কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা নিয়ে উপজেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশের বিরুদ্ধে সীল, স্বাক্ষর ও জাতীয় পরিচয় পত্র জাল করে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের অনেক মসজিদের সভাপতি, সেক্রেটারী ও ইমামদের স্বাক্ষর জালিয়াতী করে এ টাকা উত্তোলন করেছে বলে জানা যায়। এ ব্যাপারে উপজেলার পেরিয়া ইউনিয়নের কাজী জোড়পুকুরিয়া দক্ষিণ পাড়া, একই গ্রামের মধ্যম পাড়া, খোশারপাড় পশ্চিম পাড়া ও শ্রীফলিয়া দক্ষিণ পাড়া জামে মসজিদের সভাপতি ও সেক্রেটারীগণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইমাম-মুয়াজ্জিনদের প্রণোদনার টাকা জালিয়াতির বিষয়ে ইসলামীক ফাউন্ডেশনের পেরিয়া ইউনিয়ন কেয়ারটেকার সানা উল্লাহকে দায়ী করেন অভিযোগকারীরা। পেরিয়া ইউনিয়নের কাজী জোড়পুকুরিয়া গ্রামের ৫টি মসজিদের মধ্যে কাগজে-কলমে ৩টি মসজিদকে প্রণোদনা দেয়া হলেও মূলত একটি মসজিদ ৫ হাজার টাকা পেয়েছে। বাকী দু’ মসজিদের সভাপতিদের স্বাক্ষর, জাতীয় পরিচয়পত্র ও সীল জাল করে প্রণোদনার টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। প্রণোদনা আত্মসাৎ হওয়া দু’ মসজিদের মধ্যে কাজী জোড়পুকুরিয়া দক্ষিণ পাড়া মসজিদের সভাপতি ইমাম উদ্দিন বর্তমানে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন, তার জাতীয় পরিচয়পত্র, স্বাক্ষর ও সীল জাল করে কে বা কাহারা টাকা নিয়ে গেছে জানেননা ওই মসজিদ কমিটির সেক্রেটারী, ইমাম ও মুয়াজ্জিন। টাকা আত্মসাৎ হওয়া একই গ্রামের মধ্যমপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি সাবেক মেম্বার আবুল কাশেম গ্রামের বাড়ীতে থাকলেও তিনি অথবা তার সেক্রেটারী, ইমাম-মুয়াজ্জিন কেউই জানে না তাদের টাকা কারা নিয়ে গেছে।
একই ইউনিয়নের খোশারপাড়ায় গ্রামে মোট ৪টি মসজিদ। মসজিদ গুলোর ২টিতে টাকা দিয়েছে বলে ইসলামীক ফাউন্ডেশনের তালিকায় থাকলেও টাকা পেয়েছে ১টি মসজিদ। বাকী একটি মসজিদের সভাপতি ও ইমামের নাম এবং মোবাইল নাম্বার ঠিক রেখে গ্রামের নাম খোশারপাড় এর পরিবর্তে শিবপুর লিখে সভাপতির জাতীয় পরিচয়পত্র, স্বাক্ষর ও সীল জাল করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এসব জালিয়াতির সাথে ইসলামীক ফাউন্ডেশনের নাঙ্গলকোটের সুপারভাইজার ও পেরিয়া ইউনিয়ন কেয়ারটেকার জড়িত আছে বলে দাবী করেন অভিযোগকারীরা। এ ব্যাপারে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সেক্রেটারীরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন।
কাজী জোড়পুকুরিয়া মধ্যমপাড়া জামে মসজিদ সভাপতি সাবেক মেম্বার আবুল কাশেম, খোশারপাড় পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, কাজী জোড়পুকুরীয়া দক্ষিণ পাড়া জামে মসজিদ সেক্রেটারী রবিউল তালুকদার মিলন বলেন, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিনদের টাকা স্থানীয় ও ইসলামীক ফাউন্ডেশন অফিসের লোকজন মিলেই আত্মসাৎ করেছে। আমরা আমাদের মসজিদ গুলোর ইমাম-মুয়াজ্জিনদের টাকা ফেরৎ ও আত্মসাতকারীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করছি।
ইসলামীক ফাউন্ডেশন নাঙ্গলকোটের সুপারভাইজার জুলফিকার হাসান মুরাদ বলেন, প্রণোদনা প্রদানের উদ্বোধনের দিন আমি ছিলাম। এরপর থেকে সড়ক দুর্ঘটায় অসুস্থ হয়ে আমি বাড়ীতে চিকিৎসাধীন আছি। তাছাড়া আমি হার্টের রোগে ভূগছি। আমার অফিসে দায়িত্বে থাকা কেয়ারটেকার সিহাব উদ্দিন, পেরিয়া ইউনিয়ন কেয়ারটেকার সানাউল্লাহ ও উপজেলা নির্বাহীর সাথে কথা বলতে পারেন।
কেয়ারটেকার সিহাব উদ্দিন ও সানাউল্লাহ বলেন, সভাপতি ও ইমামদের জাতীয় পরিচয়পত্র আমরা গ্রহণ করিনি। পেরিয়া ইউনিয়নের কৈয়া গ্রামের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের শিক্ষক আবু জাফর কাগজপত্র যাচাই করে নিয়েছে। তবে আবু জাফরের সাথে কথা বললে তিনি বলেন যে মসজিদ গুলোর অভিযোগ উঠেছে সে গুলোর মধ্যে ৩ মসজিদের সভাপতি না আসায় ও খোশারপাড় মসজিদের নামে শিবপুর আসায় আমি বিষয়টি সানা উল্লার কাছে বলেছি। পরে মসজিদ গুলোর টাকা কে বা কারা নিয়েছে আমি জানি না।
মসজিদ সভাপতিদের জাতীয় পরিচয় পত্র জাল করার বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল হোসেন চৌধুরী বলেন, উপজেলা নির্বাহী’র পাঠানো কাজী জোড়পুকুরিয়া দক্ষিণ পাড়া জামে মসজিদের সভাপতি ইমামউদ্দিনের একটি জাতীয় পরিচয়পত্র আমার অফিসের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আজগর আলী অনলাইন এবং ভোটার তালিকায় যাচাই করেন। এ নাম্বারের পরিচয়পত্রটিতে থাকা তথ্যের কোন মিল পাওয়া যায়নি। বাকী দু’টি জাতীয় পরিচয়পত্র এখনো যাচাই করা হয়নি।
এ ব্যাপারে নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লামইয়া সাইফুল বলেন অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ গুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।