২২জুন সোমবার কুড়িগ্রামের রাজারহাটে সাংবাদিক নাজমুল হোসেনসহ অপর দুই সহকর্মীর উপর নগ্ন হামলার ঘটনায় পুলিশ ২অভিযুক্তকে আটক করেছে। তবে ঘটনার মূল অভিযুক্ত ওসি খলিলুর রহমানকে পুলিশ আটক করতে পারেনি। ঘটনার ওই ওসি মূল অভিযুক্ত হয়েও তার কর্মস্থল বাজিতপুর থানায় যোগদান করে কর্মরত আছেন বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। কুড়িগ্রাম জেলার সকল সাংবাদিক অনতিবিলম্বে অভিযুক্ত ওসিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবী জানিয়েছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, যমুনা টিভি, জাগো নিউজ২৪ডটকম’র কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি ও ডেইলি তোলপাড় ডট কম এর জেলা সম্পাদক নাজমুল হোসেন, রেডিও চিলমারী’র জেলা প্রতিনিধি ভুবন কুমার শীল ও ক্যামেরা পার্সন কবির হোসেন শনিবার(২০জুন) সকালে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ও নাজিমখান ইউনিয়নে ভাঙন কবলিত তিস্তা নদীর তথ্য সংগ্রহ করতে যায়।
ওইদিন দুপুর ২টার দিকে ফেরার পথিমধ্যে নাজিমখান ইউনিয়নের নাজিমখান বাজারের পার্শ¦বর্তী মনারকুটি মৌজাস্থ একটি ‘ছ’-মিলের সামনে পাকা রাস্তায় একই এলাকার খলিলুর রহমান ও শামসুন্নাহার গং-এর মধ্যে জমি-জমার বিরোধ নিয়ে সালিশ বৈঠক চলছিল। সেখানে হট্টগোল দেখে ওই সাংবাদিকরা দাঁড়ালে বিরোধপূর্ণ পক্ষ খলিলুর রহমান লাভলু (৪৫) ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিক ও ক্যামেরা পার্সনের দিকে তেড়ে যায়। খলিলুর রহমান লাভলু কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপূর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জের দায়িত্বে রয়েছে। এ সময় তার হুকুমে উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের আবদুস সালাম পঞ্চায়েতের দুই পূত্র সোহেল (৩৫) ও কোয়েল (৩৮), আফতার আলীর পূত্র আক্কাছ আলী (৩৫), রাজারহাট মল্লিকবেগ এলাকার মাজহারুল ইসলামের পূত্র সেতু মিয়া (৩০), দলদলিয়া কাজী পাড়ার মৃতঃ মহুবর রহমানের পূত্র লুৎফর রহমান, রাজারহাট মনারকুটি এলাকার মৃতঃ জমসেদ আলীর পূত্র মাসুদ মিয়া (২৪), নাজিমখান তেলিপাড়ার করিম বকসের পূত্র রেজা (৩২)সহ অজ্ঞাতনামা আরো ১০/১২জন সংঘবদ্ধভাবে হাতে লাঠিসোটা, রড, ছোঁড়া নিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে সাংদিকদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়।
এসময় সোহেল দুই হাত দিয়ে ক্যামেরা পার্সন কবির হোসেনের গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করে। তাকে উদ্ধার করেতে এগিয়ে আসলে সাংবাদিক নাজমুল হোসেন ও ভুবন কুমার শীলের উপর অপর আসামি ও অজ্ঞাতরা লাঠিসোটা দিয়ে এলোপাথারী মারপিট করে আহত করে।
এসময় সন্ত্রাসীরা ক্যামেরা, মোবাইল কেঁড়ে নেয়। পরে সেগুলো উদ্ধার করা হলেও ক্যামেরার ২টি মেমোরী কার্ড নিয়ে নেয়। যেখানে গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও ফুটেজসহ বিভিন্ন প্যাকেজ সংরক্ষিত ছিল।
এবিষয়ে রোববার (২১জুন) রাতে ক্যামেরা পার্সন কবির হোসেন বাদি হয়ে রাজারহাট থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন। ওই রাতেই রাজারহাট থানার পুলিশ সোহেল(৩৫) ও আক্কাস আলী(৩৫)কে গ্রেফতার করে।২২জুন সকালে আটককৃতদের কুড়িগ্রাম জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। তবে ছিনতাই হওয়া ম্যামোরি কার্ড এখনো উদ্ধার হয়নি।
এদিকে ২২জুন সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় সাংবাদিকের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আহসান হাবীব নীলু ও সাধারণ সম্পাদক খ.ম আতাউর রহমান বিপ্লব জানান, ঘটনাটি অত্যন্ত দু:খজনক। সাংবাদিকদের উপর এ বর্বর হামলা মেনে নেয়া যায় না। হামলার শিকার সাংবাদিক ও ক্যামেরা পার্সনকে নিয়ে রোববার দুপুর ১২টায় কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে এক জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা অনতিবিলম্বে ওই ওসিকে আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবী জানান।
এব্যাপারে রাজারহাট থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ রাজু সরকার বলেন, অভিযোগের পর পর অভিযুক্ত ২জনকে আটক করা হয়েছে।