কুমিল্লায় হোমনায় কলেজ পড়-য়া বোনের সঙ্গে পঞ্চম শ্রেণি পড়-য়া যুবকের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলায় কসাই ভাই খুন করলো যুবককে। পরে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে মাটিচাপা দেওয়া হয়। উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামে ঘটে এই নৃশংস ঘটনা। খুন হওয়া যুবকের নাম ফয়সাল। নিখোঁজ ও অপহরণের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ফয়সালের বোন সালমা আক্তার। তদন্তের পর কসাই শামীমকে গ্রেফতার করে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘাতকের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ১২ দিন পর হোমনা উপজেলার সাফলেজি গ্রামের আমিরুল ইসলাম বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের নীচতলার মেঝে খুড়ে মাটিচাপা ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত ফয়সাল হোমনা উপজেলার দুলালপুর ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। বুধবার ময়না তদন্তের জন্য লাশ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হোমনার রাজনগর গ্রামের ফুল মিয়ার কলেজ পড়-য়া মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে পাশর্^বর্তী বাড়ির পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ফয়সালের (২২)। তাদের এ সম্পর্ক মেনে নিতে পারছিল না মেয়ের পরিবার। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে ক্ষোভে ফুঁসছিল মেয়ের ভাই। এদিকে গত গত ০৫ জুন রাত সাড়ে নয়টার দিকে ফয়সাল তার মামা নজরুল ইসলামের বাসার ছাদে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় হঠাৎ একটা ফোন এলে সে চলে যায়। এরপর থেকেই ফয়সাল নিখোঁজ হয়। বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুজি করেও তার সন্ধান মেলেনি। এ বিষয়ে গত ৭ জুন ফয়সালের বোন হোমনা থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। গত ০৯ জুন মেয়েটির মা রক্তমাখা পলিথিনের বস্তা খালের পানিতে পরিস্কারের খবর পেয়ে পুলিশের সন্দেহ হয়। পরে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তা জব্দ করে। ১৩ জুন অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা দায়ের করা হয়। কুমিল্লা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলামের নির্দেশে হোমনা থানার পাশাপাশি মামলাটি ছায়া তদন্তে নামে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানী ঢাকার চকবাজার এলাকা থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঘাতক শামীমকে গ্রেফতারের পরই বেরিয়ে আসে ফয়সাল হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঘাতকের দেওয়া তথ্যানুযায়ী মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে শাফলেজি আমিরুল ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদলালয়ের নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের নিচতলার মেঝে খুড়ে মাটিচাপা যুবকের অর্ধগলিত গলকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক শামীম জানায়, বোনের সঙ্গে প্রেমের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে ফয়সালকে হত্যা করেছে।
দুলালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জসীম উদ্দিন সওদাগর বলেন, ‘তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তিনি আরও বলেন, মেয়ের বাবা ফুল মিয়া পাশ্ববর্তী বাঞছারামপুর উপজেলার পাইকারচর গ্রাম থেকে এসে এখানে বসবাস করছে। সে হোমনা এবং বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় তিনটি হত্যা মামলার আসামী। তার শ্যালকও হত্যা মামলার আসামী। তারা পেশায় কসাই।
অভিযানে অংশ নেয়া জেলা ডিবি’র পরিদর্শক ইকতিয়ার উদ্দিন জানান, ‘পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশে মামলাটির তদারকির দায়িত্বভার পাওয়ার পর আমরা খোঁজ নিয়ে ওই যুবকের সাথে একই গ্রামের একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি জানতে পারি। ঘটনার পর থেকে আত্মগোপানে ছিল মেয়ের ভাই শামীম। বিষয়টি সন্দেহ হওয়ায় তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার চকবাজার এলাকা তাকে আটক করা হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হোমনা উপজেলার সাফলেজি গ্রামের আমিরুল ইসলাম বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের নীচতলা থেকে সন্ধ্যায় মাটিচাপা দেয়া অবস্থায় ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়।’
উদ্ধার অভিযান শেষে হোমনা-মেঘনা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. ফজলুল করিম বলেন, ‘পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিপিএম(বার), পিপিএম মহোদয়ের সরাসরি দিক নির্দেশনায় আমি, ডিবি কুমিল্লা, হোমনা থানা পুলিশ কাজ শুরু করি। প্রযুক্তির সহায়তায় মঙ্গলবার দুপুর একটায় মেয়েটার ভাই শামীমকে আটক করি। শামীম প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করে। তার দেয়া তথ্যমতে আমিরুল ইসলাম বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের নির্মিতব্য বিল্ডিংয়ের নিচতলা বালুর নিচ থেকে ভিকটিমের লাশ উদ্ধার করা হয়।’ তিনি আরও জানান, ‘গত ০৯ জুন মেয়েটির মা রক্তমাখা পলিথিনের বস্তা খালের পানিতে পরিস্কারের খবর পেয়ে আমরা তা জব্দ করি। এতে আমাদের সন্দেহ ঘনীভূত হয়। পরবর্তীতে তদন্তে বোঝা যাবে আর কারা কারা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত। আর কি উদ্দেশ্যে হত্যা করা হয়েছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি। তিনি আরও বলেন, গত ৫ জুন ফয়সালকে কৌশলে নির্মাণাধীন ওই ভবনে নিয়ে তাকে জবাই করে হত্যা করে। পরে মাটি চাপা দিয়ে সে আত্মগোপনে চলে যায়। ০৭ জুন হোমনা থানায় সাধারণ ডায়েরী করলে আমরা তদন্তে নামি।’
উদ্ধার অভিযানে হোমনা-মেঘনা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল করিম, জেলা ডিবি’র ওসি মো. আনওয়ারুল আজিম, হোমনা থানার ওসি আবুল কায়েস আকন্দ, ডিবি’র এসআই পরিমল চন্দ্রসহ পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।