২০২০-২১ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট সম্পর্কে জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট-এর সভাপতি ডা. এম এ করিম ও সাধারণ সম্পাদক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম জাহাঙ্গীর হুসাইন এক যুক্ত বিবৃতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাজেটকে ‘গতানুগতিক’ আখ্যায়িত করে সাম্যজ্যবাদ ও তার দালালদের স্বার্থরক্ষাকারি জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী বাজেট প্রত্যাখান করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান। নেতৃবৃন্দ বলেন বৈশ্বিক মহামারী মোকাবেলায় স্বাস্থ্য, কৃষি, শিল্প ও শ্রমজীবী জনগণের জীবন ও জীবিকা রক্ষার প্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেটে কোন সুনির্দ্দিষ্টদিক নির্দেশনা নাই। করোনা মোকাবেলায় দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার শুধু করুন চিত্রই উন্মোচিত হয়নি সাথে সাথে সরকারের উন্নয়নের গালভরা বুলির ওপরও চপেটাঘাত করেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও ‘সবার জন্য চিকিৎসা’ নিশ্চিত করার দিকনির্দেশ করা হয়নি, মূলত ‘টাকা যার চিকিৎসা তার’ এই নীতিতেই স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ করা হয়। এ ছাড়া কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের জন্য ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়, যা মূলত ধনী কৃষক এবং বহুজাতিক কোম্পানি ও তার এদেশীয় এজেন্টদের লাভবান করবে। একই সাথে কৃষিতে সাম্যজ্যবাদের ভিত্তি সামান্তবাদি শোষণ তীব্র হয়ে কৃষক ও কৃষিব্যবস্থা বিপর্যয় হবে। জাতিসংঘের ‘টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য’ তথা ‘এসডিজি’কে সামনে রেখে দেশি-বিদেশি অবাধ বিনিয়োগের নামে প্রস্তাবিত বাজেট লগ্নিপুঁজি ও দালালপুঁজির স্বাথরক্ষা করায় শোষণ-লুন্ঠন আরো বেপরোয়া হবে। সমাজে ধনী-দরিদ্রদের বৈষম্য আরো দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। এমনকি সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাজেটে যেটুকু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তাও দলীয় নেতাকর্মীদের লুটপাট ও দূর্নীতির পর ভুক্তভোগীর কাছে গিয়ে পৌছোবে অতি সামান্যই। সকল সরকারের আমলে প্রনীত বাজেটই জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী হওয়ায় শিল্প, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মত গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো উপেক্ষিত হয়েছে। এসডিজিকে সামনে রেখে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনে শিক্ষাখাতের গুরুত্ব সামনে আসছে, যা মূলত লগ্নিপুঁজি ও দালালপুঁজির স্বার্থের সাথে সম্পর্কিত। জাতীয়স্বার্থে শিল্পের বিকাশে নয়াউপনিবেশিক আধাসামন্ততান্ত্রিক বাংলাদেশে কোন সরকারই ব্যবস্থা নেয়নি। ঋণের অর্থ আর ধার করা প্রযুক্তি দিয়ে আত্মনির্ভরশীল হওয়া যায় না। ফলে বিগত সময়ের মত এবারও শিল্প খাত থাকছে সাম্রজ্যবাদি নির্ভরশীল তাই বাজেটকে যে ভাবেই উপস্থাপন করা হোক না কেন এই বাজেট মূলতঃ সামজ্যবাদের বিভিন্ন সংস্থা তথা আইএমএফ, বিশ্বব্যাংকের নীতি-নির্দেশের আলোকে প্রনীত। এইজন্য প্রতিটি বাজেটই জাতীয় স্বার্থবিরোধী ও গণবিরোধী, গতানুগতিক ধারাবাহিকতারই প্রতিফলন। বাজেট যে সরকারের আমলেই পেশ হোক তাতে রাষ্ট্রের সুবিধাভোগী গোষ্ঠির স্বার্থে কোন ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় না। যে কারণে বাজেটের আকার বাড়লে লুটেরা গোষ্ঠির সম্পদের আকার বাড়ে আর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সহায়-সম্পদ কমে। প্র্রচলিত ব্যবস্থায় বাজেট নিয়ে শ্রমিক-কৃষক-জনগণের আশাবাদী হওয়ার কোন সুযোগ নেই। দেশের অর্থনীতি সচল রাখছে যে কৃষক, গার্মেন্টসের বিশেষত অধিকাংশ নারী শ্রমিক, প্রবাসীসহ অন্যান্য পেশার মানুষ তাদের জন্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি আর নানা নামে কর/ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধি যেন অমোঘ নিয়তি। ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা অর্থাৎ বাজেটের এক তৃতীয়াংশই আসবে ঋণ করে। আজ যে নবজাতক জন্মগস্খহণ করেছে তারও মাথা প্রতি ঋণের পরিমান ৭৯ হাজার টাকা ছাড়িয়েছে, যা আগামী অর্থবছরে আরও বাড়বে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশের শ্লোগান দিলেও বাজেটে মোবাইল ফোন কল, ইন্টারন্টে, অনলাইন শপিংয়ের খরচ বৃদ্ধি করেছে। আজ তাই জাতীয় ও জনস্বার্থমুখী বাজেটের পূর্ব শর্ত হচ্ছে জাতীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সরকার ও সমাজ। নেতৃবৃন্দ সেই লক্ষ্য প্রতিষ্ঠার সকল গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা গ্রহনের আহ্বান জানান। সেই সাথে সামাজ্যবাদ ও তার দালালদের স্বার্থরক্ষাকারি জাতীয় ও জনস্বার্থ বিরোধী গতানুগতিক প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থ বছরের বাজেট প্রত্যাখান করার জন্য দেশ প্রেমিক জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।