সরাইলের এক বর্ষীয়ান রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম আবদুল হালিম। তিনিই ছিলেন এক সময়ের রাজপথ কাঁপানো ছাত্র নেতা। দাবী আদায়ে সরকার বিরোধী আন্দোলনে রণাঙ্গণের লড়াকু সৈনিক। ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সফল সভাপতি। পথে প্রান্তরে, হাটে, ঘাটে ও মাঠে ছিল যার পদচারণা। সহজ-সরল এ মানুষটি ছিলেন সরাইলের অভিভাবক। বঙ্গবন্ধুর কাছে ছিলেন খুবই পরিচিত একজন রাজনীতিবিদ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে যিনি দুইবার নৌকা প্রতীকে সংসদ নির্বাচন করেছেন। সব মিলিয়ে আবদুল হালিম নিজেই একটি ইতিহাস। উন্নত চিকিৎসার অভাবে সেই ইতিহাস আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। বয়সের ভারে ন্যুজ্ব আবদুল হালিম বর্তমানে গুরূতর অসুস্থ্য। হারিয়ে ফেলেছেন শাররীক শক্তি। হারিয়ে যেতে বসেছে রাজনৈতিক মঞ্চের বজ্রধ্বনি। মিছিলের অগ্রভাগের সেই সিংহের মত গর্জন। তর্জনী উচিঁয়ে যৌক্তিক তর্ক বিলীন হতে চলেছে। তিনি মানুষজন চিনেন। মাঝে মধ্যে কথাও বলেন। কিন্তু অনেক সময় বাকরূদ্ধ হয়ে শুধু ফেলফেল করে তাকিয়ে থাকেন। অনেক্ষণ চেয়ে থেকে চোখের জল ছেড়ে দেন। দলীয় ও পারিবারিক সূত্র জানায়, আবদুল হালিমের জন্ম সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কাটানিশার গ্রামে। মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া হালিম ছাত্রজীবন থেকে ভাল বাসতেন বঙ্গবন্ধুকে। ভালবাসতেন তার রাজনৈতিক আদর্শকে। তাই ছাত্র জীবন থেকেই তিনি আওয়ামী রাজনীতি শুরূ করেন। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের (বর্তমান সরকারি কলেজ) ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি রাজপথে প্রতিবাদমুখর ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দূর্দিনের কান্ডারি ছিলেন আবদুল হালিম। স্বাধীনতা যুদ্ধে জীবন বাজি রেখে পিতা, মাতা, স্ত্রী, সন্তানের মায়া ত্যাগ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেছেন অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে। আগরতলা হাফানিয়া ক্যাম্পের চীফ ছিলেন আবদুল হালিম। সরাইল কলেজ প্রতিষ্ঠায় তার ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তিনি দীর্ঘ সময় সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব অত্যন্ত সফলতার সাথে পালন করেছেন। সাদাসিধে এ মানুষটির জীবন-যাপন ছিল খুবই সাদামাটা। শুধু আ.লীগ নয়, তিনি ছিলেন সকল দলের। সকল মানুষের উপকারে ছিলেন নিবেদিত। ১০-১২ দিন জেলা শহরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত ৫-৬ দিন ধরে তিনি শহরের মুনসেফপাড়া নিজ বাস ভবনে আছেন।