করোনা ভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্র মানুষকে ঈদের আনন্দ দেওয়ার জন্য সারা দেশে ৫০ লাখ দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারকে মোবাইলে ২হাজার ৫শত টাকা করে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলায় ৭ হাজার ৯শত ২০জন পরিবারকে এই সহায়তা প্রদান শুরু হয়েছে। যার মধ্যে নজিপুর পৌরসভায় রয়েছে ৬৬০জন। সরকার্ িবিধি অনুযায়ী ভাসমান মানুষ, বস্তিবাসী, প্রতিবন্ধী বয়স্ক ব্যক্তি, ভিক্ষুক, ভবঘুরে, বেকার শ্রমিক, গণপ্ররিবহন শ্রমিক, রেস্টুরেন্ট শ্রমিক, ফেরিওয়ালা, চা শ্রমিক, চা দোকানদার, দিনমজুর, রিকশা চালক/ভ্যান চালক, স্বামী পরিত্যাক্তা/বিধবা নারী, বেদে, হিজড়া সম্প্রদায়, পথ শিশু ও নিম্ন মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষরা মোবাইল ব্যাংকিংএর মাধ্যমে এই সুবিধা পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে ঘটেছে এর ব্যতিক্রম। তালিকা প্রণয়নকারীরা প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তালিকা প্রণয়নে স্বেচ্ছাচারিতার আশ্রয় নিয়েছে। প্রকৃত ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করে রাজনৈতিক বিবেচনা ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করায় তালিকায় স্থান পেয়েছে কোটিপতি, প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, রাজনৈতিক নেতা, সুদখোরের নাম। শুধু তাই নয় নজিপুর পৌরসভার একজন কাউন্সিলর নিজের স্ত্রীর নামে টাকা উত্তোলন করার মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন। এছাড়াও তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে এ্কই পরিবারের একাধিক সদস্যের নাম। এ নিয়ে এলাকায় চলছে জোর আলোচনা ও সমালোচনা। এদিকে তালিকায় নিজেদের নাম না থাকলেও কোটিপতির নাম থাকায় দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে নজিপুর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের তালিকায় নাম রয়েছে, ৩০ বিঘা জমির মালিক অতুল, তিনি একজন কোটিপতি ব্যক্তি। নাম রয়েছে ওষুধ ব্যবসায়ী সয়নের, যার রয়েছে ৯বিঘা জমি, রয়েছে তপন কুমার হালদারের নাম যার রয়েছে স্বর্ণের দোকান, মাছের আড়ত ও ৫বিঘা জমির, নাম রয়েছে ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সেবক কুমারের নাম, যার রয়েছে স্বর্ণের দোকান, ১৫ বিঘা জমি, বিল্ডিং বাড়িসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। রয়েছে গৌর চৌধুরীর নাম যার রয়েছে ১৪বিঘা জমি, বিল্ডিং বাড়ি,৪টি ট্রাক, ২টি ড্রেজার মেশিন। ৩নং ওয়ার্ডের তালিকায় রয়েছে বাণিজ্যিক মার্কেটের মালিক আবু তুহিন এর নাম যার রয়েছে ৫বিঘা জমি ও বিল্ডিং বাড়ি, এলাকায় তিনি কোটিপতি বলে পরিচিত। তালিকায় রয়েছে মোজাফ্ফর রহমানের নাম নজিপুর পৌর এলাকায় যার রয়েছে ৮ বিঘা জমি যার মূল্য কয়েক কোটি টাকা। রয়েছে বালু, পাথর ব্যবসায়ী ও বিল্ডিং বাড়ির মালিক উত্তম চন্দ্র ঘোষের নাম। তালিকায় রয়েছে হাটের ইজারাদার, বিল্ডিং বাড়ির মালিক হারুন রশিদের নাম পৌর এলাকায় যার রয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পদ। এদিকে ৬ নং ওয়ার্ডের তালিকায় রয়েছে- বিশিষ্ট মিষ্টি ব্যবসায়ী ও নজিপুর পৌর এলাকায় কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক অমল চন্দ্রের নাম, রয়েছে ৮বিঘা জমির মালিক সনজিত চন্দ্রের নাম, তালিকায় আরো রয়েছে পৌরসভার ইলেক্টিশিয়ান উৎপল চন্দ্রের স্ত্রীর নাম যার রয়েছে ১৫বিঘা জমি। অপরদিকে ৭নংওয়ার্ডে রয়েছে কাউন্সিলর ওবায়দুল ইসলাম নান্টুর স্ত্রী মৌসুমী আক্তারের নাম। নাম রয়েছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন ও তাঁর স্ত্রী মৗসুমী আক্তারের নাম, পৌর এলাকায় যার রয়েছে ৩ বিঘা জমি ও বিল্ডিং বাড়ি। অপরদিকে ৯নং ওয়ার্ডে তালিকায় রয়েছে নিত্য গোপাল দাসের পুত্র শুভ্র দাসের নাম যাদের রয়েছে স্বর্ণের দোকান, ৫ বিঘা জমি ও বিল্ডিং বাড়ি। রয়েছে ১০ বিঘা জমির মালিক হরিশ চন্দ্রের ছেলে মিথুন মন্ডলের নাম, তালিকায় রয়েছে নিত্যনন্দন দাসের নাম নজিপুর পৌর শহরের মধ্যে যার রয়েছে ৭বিঘা জমি ও দু’তলা বিল্ডিং বাড়ি। রয়েছে ১০ বিঘা জমি ও দু’তলা বিল্ডিং বাড়ির মালিক আবদুর রাজ্জাকের নাম। তালিকায় আরো রয়েছে নজিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নৈশ্য প্রহরী কিষান মহন্তের নাম। এছাড়াও একই পরিবারের একাধিক সদস্যকে প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে নানারকম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে অযোগ্যদের নাম তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করায় বাদ পড়েছে প্রকৃত দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ।
এ বিষয়ে ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অরুণ কুমার পাল এর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, গরীব লোকদের পাশাপাশি যারা দীর্ঘদিন ধরে দলের রাজনীতি করছেন কিন্তু কিছুই পায়নি। এমন নেতাকর্মীদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবদুল মজিদ জানান, শতকরা ৩৫ শতাংশ রাজনৈতিক ভাবে তালিকা প্রস্তুত হওয়ায় কিছু সম্পদশালী লোকজন স্থান পেয়েছে সত্য। তবে আমি যেসব নাম দিয়েছি তারা সবাই গরীব।
৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওবাইদুল ইসলাম নান্টু জানান, আমি যেসব নাম দিয়েছি সবাই গরীব লোকজন। অর্ধেক নাম দিয়েছেন রাজনৈতিক লোকজন। আমার স্ত্রীর নাম ভূল করে তালিকাভুক্ত হয়েছে। এটা বাদ যাবে।
এবিষয়ে নজিপুর পৌরসভার মেয়র মো. রেজাউল কবির চৌধুরী জানান, নীতিমালা অনুযায়ী তালিকায় অন্তভুক্তির জন্য লোক পাওয়া যায়নি। যারা গরীব সবাই কোনো না কোনো সহায়তা পেয়েছেন। এ কারণেই কিছু সম্পদশালী লোকজনকে তালিকাভুক্ত করতে বাধ্য হয়েছি। তবে এসব নাম বাদ যাবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিটন সরকার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখব।