নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার বাজার গুলোতে বোরো ধানের দাম বেশি পাওয়ার কারণে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান দিচ্ছেন না লটারীতে নির্বাচিত কৃষকরা। ফলে সংগ্রহ অভিযান ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ঠরা। কর্মকর্তারা বলছেন,ইরি/বোরো ধান সংগ্রহের উদ্বোধনের পর থেকে গত এক মাসে (বৃহস্পতিবার পর্যন্ত) মাত্র ১১ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে।
জানা গেছে, রাণীনগর উপজেলায় ইরি/বোরো মৌসুমে ২৬ টাকা কেজি দরে কৃষকের নিকট থেকে ৩ হাজার ৩৪১ মেট্রিকটন বোরো ধান সংগ্রহের উদ্বোধন করা হয় গত ১৩ মে। স্বচ্ছতার ভিত্তিতে সরাসরি কৃষকদের নিকট থেকে ধান সংগ্রহের লক্ষে রাণীনগর উপজেলার আটটি ইউনিয়নের কৃষক নির্বাচনের জন্য উন্মুক্ত লটারী করা হয়। লটারীর মাধ্যমে মোট এক হাজার ৬৬৮ জন কৃষক নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিত প্রতিজন কৃষক দুই মেট্রিকটন করে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান দিবেন। কিন্তু সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে প্রায় প্রতিমন ধানে পঞ্চাশ থেকে একশ টাকা বেশি পাওয়ায় স্থানীয় বাজারে ধান বিক্রি করছেন কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, সরকার ২৬ টাকা কেজি দরে এক হাজার ৪০ টাকা প্রতি মন ধান ক্রয় করছেন। এরপর ধানের মান,আদ্রতা,ব্যাংক একাউন্টসহ নানা বিধ ঝামেলা রয়েছে। উপজেলার ধানের মোকাম খ্যাত আবাদপুকুর হাটে গত বৃহস্পতিবার চিকন জাতের প্রতিমন ধান এক হাজার ৫০টাকা থেকে প্রায় এক হাজার ১৫০ টাকায়এবং মোটা জাতের ধান সাড়ে আটশ থেকে নয়শ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন আবাদপুকুর ধান,চাল আড়তদার সমিতির সম্পাদক হেলাল উদ্দীন মন্ডল। ফলে সরকারী খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি না করে স্থানীয় বাজারেই ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন কৃষকরা। এতে করে সরকারীভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান ব্যহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তারা। গত ইরি/মোরো মৌসুমে উপজেলা জুরে প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়েছে। এতে প্রায় এক লক্ষ ২০ হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপাদন হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহিদুল ইসলাম।
লটারীতে নির্বাচিত যাত্রাপুর গ্রামের কৃষক আবদুর রশিদ,একডালা গ্রামের মোস্তাক হোসেন,স্থল গ্রামের নিতাই চন্দ্রসহ অনেক কৃষকরা জানান,এযাবৎকালে এমৌসুমেই ধানের দাম বেশি পাচ্ছি আমরা। সরকারী খাদ্যগুদামে প্রতিমন ধান ক্রয় করছেন একহাজার ৪০ টাকা। আবার অনেক ঝামেলাও আছে। তাছাড়া স্থানীয় বাজারে ধান বিক্রি করে সরকারী খাদ্যগুদামের চাইতে মনপ্রতি একশ’ থেকে ১৫০ টাকা বেশি পাচ্ছি। তাই বাজারেই ধান বিক্রি করছি।
রাণীনগর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম এবং উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম লিটন বলেন, বোরো ধান সংগ্রহের উদ্বোধনের পর থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাত্র ১১ মেট্রিকটন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। স্থানীয় বাজারে ধানের দাম বেশি পাওয়ায় সরকারি খাদ্য গুদামে ধান দিচ্ছেন না কৃষকরা।আমরা প্রতিটি এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে গুদামে ধান দিতে কৃষকদের অনুরোধ জানিয়েছি।
এ ব্যাপারে রাণীনগর উপজেলা সরকারি ধান-চাল ক্রয় কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আল মামুন বলেন,আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান সংগ্রহ অভিযান চলবে। খাদ্যগুদামে কৃষকদের ধান না দেয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। পরবর্তিতে তারা যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেই মোতাবেক ধান সংগ্রহ করা হবে।