ্রয়ণবাসীর দাবী হলো দিঘী লীজের আরো ১২ লাখ টাকা কোথায় গেল সেই হিসাবে তাদের দিতে হবে অথবা তাদের যে ১২ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে তা ফিলিয়ে নিয়ে দিঘী বা জলাশয় ছেড়ে দিতে হবে। বর্তমানে বাঁকরইল আশ্রয়ণে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে এবং উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে বাঁকরইল আশ্রয়ণ প্রকল্প বহুমুখী সমবায় সমিতির সদস্য কেষ্ট সরেন, রাবেয়া বেগম, গনেশ রায়, রতন, শফি, সালমা, ময়নাসহ আরো কয়েকজন জানান, লীজ গ্রহীতা আমাদের জলাশয়ের পানি ব্যবহার করতে দিতে চায় না, বকাবকি করে, জলাশয়ের পাড় সংস্কার না করায় আমাদের ঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে। জলাশয় ২৪ লাখ টাকায় লীজ দিলেও আমরা যারা সদস্য আছি তাঁরা ১০হাজার টাকা করে মোট ১২ লাখ টাকা পেয়েছি। অবশিষ্ট ১২ লাখ টাকা আশ্রয়ণ প্রকল্প বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমিন, সেক্রেটারি ওমর ফারুক, দিবর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হামিদ মাষ্টার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুন অর রশিদ ও ্স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা লিটন শেখ আত্মসাৎ করেছে। এ সবের প্রতিকার চেয়ে গত ২৭মে তাঁরা গুচ্ছগ্রামের ৮৪ জন বাসিন্দা পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট লিখিত আবেদন করেছেন বলেও জানান।
এ বিষয়ে লীজ গ্রহীতা ইজাবুলের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি আমিন,ওমর ফারুক, চেয়ারম্যান হামিদ মাষ্টার, লিটন শেখ ও হারুন অর রশিদের উপস্থিতিতে তাদের হাতে ২৪ লাখ টাকা বুঝিয়ে দিয়েছি। এই টাকা তাঁরা কি করেছে সে বিষয়ে আমার জানা নেই। জলাশয়ে মাছ ছাড়তে না পেরে আমি চরম সংকটে রয়েছি।
এ বিষয়ে বাঁকরইল আশ্রয়ণ প্রকল্প বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমিন ও সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক বলেন, আমরা নামমাত্র সভাপতি ও সম্পাদক। এ সকল বিষয়ে যা করার চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ, হারুন অর রশিদ ও লিটন শেখ করে থাকেন। সাধারণ সদস্যদের মতো আমরাও ১০হজার টাকা করে ভাগ পেয়েছি। দিবর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হামিদ মাষ্টার বলেন, যাদের জলাশয় তারাই লীজ দিয়েছে। এ বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। আমি টাকা পয়সার বিষয়েও কিছু জানি না। পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিটন সরকার বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ নেয়া হবে।