তারকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মিডিয়ায় পথচলা শুরু হয় অভিনয়শিল্পীদের। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়। নামযশ ছড়িয়ে পড়লেও অনেকে এই আলো ঝলমলে আঙিনা ছেড়ে চলে যান ভিন্ন পরিবেশে। তখন চিন্তা-চেতনায় আসে পরিবর্তন। বেছে নেন অন্য জীবন। মিডিয়ার কাজগুলোকে তখন ভ্রান্ত ও তুচ্ছ মনে হয়। মনোনিবেশ করেন ধর্মকর্মে। সম্প্রতি বাংলাদেশি শোবিজাঙ্গনে কয়েকজন অভিনেত্রী অভিনয় ছেড়ে ধর্মকর্মে ঝুঁকেছেন। অভিনয়ে আর না ফেরার কথাও জানিয়েছেন। প্রায় দুই যুগের ক্যারিয়ারের ইতি টানার ঘোষণা দিয়ে গত শুক্রবার বিকালে ফেসবুক লাইভে এসেছিলেন ছোটপর্দার আলোচিত অভিনেত্রী এ্যানি খান। এ্যানি খান ফেসবুক লাইভে এসে বলেন, 'গত বছর থেকেই মনে হচ্ছিল মিডিয়া থেকে দূরে সরে যাব। ২৬ জানুয়ারি থেকে নিজের মধ্যে সিদ্ধান্তটা বেশি করে নাড়া দিতে থাকে। মার্চের ১৯ তারিখ শেষবার শুটিং করেছি। তারপর তো করোনায় সবকিছু বন্ধ হলো। কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মিডিয়া ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেইনি। এ সিদ্ধান্ত আমার একান্তই ব্যক্তিগত। কারণ মৃত্যুর পর আমার হিসাব আমাকেই দিতে হবে। তাই আত্মোপলব্ধি থেকেই আমি মিডিয়ার কাজ থেকে সরে যাচ্ছি। অ্যানি বলেন, 'একেবারেই মিডিয়ার কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছি। সার্বক্ষণিক নামাজ ইবাদতে মগ্ন আছি। 'পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছি, নফল নামাজ পড়ছি, কোরআন-হাদিস পড়ছি। প্রতিনিয়ত অহরহ মৃত্যুর খবরগুলো যেভাবে শুনছি আগে সেভাবে শোনা যেত না, শুনলেও নাড়া দিত না। বাবাকে হারালাম, চোখের সামনে কাছের মানুষগুলো ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এগুলোর কারণে রিয়ালাইজেশনগুলো এসেছে। আমি একজন মুসলিম। মুসলিম হিসেবে ধর্মীয় বিষয়গুলো যতই জানার চেষ্টা করছি ততই ধর্মবিষয়ক জ্ঞান বাড়ছে। এতে করে অনেক কিছুতে বিধিনিষেধ চলে আসছে।' শোবিজে ১৬ বছর ধরে অসংখ্য বিজ্ঞাপন, মিউজিক ভিডিও, নাটকে সুনামের সঙ্গে কাজ করছেন সুজানা জাফর। ক্যারিয়ারের এ সময়ে এসে আলোচিত এ অভিনেত্রী মিডিয়াকে 'গুডবাই' জানালেন ধর্মের কারণেই। ২০১৮ সালে ওমরাহ হজ পালন করেন সুজানা। গত তিন মাস হোম কোয়ারেন্টিনে থেকে নিয়মিত কোরআন, হাদিস পড়ার কারণে ধীরে ধীরে নাকি বদলে গেছে তার মন। এমনটাই জানান তিনি। সুজানা বলেন, 'গত ৩ মাসে কোরআন, হাদিস থেকে যা শিখেছি সেখান থেকে আমি যে শান্তি পেয়েছি, তা আগে কখনই পাইনি। আমার মন থেকে মিডিয়ায় কাজের ইচ্ছে নষ্ট হয়ে গেছে। তাই আমি মিডিয়াতে আর কাজ করব না।' গত বছরের মাঝ সময়ে ওমরা হজ পালন করে এসে অভিনয় থেকে বিদায়ের কথা জানান নওশীন। যিনি একজন আরজে হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। পরবর্তীতে উপস্থাপনা, মডেলিং ও অভিনয়ে নিয়মিত হন নওশীন। ক্যারিয়ারজুড়েই নানা কারণে আলোচনায় ছিলেন তিনি। নওশীনের ভাষ্য, 'অভিনয় অঙ্গন থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্তটা আগে থেকেই ছিল। তবুও বিভিন্ন কারণে হয়ে উঠছিল না। এবার পরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন করেছি। এখন থেকে আমাকে আর অভিনয়ে দেখা যাবে না। আপাতত অভিনয়ের কোনো কাজ নেই আমার হাতে। আর ভবিষ্যতেও নতুন কোনো কাজে যুক্ত হব না।' ক্রিকেটার রুবেলের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে ২০১৪ সালে আলোচনায় এসেছিলেন মডেল-অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপি। এ ঘটনার পর নতুন করে আলোচনায় আসেন হ্যাপি। 'আমাতুলস্নাহ' নাম ধারণ করে নিজেকে বেছে নেন ইসলামি জীবন-যাপনে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে সরিয়ে নেন আগের সব ছবি। এই অভিনেত্রীর অসম্ভব পরিবর্তনের কারণে সেই সময়ে তাকে নিয়ে একটি বই প্রকাশ করা হয়। হ্যাপিকে নিয়ে প্রকাশিত বইয়ের লেখক আবদুলস্নাহ আল ফারুক বলেন, 'ওই রাতে তিনি (হ্যাপি) ফেসবুকে পোস্ট করা হাজার হাজার ছবি মুছে দেওয়া শুরু করেন। পরে চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন।' লেখকের স্ত্রী সাদেকা সুলতানা হ্যাপির সাক্ষাৎকার নেওয়ার অনুমতি পান। বইয়ে হ্যাপি বলেছেন, 'নতুন শিশুর মতো আমার জন্ম হয়েছে। এখন আমার আগের জীবনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।' হ্যাপি তাঁর সর্বশেষ চলচ্চিত্র 'রিয়েল ম্যান' মুক্তি বন্ধ করার জন্যও চেষ্টা করেন।