মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “দুর্যোগের সময় মনুষ্যত্বের পরীক্ষা হয়”। তার এ চিরন্তন বানীকে বাস্তবে রূপ দিতে চলমান করোনা প্রার্দুভাবে নিজেদের জীবন ঝুঁকি জেনেও দিনরাত একাকার করে মূমুর্ষ রোগী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষকে সেবা দিতে পেরেই গর্বিত মনে করছেন বরিশালের কয়েকজন মহানুভব ব্যক্তি।
জনকণ্ঠর বিশেষ অনুসন্ধানে বরিশালে এমনই কয়েকজন মানবতার সারথীর সন্ধান মিলেছে। যারা নিরবে নিভৃতে নিজের এবং পরিবারের কথা না ভেবে, কোন লাভ ক্ষতির হিসেব না কষে, করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ থাকা রোগী থেকে শুরু করে অসহায় দুঃস্থ মানুষের সেবায় অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা কোন প্রকার বাহ্বা কুড়াতে নয়; শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রীর বানীকে বুকে ধারন করে মানবিক প্রশান্তিতে কাজ করে যাচ্ছেন।
তেমনি একজন যুবক স্পিটবোর্ডের চালক আসাদুল ইসলাম। দেশ যখন করোনা আতঙ্কে স্থবির। আক্রান্ত রোগীর পাশে থাকতে যখন অনীহা প্রকাশ করছে স্বজনরা। তখন করোনা আক্রান্ত কিংবা উপসর্গ থাকা রোগীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন জেলার একমাত্র দ্বিপ উপজেলা মেহেন্দিগঞ্জের চুনারচর এলাকার জাহাঙ্গীর আলম সিকদারের পুত্র আসাদুল ইসলাম আসাদ। নৈতিক মূল্যবোধের জায়গা থেকে এ উপজেলায় করোনা রোগী সনাক্ত হবার পর থেকে অদ্যবর্ধি তিনি নিরলসভাবে দিনরাত উপেক্ষা করে রোগী পরিবহন কাজে এগিয়ে এসেছে।
আসাদুল ইসলাম আসাদ মেহেন্দীগঞ্জের সরকারি পাতারহাট আর.সি কলেজে বিবিএ (অনার্স) প্রথমবর্ষের ছাত্র। স্পিটবোর্ড চালিয়ে তিনি নিজের পড়াশুনা ও সংসারের খরচ যোগাচ্ছেন। দারিদ্রের কাছে হার না মানা এই যুবকের পিতা পেশায় জেলে ছিলেন, বর্তমানে বার্ধক্যজনিত কারণে দীর্ঘদিন কাজ করতে পারছেন না।
মেহেন্দীগঞ্জবাসীর বরিশাল শহরে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে নৌ-পথ। ফলে প্রতিনিয়ত স্পিটবোটে পারাপার হচ্ছে ওই উপজেলাবাসী। এ কারণে শতাধিক স্পিটবোর্ড রয়েছে এই রুটে। সস্প্রতি মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় করোনা রোগী সনাক্ত হওয়ার পর থেকে নিজ নিজ সুরক্ষায় চলে যায় স্থানীয় স্পিটবোটের চালকরা। যার পরিপ্রেক্ষিতে করোনায় আক্রান্ত কিংবা উপসর্গসহ অন্যান্য রোগের উন্নত চিকিৎসা নিতে বরিশালে আসতে ওই উপজেলাবাসীকে চরম ভোগান্তিতে পরতে হয়। এ অবস্থা চলতে থাকায় কেউ যখন রোগী পরিবহনে রাজি হচ্ছিলো না, তখন নিজের কথা না ভেবে রোগীদের স্পিটবোটযোগে বরিশাল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন আসাদুল ইসলাম।
নিজের স্বাস্থ্য ঝুঁকি হচ্ছে জেনেও কেন সে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন সে বিষয়ে আসাদুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকাটি (মেহেন্দীগঞ্জ) বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল। বর্তমানে করোনা যেভাবে মানুষের জীবনের সাথে যুদ্ধ করছে, সেই যুদ্ধে আমরা যদি পিছিয়ে যাই তাহলে এই মহামারী আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। তাছাড়া মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুর্যোগের সময় মনুষ্যত্বের পরীক্ষা হয়। তার এ চিরন্তন বানীকে বাস্তবে রূপ দিতে যখন রোগীদের শারীরিক অবস্থা দেখি তখন নিজেকে সৃষ্টিকর্তার ওপর সোর্পদ করে প্রত্যেক রোগীর উন্নত চিকিৎসা সেবা পেতে আমি বরিশাল পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার কাজ করছি।
মানবতার ফেরিওয়ালা ॥ প্রধানমন্ত্রীর চিরন্তন বানীকে বুকে ধারণ করে মহামারি করোনা প্রতিরোধে জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ও করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের লাশ দাফন ও সৎকারে জীবনের ঝুঁকি জেনেও হাসি মুখে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন জেলার গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক ও মাহিলাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু।
