বেলায়েত হোসেন। তার বাড়ি রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের সাহাবাজ গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের সাবেক স্বা¯’্য কর্মকর্তা মৃত রইছ উদ্দিন ও মরিয়ম বেগমের ছেলে। জন্ম থেকেই তিনি বাক, শ্রবণ ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। সার্বক্ষণিক চলেন হুইল চেয়ারে। ১৯৭৬ সালে জন্ম হলেও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে তিনি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্ড করেননি। সরকারি চাকরিজীবী বাবার পর সম্প্রতি তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। কিš‘ এনআইডি কার্ড ছাড়া পেনশনের টাকা তুলতে পারছেন না তিনি।
এ অবস্থায় গত বুধবার বেলায়েত হোসেনকে নিয়ে কাউনিয়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যান তার বড় ভাই প্রভাষক মো. হেলাল। উপজেলা নির্বাচন কার্যালয় দোতলায়। সেখানে তার ওঠার ব্যব¯’া নেই। এদিকে নির্বাচন কার্যালয়ের সার্ভারের তারও (কেবল) ছোট। নিচে বেলায়েতের ছবি তোলার জন্য ৪০ থেকে ৫০ ফুট তার ভাড়া করে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়। বেলায়েতকে শারীরিকভাবে কষ্ট দেয়া ছাড়াই ছবি তোলা, ফিঙ্গার প্রিন্টসহ আবেদনের যাবতীয় কাজ বুধবারই সম্পন্ন করেছে তারা। এদিকে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের এমন মানবিক আচরণে খুশি ও কৃতজ্ঞ বেলায়েতের পরিবার।
বেলায়েত হোসেনের বড় ভাই কাউনিয়া গাজীরহাট বিএম কলেজের প্রভাষক মো. হেলাল বলেন, ‘আমার বাবা সরকারি চাকরি করতেন। তিনি বেশ আগে মারা গেছেন। আমার মা-ও গত ডিসেম্বরে মারা গেছেন। পেনশনের টাকা পাওয়ার জন্য থানার হিসাবরক্ষণ অফিস কাগজপত্র চায়। তারা যেসব কাগজপত্র দিতে বলেছেন সেগুলো রেডি করি। ফাইনালি যেদিন অনলাইনে আবেদন জমা দেবে, সেদিন তারা বলল তার এনআইডি নাই কেন? আমি জানাই, প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তার এনআইডি করা হয়নি। তবে প্রতিবন্ধী এনআইডি আছে। তখন তারা বলল, এটা দিয়ে হবে না, এনআইডি কার্ড লাগবে। ঘটনাটা লকডাউনের আগে আগে। তখন কাউনিয়া নির্বাচন অফিসে গেলাম। তখন সার্ভার বন্ধ ছিল। তারপর লকডাউনের কারণে আর সম্ভব হয়নি। তারপর মঙ্গলবার আরও একবার ভাইকে নিয়ে গেছিলাম। বিদ্যুৎ ছিল না, বৃষ্টি হ”িছল। পরে চলে আসলাম। তখন তারা আমার শারীরিক প্রতিবন্ধী ভাইকে দেখে। তারপর গতকাল (বুধবার) তারা এনআইডি আবেদনের কাজটা খুবই আন্তরিকতার সাথে করে দিয়েছেন। ওকে তো উপরে তোলা সম্ভব হয়নি। কেবল ম্যানেজ করে অফিসের পাশে ছবি তুললেন। ফিঙ্গার প্রিন্ট নিলেন। সবকিছু ওখানে করলেন। খুব ভালো লাগছে তাদের ব্যবহার।’
এই এনআইডি আবেদনের যাবতীয় কাজে সহযোগিতা করেছেন কাউনিয়া উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মো. মোস্তফা কামাল ও শারমিন আরা। তারা চলমান করোনা সংকট চলাকালীন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নির্বাচন অফিসে আসা লোকজনকে নিরলসভাবে সেবা নিয়ে যা”েছন।
তাদের মধ্যে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বেলায়েত হোসেনের জন্ম ১৯৭৬ সালে। তিনি বাক, শ্রবণ ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। হুইলচেয়ারে করে চলাফেরা করেন তিনি। ভ্যানে করে তাকে আনা হয়েছে। এতদিনেও তিনি ভোটার হননি। তারা পেনশনের টাকা পা”েছন না। ভোটার হওয়ার জন্য আমাদের অফিসারের সাথে কথা বলেন। গতকালই আমরা আবেদন নিয়েছি। গতকালকে আবেদন সম্পন্ন হয়েছে। আজকে আমরা আপলোডের জন্য কাজ করছি। হয়তো আজকেই আপলোড হয়ে যাবে। আশা করছি, দুই-তিন দিনের মধ্যেই তার এনআইডি কার্ড হয়ে যাবে। তবে সেটা কমিশনের বিষয়।’
ডাটা এন্ট্রি অপারেটর মোস্তফা কামাল আরও বলেন, ‘আমাদের অফিস দোতলায়। দোতলায় তো তাকে তোলা যা”েছ না। অফিসের ল্যান্ড ক্যাবল ছোট। আমরা ৪০ থেকে ৫০ ফিট কেবল ভাড়া করে বাইরে থেকে নিয়ে আসছি। যাতে তাকে অফিসে তুলতে না হয়। অফিসের পাশে পুকুরপাড় আছে, সেখানেই আমরা ছবি তুলেছি বৃষ্টির মধ্যেই। আর আমাদের নতুন সার্ভার দিছে। নতুন সার্ভার থেকে ডাটা যখন মেইন সার্ভারে নেব, তখন হঠাৎ করে মিস হতে পারে। এই লোকটাকে আবার নিয়ে আসা, নিয়ে যাওয়া ঝামেলার হয়ে যাবে। এজন্য আমরা মেইন সার্ভারের সাথে কানেক্ট (যুক্ত) করেই ছবি তুলেছি। যাতে করে তাকে আর আসা-যাওয়া করতে না হয়।