মানবতার ফেরিওয়ালাখ্যাত প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মাহিলাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলু বলেন, পাশ্ববর্তী বাটাজোর ইউনিয়নের চন্দ্রহার গ্রামের অজিত কুমার বৈদ্য পুত্র গার্মেন্টস শ্রমিক নির্মল বৈদ্য (৪৮) সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে পরলোকগমন করেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি ছড়িয়ে পরলে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। ফলে তার লাশ সৎকারে পরিবারের সদস্যসহ ওই ইউনিয়নের কেউ এগিয়ে আসেননি। পরবর্তীতে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহানের মাধ্যমে তিনি জানতে পেরে মাহিলাড়া ইউনিয়ন করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের নিয়ে লাশ সৎকার করেন। একই ইউনিয়নের হরহর গ্রামে করোনার উপসর্গ নিয়ে অরুন দত্ত (৬০) নামের আরেক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। তাকেও তিনি তার সহযোগিদের নিয়ে সৎকার করেছেন। এ ছাড়া মাহিলাড়ার পূর্ব বেজহার গ্রামের বাসিন্দা মনিরুজ্জামান (৫০) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা গ্রীনলাইফ হাসপাতালে মৃত্যুবরন করেন। তার লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসার পর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
এছাড়াও ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুর নিজস্ব অর্থায়নে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের স্মরণে “কোভিড ট্রি” কর্মসূচীর মাধ্যমে পাঁচ দিনব্যাপী ইউনিয়নের পাঁচ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়কের দুইপাশের্^ তাল-খেজুরসহ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ চারা রোপণ করা হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারীদের আত্মার শান্তি কামনায় প্রতিজনের স্মরনে দুইটি করে ফলজ চারা রোপণ করা হয়েছে। গত ১০ জুন কর্মসূচীর সমাপনী দিন পর্যন্ত বাংলাদেশে মৃত্যুবরন করা এক হাজার বারো জনের স্মরণে দুই হাজার ২৪টি গাছের চারা রোপন করা হয়। গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান সৈকত গুহ পিকলুর উদারতা ও ব্যতিক্রমধর্মী সব মহতি উদ্যোগ সত্যি আমাকে মুগ্ধ করেছে।
অপরদিকে “দুর্যোগের সময় মনুষ্যত্বের পরীক্ষা হয়” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ চিরন্তন বানীকে বাস্তবে রূপ দিতে করোনায় সাধারণ মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য শুরু থেকে অদ্যবর্ধি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বরিশালের কাঠালিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ এমাদুল হক মনির, আওরাবুনিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামান লিটন নকীব, পাটিখালঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শিশির দাস। সরকারের নির্দেশে কর্মহীন পরিবারের দ্বারে দ্বারে কখনও নিজস্ব অর্থায়নে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম, আবার সরকারের ভিজিএফ, ভিজিডি ও প্রধানমন্ত্রীর উপহার সামগ্রীসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে পৌঁছে দিতে পেরেই তারা মহাখুশি। ইতোমধ্যে প্রকৃত অভাবী মানুষের কাছে সরকারীভাবে বরাদ্দকৃত এবং ব্যক্তিগত অর্থায়নের এসব খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়ে তারা এলাকায় মানবপ্রেমিক জনপ্রতিনিধির মর্যাদা পেয়েছেন।
মোঃ এমাদুল হক মনির বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগ ও তার প্রতিটি সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা করোনার শুরু থেকে অদ্যবর্ধি মাঠে রয়েছেন। কামরুজ্জামান লিটন নকীব বলেন, করোনার প্রার্দুভাব থেকে জনগনকে রক্ষা করতে নিজের জীবনের ঝুঁকি জেনেও দিনরাত একাকার করে রোগী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষের সেবা দিতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।